
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে চিকিৎসকদের গঠিত মেডিকেল বোর্ড। গুলিবিদ্ধ হয়ে তাঁর মস্তিষ্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ফুসফুসেও গুরুতর আঘাত রয়েছে।
এভারকেয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্তমানে হাদিকে কোনো অস্ত্রোপচার না করে কনজারভেটিভ ম্যানেজমেন্টে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তাঁর চিকিৎসার জন্য ১৪ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডের নেতৃত্ব দিচ্ছেন হাসপাতালটির আইসিইউ ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মো. জাফর ইকবাল।
এভারকেয়ার হাসপাতালের পরিচালক (মেডিকেল সার্ভিসেস) ডা. আরিফ মাহমুদ আজ শনিবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, “হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। আমরা মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে সর্বোচ্চ চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি। এই মুহূর্তে মিডিয়া ব্রিফের চেয়ে রোগীর চিকিৎসাই আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার। তার পরিবারকে নিয়মিতভাবে বর্তমান অবস্থা জানানো হচ্ছে।”
মেডিকেল বোর্ডের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হাদির মস্তিষ্কে ‘ম্যাসিভ ব্রেন ইনজুরি’ হয়েছে। তাকে ব্রেন প্রোটেকশন প্রটোকল অনুসরণ করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলে পুনরায় ব্রেনের সিটি স্ক্যান করা হবে। ফুসফুসে আঘাতের কারণে চেস্ট ড্রেইন টিউব বসানো হয়েছে এবং ভেন্টিলেটর সাপোর্ট অব্যাহত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ফুসফুসে সংক্রমণ ও এআরডিএস প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, হাদির কিডনির কার্যক্ষমতা বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে। পূর্বে দেখা দেওয়া রক্ত জমাট বাঁধার জটিলতা (ডিআইসি) অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে, তবে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। প্রয়োজন অনুযায়ী রক্ত ও রক্তজাত উপাদান সঞ্চালন অব্যাহত থাকবে।
মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছে, ব্রেন স্টেমে আঘাতের কারণে রোগীর রক্তচাপ ও হৃৎস্পন্দনে অস্বাভাবিক ওঠানামা দেখা যাচ্ছে। পরিস্থিতি যেকোনো সময় পরিবর্তিত হতে পারে। হৃৎস্পন্দন বিপজ্জনকভাবে কমে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে অস্থায়ী পেসমেকার বসানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক দল।
এদিকে শুক্রবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ) অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান জানান, বুলেটটি বাম কানের ওপর দিয়ে ঢুকে ডান পাশ দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে হাদির ব্রেন স্টেম ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানে অত্যন্ত গুরুতর অবস্থা হিসেবে বিবেচিত। আগামী ৭২ ঘণ্টা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
মেডিকেল বোর্ড হাসপাতালের ভেতরে ভিড় না করা, বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার না করা এবং রোগীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও মর্যাদা রক্ষায় সবাইকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হন শরিফ ওসমান হাদি। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সন্ধ্যায় উন্নত চিকিৎসার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।