ঐতিহ্যবাহী পানাম নগর: প্রাচীন সোনারগাঁয়ের হারানো রূপকথা

প্রকাশিত: ১১:১৪ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৯, ২০২৫

ঐতিহ্যবাহী পানাম নগর: প্রাচীন সোনারগাঁয়ের হারানো রূপকথা

সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি | ৯ অক্টোবর ২০২৫

বাংলার প্রাচীন ইতিহাসের অন্যতম সমৃদ্ধ নগর ছিল সুবর্ণগ্রাম, বর্তমানে যা সোনারগাঁ নামে পরিচিত। একসময় বাংলার রাজধানী ছিল এই অঞ্চল। বড় নগর, খাস নগর ও পানাম নগর—এই তিন নগরের মধ্যে পানামই ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয়। ঐতিহাসিক তথ্যমতে, বাংলার বারোভুঁইয়াদের শাসক ঈসা খাঁ এখানেই রাজধানী স্থাপন করেছিলেন।

পূর্বে মেঘনা ও পশ্চিমে শীতলক্ষ্যা নদীর মাঝখানে অবস্থিত পানাম নগর ছিল এক সময়ের ব্যস্ত নদীবন্দর। তখন বিলেত থেকে আসত থানকাপড়, আর দেশ থেকে যেত মসলিন। ইংরেজরাও এখানে নীলের বাণিজ্যকেন্দ্র স্থাপন করেছিল। আজ সেই সমৃদ্ধ নগর শুধুই ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে দাঁড়িয়ে আছে।

সম্প্রতি ভ্রমণপ্রেমীরা ঘুরে দেখেছেন চার শতাধিক বছরের পুরোনো এই ঐতিহাসিক নগর। ঢাকার গুলিস্তান থেকে বাসে মোগরাপাড়া হয়ে অল্প সময়েই পৌঁছানো যায় পানাম সিটিতে। প্রবেশের মুখেই দর্শনার্থীদের স্বাগত জানায় সারি সারি পুরোনো দালান। কারও একতলা, কারও আবার দোতলা বা তিনতলা। বৃষ্টিস্নাত আবহে এসব স্থাপনা যেন অতীতের এক রূপকথার জগতে নিয়ে যায় দর্শনার্থীদের।

স্থাপত্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাড়িগুলোর নকশায় মোগল ও গ্রিক শৈলীর অনন্য মিশ্রণ রয়েছে। লোহার ব্র্যাকেট, জানালার গ্রিল, কাস্ট আয়রনের কাজ ও মোজাইকের মেঝে প্রতিটি ভবনের নান্দনিক সৌন্দর্য প্রকাশ করে। নগরের ভেতরে রয়েছে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, গোসলখানা, নাচঘর, চিত্রশালা, খাজাঞ্চিখানা ও পুরোনো জাদুঘরসহ নানান স্থাপনা।

নগরটির মধ্য দিয়ে চলে গেছে প্রায় ৬০০ মিটার দীর্ঘ একটি সরু রাস্তা, যার দুই পাশে দাঁড়িয়ে আছে ৫২টি প্রাচীন ভবন—উত্তর পাশে ৩১টি, দক্ষিণ পাশে ২১টি। ২০০৬ সালে ওয়ার্ল্ড মনুমেন্ট ফান্ড পানাম নগরকে বিশ্বের ধ্বংসপ্রাপ্ত ১০০টি ঐতিহাসিক স্থাপনার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।

পানাম নগরের পেছনে রয়েছে এক বিশাল খাল, নাম পঙ্খীরাজ, যা মেনিখালী নদী হয়ে মেঘনায় মিশেছে। একসময় সন্ধ্যা হলেই নগরের গেট বন্ধ হয়ে যেত। এখন এটি দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন বিকেল পর্যন্ত উন্মুক্ত।

প্রাচীন স্থাপত্যের অনুপম নিদর্শন এই পানাম নগর আজও মুগ্ধ করে হাজারো পর্যটককে। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—এত সমৃদ্ধ নগরের মানুষরা হঠাৎ কোথায় হারিয়ে গেলেন? উত্তর মেলেনি আজও, থেকে গেছে শুধু সময়ের কুহেলিকা আর ইতিহাসের দীর্ঘশ্বাস।

কীভাবে যাবেন:
ঢাকার গুলিস্তান থেকে দোয়েল, বোরাক বা স্বদেশ পরিবহনের যেকোনো বাসে সোনারগাঁ মোগরাপাড়া পর্যন্ত যাওয়া যায়। ভাড়া ২৫–৪৫ টাকা। মোগরাপাড়া থেকে রিকশায় ১৫–২০ টাকায় পৌঁছে যাবেন ঐতিহাসিক পানাম নগরে।

সর্বশেষ নিউজ