
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানানো রুশ সেনাদের নিজেদের কমান্ডাররা নির্যাতন ও হত্যা করছেন—এমন ভয়াবহ অভিযোগ উঠেছে স্বাধীন রুশ সংবাদমাধ্যম ভার্স্তকা-এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রুশ সেনাবাহিনীর ভেতরে এখন এমন এক সহিংস সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, যেখানে অবাধ্যতা মানে মৃত্যুদণ্ড বা আত্মঘাতী যুদ্ধে পাঠানো।
তদন্তে অন্তত ১০১ জন রুশ কমান্ডারের নাম উঠে এসেছে, যারা নিজেদের সেনাদের হত্যা, নির্যাতন বা মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত। ভার্স্তকা অন্তত ১৫০টি মৃত্যুর ঘটনা যাচাই করতে পেরেছে। তবে তাদের ধারণা, প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি।
প্রমাণ হিসেবে প্রতিবেদনে ব্যবহার করা হয়েছে ভিডিও ফুটেজ, সেনাদের পরিবার ও সহযোদ্ধাদের সাক্ষ্য এবং সরকারি অভিযোগের নথি।
ভার্স্তকার অনুসন্ধানে জানা যায়, যুদ্ধ থেকে ফিরতে চাওয়া বা আদেশ অমান্যকারী সেনাদের বিশেষভাবে নিয়োগ করা “এক্সিকিউশন শুটার” দিয়ে হত্যা করা হতো। নিহতদের দেহ নদীতে বা গর্তে ফেলে দেওয়া হতো, আর সরকারি রেকর্ডে দেখানো হতো—“যুদ্ধে নিহত।”
এছাড়া যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পিছু হটে আসা সেনাদের ওপর ড্রোন থেকে গ্রেনেড ফেলে হত্যা করা হয়েছে, যেন তা শত্রুপক্ষের হামলা মনে হয়।
নির্যাতনের আরও ভয়ংকর বর্ণনায় বলা হয়েছে—অনেক সৈন্যকে লোহার খাঁচায় ফেলে রাখা, পানি ঢেলে মারধর বা ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেটানোর পর হত্যা করা হতো। এমনকি কখনও কখনও সৈন্যদের বাধ্য করা হতো এক অপরের সঙ্গে প্রাণঘাতী লড়াইয়ে, অনেকটা “গ্ল্যাডিয়েটর” শৈলীতে।
গত মে মাসে ইউক্রেনীয় পর্যবেক্ষকেরা একটি ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে দেখা যায়—দুই অর্ধনগ্ন রুশ সৈন্য গর্তের মধ্যে একে অপরকে মারছে, আর পাশে এক কর্মকর্তা চিৎকার করছেন, “যে মেরে ফেলতে পারবে, সে মুক্তি পাবে।”
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, অনেক কমান্ডার আর্থিক চাঁদাবাজিতেও জড়িত। সেনাদের জানানো হতো, বিপজ্জনক বা আত্মঘাতী মিশনে না যেতে চাইলে ঘুষ দিতে হবে। যারা ঘুষ দিতে পারেনি, তাদেরই করুণ পরিণতি হয়েছে।
ভার্স্তকার তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত প্রায় ২৯ হাজার সেনা ও তাদের পরিবার অভিযোগ দায়ের করেছে, যার মধ্যে ১২ হাজার অভিযোগই নিজ কমান্ডারদের বিরুদ্ধে।
তবে রাশিয়ার সামরিক প্রসিকিউটর দপ্তরের একটি সূত্র জানায়, যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা কমান্ডারদের বিরুদ্ধে অঘোষিত তদন্ত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে, অভিযোগ যত গুরুতরই হোক, তারা দায়মুক্তিই পাচ্ছেন নিয়মিতভাবে।