এমদাদুর রহমান চৌধুরী জিয়া, চার সন্তানের চোখের স্বপ্ন, স্কুলব্যাগ, বই- খাতা সবই আছে। ছিলোনা শুধু মুক্ত চলার পথ। স্কুল থেকে ফোন আসে কেন সন্তানরা ক্লাসে যাচ্ছে না। আমি কী বলব? দেয়াল টপকে যেতে পাচ্ছে ভয় আমার সন্তানরা এমনটাই কয়। এমন করুন এক ঘটনার বর্ণনা দিলেন সিলেটের জকিগঞ্জের প্রভাবশালীদের নির্মিত প্রতিবন্ধকতার পাখা দেয়ালে আটকে থাকা , অবরুদ্ধ থাকা,জিম্মি দশায় এক চার সন্তানের (জনক) পিতা।
ইয়াসমিন আহমদ লিটন গর্বের সাথে গতকাল মিডিয়ার কাছে বলেন , এখন তিনি মুক্ত। সিলেটের জেলা প্রশাসন এর কর্তা জেলা প্রশাসক সারওয়ার আলম এর নির্দেশে ২৪ সেপ্টেম্বর অমানবিক দেয়াল প্রভাবশালীদের পরোয়া না করে ভেঙ্গে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন এতে তার পরিবার মুক্তি পেয়েছে স্ত্রী সন্তানরা পেয়েছে স্বস্তি। আইনের প্রতিও বেড়েছে শ্রদ্ধা। সবচেয়ে বড় কথা ছয় মাস পর তার সন্তান তার শিক্ষার্থী যে স্কুল ব্যাগ রেখে দিয়েছিল সেটি বের করে রীতিমতো ধোয়া মোছা করে এখন প্রস্তুতি নিচ্ছে স্কুলে যেতে। ছয় মাস স্কুলে যেতে বাধা ছিল প্রভাবশালীদের করা উঁচু দেয়াল।
সিলেটের জকিগঞ্জ পৌর এলাকার বিলেরবন্দ গ্রামের অসহায় গৃহবধূ জেসমিন আক্তারের পরিবার অবশেষে দীর্ঘ ছয় মাসের অবরুদ্ধ জীবন থেকে পেয়েছে মুক্তি।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. সারওয়ার আলমের নির্দেশে উপজেলা প্রশাসন প্রভাবশালীদের নির্মিত অমানবিক দেয়াল ভেঙে জেসমিনের পরিবারকে মুক্ত করে দেয়। এখন থেকে আর এ পরিবারের রাস্তা ব্যবহারে কোন বাধা থাকলো না বলেও জানায় প্রশাসন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহবুবুর রহমান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রণয় বিশ্বাস এবং জকিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ জহিরুল ইসলাম মুন্নার উপস্থিতিতে দেয়াল ভাঙার কাজ সম্পন্ন করা হয়।
গত ছয় মাস ধরে স্কুলপড়ুয়া চার সন্তান, বৃদ্ধা শাশুড়ি ও মানসিক ভারসাম্যহীন স্বামীকে নিয়ে জেসমিন পাঁচফুট উঁচু দেয়ালের ভেতরে বন্দি জীবনে ছিলো।
স্থানীয় আজিজিয়া কমিউনিটি সেন্টারের মালিক প্রভাবশালী এমাদ উদ্দিন ও তার ভাই এনাম আহমদ শতবর্ষী চলাচলের পথ বন্ধ করে দেয়াল (পাকা) করে নির্মাণে পরিবারটিকে কার্যত বন্দি করে ফেলে। এতে করে তারা প্রভাবশালী মহলের কাছে অনেকটা জিম্মি হয়ে পড়ে।
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও জাতীয় পর্যায়ে আওয়াজ ওঠে পরিবারটিকে জিম্মিূশা থেকে মুক্তির জন্য।
সিলেটের নবাগত জেলা প্রশাসক ন্যায়সম্মত ইনসাফের ভিত্তিতে বিচার করেন এমনটা জেনে সরাসরি জেলা প্রশাসকের শরণাপন্ন হন ভুক্তভোগী জেসমিন আক্তার।
অসহায় পরিবারটির পরিস্থিতি অবগত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাৎক্ষণিকভাবে দেয়াল ভেঙে তাদের মুক্ত করতে নির্দেশ দেন সিলেটের জেলা প্রশাসক সারওয়ার আলম জকিগঞ্জের স্থানীয় প্রশাসনকে ।
