
গাজা সিটির প্রবেশপথ হিসেবে পরিচিত শেখ রাদওয়ান ও তেল আল-হাওয়া এলাকায় ইসরায়েলি ট্যাংক মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। একই সঙ্গে পুরো গাজা উপত্যকায় ইন্টারনেট ও মোবাইল সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ধারণা করা হচ্ছে, ইসরায়েলের স্থল অভিযান আরও তীব্র আকার নিচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রয়টার্সের খবরে জানানো হয়, ইসরায়েলি বাহিনী ইতিমধ্যে গাজার পূর্ব উপকণ্ঠ নিয়ন্ত্রণ করছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে শেখ রাদওয়ান ও তেল আল-হাওয়া এলাকায় প্রচণ্ড বোমাবর্ষণের পর সেখান থেকে শহরের কেন্দ্র ও পশ্চিমাঞ্চলের দিকে অগ্রসর হতে পারে সেনারা। ওইসব এলাকায় লাখো মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৭৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই গাজা সিটির বাসিন্দা। অন্যদিকে ফিলিস্তিনি টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি জানায়, ইসরায়েলি হামলায় তাদের প্রধান নেটওয়ার্ক রুট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সব সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে এ বিষয়ে ইসরায়েলি বাহিনী কোনো মন্তব্য করেনি।
নিজেদের সর্বশেষ বিবৃতিতে ইসরায়েলি সেনারা জানিয়েছে, তারা গাজা সিটিতে অভিযান সম্প্রসারণ করছে। লক্ষ্য ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো ধ্বংস’ ও ‘সন্ত্রাসীদের নির্মূল’। একই সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস ও রাফাহতেও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জাতিসংঘসহ মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গাজার মানবিক অঞ্চলের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। আশ্রয়, খাদ্য ও ওষুধের সংকট তীব্র। গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহার ও অপুষ্টিতে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে একজন শিশু। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এভাবে অন্তত ৪৩৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
গাজার গণমাধ্যম দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শুধু ১১ আগস্ট থেকে গতকাল পর্যন্ত ইসরায়েলি অভিযানে ৩ হাজার ৫৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৫৬ শতাংশ গাজা সিটি ও উত্তরাঞ্চলে এবং ৪৪ শতাংশ মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে।
বাসিন্দাদের ভাষ্যমতে, শেখ রাদওয়ানে ট্যাংক ঢোকার পর চারটি চালকবিহীন বিস্ফোরকবাহী গাড়ি বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে, যাতে বহু বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে। একই ধরনের বিস্ফোরণ ঘটেছে তেল আল-হাওয়ায়ও।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, চলমান দুই বছরের ইসরায়েল–হামাস যুদ্ধের কারণে ফিলিস্তিনিদের মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৬৫ হাজার ছাড়িয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত ও ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল। সেই ঘটনার পর শুরু হওয়া যুদ্ধ এখনও অব্যাহত এবং প্রতিদিনই তা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।