সিলেট ১৩ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:০৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১১, ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান ইন্টেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) লিপ-বু তানের সঙ্গে চীনের ব্যাপক বিনিয়োগ ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা গেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, তান কমপক্ষে আটটি চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছেন, যেগুলো সরাসরি চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) সঙ্গে যুক্ত।
গত ১৮ মার্চ ইন্টেলের সিইও হিসেবে নিয়োগ পাওয়া তান দীর্ঘদিন ধরে চীনের প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করে আসছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের জন্য অত্যাধুনিক চিপ তৈরি করে—এমন একটি প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে থেকে তাঁর এসব বিনিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, চীনের সঙ্গে তাঁর এই সম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
রয়টার্সের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তান বর্তমানে ৪০টির বেশি চীনা কোম্পানি ও তাদের ফান্ড নিয়ন্ত্রণ করছেন। এ ছাড়া তিনি ৬০০টির বেশি প্রতিষ্ঠানে আংশিক মালিকানা রাখেন, যার অনেকগুলোর সঙ্গে চীনা সরকারি সংস্থাগুলোর যৌথ মালিকানা রয়েছে।
তানের এ ধরনের বিনিয়োগ ইন্টেলের পুনরুত্থানে জটিলতা তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন কিছু বিশ্লেষক। বিশ্বে কেবল তিনটি প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে উন্নত চিপ নির্মাণ করতে পারে—ইন্টেল, তাইওয়ানের টিএসএমসি ও দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং। এর মধ্যে কেবল ইন্টেলই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক।
বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান বাস্তিল ভেঞ্চারসের পার্টনার অ্যান্ড্রু কিং বলেন, চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় থাকা কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রধান হওয়ার জন্য তান উপযুক্ত নন; বিশেষ করে, এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যেটি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা ও প্রতিরক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত।
তবে কেউ কেউ মনে করেন, চীনের প্রযুক্তি খাতে তানের অভিজ্ঞতা ইন্টেলের পুনরুজ্জীবনে সহায়ক হতে পারে। বিশ্লেষক স্টেসি রাসগন বলেন, তিনি একজন কিংবদন্তি বিনিয়োগকারী এবং তাঁর অভিজ্ঞতা ইন্টেলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
চীনা দূতাবাস রয়টার্সের এই প্রতিবেদনের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেংইউ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার নামে চীনের সামরিক-বেসামরিক সমন্বয় নীতিকে বিকৃত করার চেষ্টাকে আমরা প্রত্যাখ্যান করি।’
তান ১৯৮৭ সালে সেমিকন্ডাক্টর খাতের বিশেষজ্ঞ ও প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগকারী ওয়ালডেন ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন। এ ছাড়া হংকংভিত্তিক সাকারিয়া লিমিটেড ও সেইন লিমিটেড নামের দুটি হোল্ডিং কোম্পানির মালিকানা রয়েছে তাঁর হাতে। তিনি ওয়ালডেন ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান পদেও রয়েছেন।
ইন্টেল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তান সম্ভাব্য স্বার্থ সংঘাতের বিষয়ে কোম্পানিকে জানিয়ে দিয়েছেন এবং মার্কিন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। তবে চীনে তাঁর বিনিয়োগের বিষয়ে ইন্টেল কোনো মন্তব্য করেনি।
ওয়ালডেনের পক্ষ থেকেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। রয়টার্সকে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, তান ইতিমধ্যে চীনা প্রতিষ্ঠানে তাঁর মালিকানা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তবে রয়টার্সের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, অনেক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি এখনো সক্রিয় রয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য চীনা কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা অবৈধ নয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের ‘চায়নিজ মিলিটারি-ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স কোম্পানিজ’ তালিকায় কোনো প্রতিষ্ঠান থাকলে সেই প্রতিষ্ঠানে মার্কিন নাগরিকদের বিনিয়োগ নিষিদ্ধ। রয়টার্স জানিয়েছে, তানের কোনো বিনিয়োগ সরাসরি ওই নিষিদ্ধ তালিকায় নেই।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী, চীনের সেনাসংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক চেইনে থাকতে পারে না। ইন্টেল বর্তমানে প্রতিরক্ষা দপ্তরের সঙ্গে ৩ বিলিয়ন ডলারের একটি চিপ নির্মাণ প্রকল্পে যুক্ত রয়েছে। তাই তানের চীনা সংযোগ নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
রয়টার্স জানিয়েছে, ২০১২ থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তান চীনের চিপ ও উন্নত প্রযুক্তি খাতে অন্তত ২০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছেন। এর মধ্যে পিএলএর বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ছাড়া চীনের সামরিক প্রযুক্তির অন্যতম বড় সরবরাহকারী চায়না ইলেকট্রনিকস করপোরেশনের সঙ্গে তানের ওয়ালডেনের যৌথ বিনিয়োগ রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২০ সালে এই প্রতিষ্ঠানকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন।
এ ছাড়া চীনের সবচেয়ে বড় চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এসএমআইসির অন্যতম বিনিয়োগকারী ছিলেন লিপ-বু তান। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র এই প্রতিষ্ঠানকে এখন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রেখেছে।
মাত্র এক মাস আগে ইন্টেলের নতুন সিইও হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন লিপ-বু তান। ইন্টেলের জন্য তাঁর নিয়োগ নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এলেও তাঁর চীনা বিনিয়োগ নিয়ে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য, প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা প্রতিযোগিতার এই সময়ে তানের নিয়োগ কতটা যুক্তিসংগত, তা নিয়েও বিতর্ক চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা: বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালিক,
উপদেষ্টা : খান সেলিম রহমান, জাতীয় দৈনিক মাতৃজগত পত্রিকা, ঢাকা ।
উপদেষ্টা : মোহাম্মদ হানিফ,
প্রকাশক : মোঃ ফয়ছল কাদির,
সম্পাদক : মাছুম কাদির,
সিলেট অফিস : রংমহল টাওয়ার(৪র্থ তলা) বন্দরবাজার সিলেট,৩১০০। মোবাইল নং-০১৭১৮৬২০২৯১,
ই-মেইল : Foysolkadir503@gmail.com,
Design and developed by DHAKA-HOST-BD