১৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৪ঠা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৮শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

চোরাকারবারী বুখাইরের ইশারায় কোটিপতি এস আই শফিকুল

admin
প্রকাশিত ১১ নভেম্বর, সোমবার, ২০২৪ ০১:৫৮:২৮
চোরাকারবারী বুখাইরের ইশারায় কোটিপতি এস আই শফিকুল

Manual8 Ad Code

চোরাকারবারী বুখাইরের ইশারায় কোটিপতি এস আই শফিকুল

 

সিলেটের শীর্ষ চোরাকারবারী বুখাইরের ইশারায় বর্তমানে কোটিপতি ওসমানীনগর থানার সাব-ইন্সপেক্টর (এস আই) শফিকুল ইসলাম।
সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার গহরপুর (বরকতপুর) গ্রামের বাসিন্দা বর্তমানে নগরীর শাহজালাল উপশহরের মৌলানা আব্দুল বাছিতের ছেলে বুখাইর আহমদ। খুব অল্প বয়সেই বুখাইর সিলেটের র্শীষ চোরাকারবারীদের তালিকায় আত্মপ্রকাশ করেন। খুব ঠান্ডা মেজাজের কূটবুদ্ধি সম্পন্ন বুখাইর আহমদ মাত্র ৩৫ বছর বয়সেই হয়ে গেছেন কয়েক কোটি টাকার মালিক। গড়ে তুলেছেন তার শক্তিশালী চোরাকারবারীর সিন্ডিকেট। গত ৬/৭ বছরে স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় প্রশাসনের নাকের ডগায় চালিয়ে গেছেন তার চোরাচালান সাম্রাজ্য। একাধিকবার র‌্যাব ও পুলিশের কাছে বন্দি হলেও খুব অল্প সময়ে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে পুনরায় নিজের সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রনে নিয়েছেন বুখাইর। বিগত ৫ই আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যূন্থানে স্বৈারাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলেও বুখাইরের সাম্রাজ্য ঠিকই চলছে। শুধু ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে নিয়ন্ত্রন করছেন চোরাচালান বাণিজ্য। চিনি থেকে শুরু করে ভারতীয় অবৈধ মোবাইলসহ সবকিছ্রুই চোরাচালানের সাথে সম্পৃক্ত বুখাইর।

Manual8 Ad Code

বর্তমানে চোরাচালান সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রন করতে বেছে নেন কতিপয় কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তাকে। তার মধ্যে একজন হচ্ছেন সিলেট ওসমানীনগর থানার সাব-ইন্সপেক্টর (এস আই) শফিকুল ইসলাম। এস আই শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। গত ৩রা নভেম্বর দুপুর আনুমানিক ২টা ৩০ মিনিটের সময় সিলেট ওসমানীনগর থানাধীন তাজপুর কদমতলাস্থ ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক থেকে ভারত থেকে অবৈধভাবে আনা ২৮০ বস্তা চিনিসহ একটি ট্রাক যার রেজি নং- ঢাকা মেট্রো-ট- ১৮-৮৫০৫, গাড়িটি আটক করেন ওসমানীনগর থানার এস আই শফিকুল ইসলামসহ তার সঙ্গীয় ফোর্সগণ। এস আই শফিকুল বাদি হয়ে ৪জনকে এজহারভুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- (৩) ৪/১১/২৪, ধারা ২৫ই (১) (ন)২৫উ ঃযব ংঢ়বপরধষ ঢ়ড়বিৎং অপঃ ১৯৭৪. এই মামলাটি এজহারভুক্ত করার আগ পর্যন্ত এস আই শফিকুল মোট ৬ জন লোককে আটক করেন। যার মধ্যে একজন প্রাইভেট কারচালক এবং ঐ কারের একজন যাত্রী। শফিকুল যে প্রাইভেট কারটি আটক করেন তার নং ঢাকা মেট্রো ১৪-২০৮। সাদা রংয়ের এই প্রাইভেট কারচালকের অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, এস আই শফিকুল চালক এবং যাত্রীকে দীর্ঘ ৮ ঘন্টা থানা হাজতে আটকে রেখে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন জব্দ করে তদন্ত সাপেক্ষে ভারতীয় চিনি চোরাচালানে তাদের কোন সম্পৃক্ততা না পেয়ে রাত আনুমানিক ১২টার দিকে তাদের ছেড়ে দেন। ছাড়া পেয়ে ঐ গাড়ির ড্রাইভার দক্ষিণ সুরমাস্থ সিলাম নিবাসী আশিক মিয়া গতকাল সুরমা টাইমস পত্রিকার অফিসে এসে কর্তৃপক্ষের নিকট একটি অভিযোগ দেন।

