খুলনা নগরীর লবণচরায় দুই শিশু ও তাঁদের নানিকে হত্যা করার ঘটনায় থানা-পুলিশের পাশাপাশি সিআইডি, গোয়েন্দা পুলিশ, র্যাব ও পিবিআই ছায়া তদন্ত শুরু করেছে। সোমবার বিকেল পর্যন্ত নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মামলা হয়নি; তবে রাতে মামলা দায়েরের কথা রয়েছে।
জমি নিয়ে বিরোধই হত্যাকাণ্ডের কারণ হতে পারে
পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, জমি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ থেকেই হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়েছে। একটি মুরগির খামারের ইট দিয়ে থেঁতলে তিনজনকে হত্যা করা হয়। স্থানীয় সূত্র জানায়, এ হত্যাকাণ্ডে এলাকার একটি সন্ত্রাসীগোষ্ঠী সহযোগিতা করেছে।
রোববার রাতে লবণচরা দরবেশ মোল্লা গলির একটি বাড়ির মুরগির খামার থেকে মহিদুন্নেছা (৫৫), নাতি মুস্তাকিম (৮) ও নাতনি ফাতিহার (৬) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
ঘটনাস্থলে উত্তেজনা, প্রতিবেশীদের হতবাক
সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, সরু গলিতে ঘটনাস্থল ঘিরে মানুষের ভিড়। প্রতিবেশীরা জানান, রুবি আক্তার ও তাঁর স্বামী চাকরির কারণে সকালেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। দুই শিশু দুপুরে মাদ্রাসা থেকে বাড়ি ফেরে। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে রুবি আক্তার বারবার ডাকলেও ভেতর থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে পেছন দিয়ে বাড়িতে ঢুকে তিনজনের লাশ দেখতে পান।
প্রতিবেশীদের ধারণা, বাড়ির পেছনের রাস্তা দিয়ে ঢুকে হত্যাকারীরা প্রথমে নানিকে ইট দিয়ে হত্যা করে। পরে দুই শিশু ঘটনাটি দেখে ফেলায় তাঁদেরও হত্যা করা হয়।
বাড়ির নিরাপত্তা ভেঙে হত্যাকাণ্ড
স্থানীয়দের ভাষ্য—বাড়ির চারপাশে নিরাপত্তা থাকলেও খুনিরা লোহার গেটের ওপর চটের বস্তা বিছিয়ে দেয়াল টপকে ভেতরে ঢোকে। বাড়ির বৈদ্যুতিক সংযোগ কেটে অন্ধকার সৃষ্টি করা হয়, যাতে সিসি ক্যামেরা থাকলেও কার্যকর না হয়।
নিহত শিশুদের চাচা সাব্বির বলেন, রূপসার পালেরহাট এলাকায় পারিবারিক জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। সেই বিরোধের জেরেই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হতে পারে বলে তাঁদের সন্দেহ।
পুলিশের তদন্ত ও অগ্রগতি
লবণচরা থানার ওসি হাওলাদার সানওয়ার হুসাইন মাসুম জানান—
-
আলামত হিসেবে একটি ইট উদ্ধার করা হয়েছে
-
তিনজনের মাথা ইট দিয়ে থেঁতলে হত্যা করা হয়েছে
-
লাশ দাফনের পর মামলা দায়ের করবেন পরিবার
-
তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে, তবে এখনই প্রকাশ করা যাচ্ছে না
কেএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) রোকুনুজ্জামান বলেন, বাচ্চা দুটিকে অত্যন্ত নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাঁদের মুখের ভেতর থেকেও গজ উদ্ধার করা হয়েছে। একাধিক সংস্থা তদন্তে কাজ করছে এবং তিনি আশা করছেন রাতের মধ্যেই অগ্রগতি পাওয়া যাবে।
একই দিনে আরেক হত্যাকাণ্ড
সেই একই দিন সন্ধ্যায় সোনাডাঙ্গা করিমনগর এলাকায় স্ত্রীর সামনে সালাউদ্দিন মৃধা (৩৫) নামের এক যুবককে গুলি ও গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায়ও এখনো মামলা হয়নি এবং কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
সোনাডাঙ্গা থানার ওসি জানান—নিহত সালাউদ্দিন দীর্ঘদিন মাদক মামলায় জেলে ছিলেন এবং ১০ দিন আগে জামিনে বের হন। এর পর তিনি দিনমজুর হিসেবে কাজ শুরু করেন।