তার নির্দেশনা পাওয়ার পর বুধবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে প্রশাসনের একটি দল সেখানে উপস্থিত হয়ে দেয়াল ভেঙ্গে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করেন অসহায় জেসমিনের পরিবারকে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঘটনা ধামাচাপা দিতে দিতে প্রভাবশালীরা পরিকল্পিতভাবে ৬ মাস ধরে বিভিন্ন কৌশলে সময়ক্ষেপণ করেছে।
জানতে চাইলে জকিগঞ্জ শহরের আজিজিয়া সেন্টারের মালিক এমাদ উদ্দিন বলেন, ‘আমার রাস্তার পাশে আমি দেয়াল দিয়ে নিরাপদ করেছি, অন্য কারো জায়গায় দেইনি। এতে জেসমিন আক্তারের পরিবার অবরুদ্ধ হলেও আমার করার কিছু নেই।
এক প্রতিক্রিয়ায় অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়ে আবেগাপ্লুত জেসমিন বলেন,
“আমারা ও আমার সন্তানরা অবশেষে মুক্ত হলাম আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে ও সিলেট জেলা প্রশাসকের সহযোগিতায়। দেয়াল ভেঙ্গে রাস্তা করে দেওয়ায় আবারো স্কুলে যাবে আমার সন্তানরা ।
সূত্র জানায়, প্রায় ৬ মাস আগে প্রভাবশালী এমাদ উদ্দিন ও এনাম আহমদ এই দেয়াল নির্মাণ করে দীর্ঘদিন ধরে পরিবারটির চলাচলের একমাত্র পথ বন্ধ করে দেয়। এ ঘটনা জুন মাসে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উত্থাপন করা হয়।
জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও কৃষকদলের জেলা আহবায়ক ইকবাল আহমদ তাপাদার জানান, ‘তিনি আপসে সমাধানের চেষ্ঠা করেছেন। এমাদ উদ্দিনরা শর্ত সাপেক্ষে স্ট্যাম্প করে এক বছরের জন্য জেসমিন বেগমের পরিবারকে সামান্য দেয়াল ভেঙ্গে রাস্তা দিতে চেয়েছিলো কিন্তু এক বছরের শর্তে স্ট্যাম্প করে জেসমিনের পরিবার রাস্তা নিতে রাজী হয়নি। তাই বিষয়টি সমাধান হয়নি
জেসমিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। তবে প্রশাসনিক কার্যক্রমের গতি আসতে সময় লাগলেও স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি নাড়া পড়ে। প্রশাসন ব্যবস্থা নেয় গুরুত্বের সাথে।
দেশজুড়ে আলোচিত সিলেটের নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক সারওয়ার আলম এর কাছে আসার পর তাৎক্ষণিক তার নির্দেশে প্রতিবন্ধকতার পাকা অমানবিক দেয়াল ভেঙ্গে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন জকিগঞ্জ, জকিগঞ্জ পৌর প্রশাসক৷ ও জকিগঞ্জ থানা পুলিশ।
এমন মানবিকতায় প্রশাসনের প্রশংসনীয় ভূমিকা এখন স্থানীয়দের মুখে মুখে সিলেটে জুড়ে।
উল্লেখ্য জায়গা গ্রাস করতে প্রভাবশালীরা এলাকার অনেক নিরীহ লোককে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে,রাস্তা বন্ধ করে, অথবা পঞ্চায়েতের প্রভাবশালী কোন ব্যক্তি বিশেষের ইশারা= ইঙ্গিতে পঞ্চায়েতের বাদ করে ( এক ঘরি করে) অথবা কোন হামলা বা মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করে। শুধুমাত্র সম্পত্তির লোভে। এমন সব ঘটনায় অনেকেই বাধ্য হয়ে পিতৃভূমি অথবা নিজের ক্রয়র্কিত সম্পত্তি ছেড়ে যেতে বা স্বল্প মূল্যে বিক্রি করে এলাকা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন।
এমন নজির রয়েছে একাধিক।