
দীর্ঘ যুদ্ধ ও ব্যাপক অভিবাসনের কারণে ইউক্রেন বর্তমানে ভয়াবহ জনসংখ্যা সংকটে পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, যদি এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকে, ২০৫১ সালে দেশটির জনসংখ্যা মাত্র আড়াই কোটিতে নেমে আসতে পারে।
রয়টার্সের বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, পশ্চিমাঞ্চলীয় হশচা শহরের মাতৃত্ব বিভাগ প্রায় থমকে গেছে। ২০১২ সালে বছরে ৪ শতাধিক শিশু জন্ম নিত, কিন্তু চলতি বছরে মাত্র ১৩৯টি জন্ম হয়েছে। শহরের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ইয়েভহেন হেকেল জানান, ‘অনেক তরুণ পুরুষ মারা গেছেন—যারা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অংশ হওয়ার কথা ছিল।’
২০২২ সালে রাশিয়ার আক্রমণের আগে ইউক্রেনের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৪ কোটি ২০ লাখ, বর্তমানে তা কমে ৩ কোটি ৬০ লাখের নিচে নেমে গেছে। সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুকের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে এখন একেকটি জন্মের বিপরীতে মৃত্যু হচ্ছে তিনটি—বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ অনুপাত। যুদ্ধের কারণে পুরুষদের গড় আয়ু মাত্র ৫৭.৩ বছর, নারীদের গড় আয়ু ৭০.৯ বছরে নেমে এসেছে।
হশচা অঞ্চলে ২০২২ সাল থেকে অন্তত ১৪১ জন যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে। স্কুলগুলো খালি হয়ে যাচ্ছে; সাদোভে গ্রামে শিক্ষার্থী সংখ্যা মাত্র ৯ জনে নেমে যাওয়ায় স্কুল বন্ধ করতে হয়েছে।
ইউক্রেন সরকার ২০৪০ সাল পর্যন্ত জনসংখ্যা পুনর্গঠন পরিকল্পনা করেছে। এতে অভিবাসন কমানো, বিদেশে থাকা নাগরিকদের ফিরিয়ে আনা এবং প্রয়োজনে বিদেশি শ্রমিক আকৃষ্ট করার কথা বলা হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন—যদি বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকে, তবে ২০৪০ সালেও জনসংখ্যা ২ কোটি ৯০ লাখের নিচে নেমে আসতে পারে।
হশচার ২১ বছর বয়সী আনাস্তাসিয়া বলেন, ‘এখন পরিবার শুরু করা মানে অস্থির ভবিষ্যৎ। ঘরবাড়ির খরচ বেড়েছে, পরিকল্পনা করা অসম্ভব হয়ে গেছে।’ যুদ্ধের ছায়া এখনও পরিবার গঠনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় কর্মকর্তা আনাস্তাসিয়া তাবেকোভা স্বামী যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা অবস্থায় সন্তান জন্ম দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যখন জানতে পারলাম, আমি গর্ভবতী, তার কয়েক দিন পরই আমার স্বামীকে ডাকা হয়েছিল।’ তিনি আরও জানান, অনেক নারী যাদের স্বামী লড়াই করছেন বা মারা গেছেন, তারা সন্তানের মধ্যে আশার প্রতীক খুঁজে পাচ্ছেন।
ইউক্রেনের এই জনসংখ্যা সংকট শুধু পরিসংখ্যান নয়—এটি যুদ্ধের দীর্ঘ ছায়া, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও প্রভাবিত করবে।