Manual2 Ad Code

 

Manual3 Ad Code

অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায় ঐদিন আশিক মিয়া যখন থানা হাজতে ছিলেন তখন তিনি এস আই শফিকুল ইসলামকে বারবার অনুরোধ করেন যে, তার বাড়িতে একটি যোগাযোগ করিয়ে দেয়ার জন্য। এতে শফিকুল কোন কর্ণপাত না করে উল্টো তাদের ধমক দিয়ে বলেন, তোদের এতো তাড়া কিসের। পরবর্তীতে আশিক মিয়ার পরিবার বাহক মারফত জানতে পারে যে, তিনি ওসমানীনগর থানায় আছেন। তখন আশিক মিয়ার বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও ভাই থানায় হাজির হয়ে এস আই শফিকুলের কাছে তাদের ছেলে নির্দোষ বলে দাবী করেন। তখন ওসমানী নগর থানায় অবস্থান করছিল সিলেটের কুখ্যাত চোরকারবারী বুখাইর আহমদ। বুখাইর ড্রাইভার আশিকের মায়ের কাছে বলে যে, এস আই শফিকুলের সাথে আমার ভালো সম্পর্ক আছে। তোমরা কিছু টাকা খরচ করতে পারলে আমি তাকে বের করে দিতে পারবো, তা না হলে চোরাচালান মামলায় তোমার ছেলে জেলে যাবে। চোরকারবারী বুখাইয়ের কথায় আশিকের মা বলেন, কত টাকা লাগবে। বুখাইর ৫০ হাজার টাকা দাবি করে।

পরবর্তীতে আশিকের অসহায় মা ৩০ হাজার টাকা দিতে পারবেন বলে বুখাইরে সাথে রফাদফা করে। টাকা আশিকের বাড়িতে থাকায় বুখাইর নিজে আশিকের মায়ের সাথে সিএনজি অটোরিক্সাযোগে এসে ৩০ হাজার টাকা নেয়। টাকা হাতে নিয়ে বুখাইর আশিকের মাকে এসআই শফিকুলের মোবাইল নাম্বার দিয়ে কথা বলতে বলে। বুখাইর বলে যে, আপনি শফিকুল স্যারকে বলেন আমি ৩০ হাজার টাকা পেয়েছি। ঠিক এর মধ্যেই আশিক হাজত থেকে ছাড়া পেয়ে তার মাকে ফোন দেন এবং বলেন যে আমি থানা হাজত থেকে বের হয়েছি। ড্রাইভার আশিক ছাড়া পাওয়ায় আশিকের মা আর এসআই শফিকুলকে ফোন দেন নি। ড্রাইভার আশিক অভিযোগ করে বলেন যে, আমরা যখন থানা হাজতে ছিলাম, তখন এই বুখাইরকে এস আই শফিকুলের কাঁধে হাত রেখে হাটতে দেখেছি। তার নাম যে বুখাইর তা থানা থেকে বের হয়ে আমার মায়ের কাছ থেকে জেনেছি। এদিকে বিশ্বস্থ সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, এস আই শফিকুলের সাথে গভীর সখ্যতা রয়েছে সিলেটের শীর্ষ চোরাকারবারী বুখাইর আহমেদের। বুখাইর তার নিজের চোরাচালানের পণ্য নিরাপদে গন্থব্যে পৌঁছানোর জন্য ব্যবহার করে এস আই শফিকুলকে। আর অন্যান্য চোরাকারবারীদের ভারতীয় অবৈধ পণ্য এস আই শফিকুলকে দিয়ে আটক করিয়ে কোনটা মোটা অঙ্কে রফাদফা করে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন। নতুবা শফিকুল আটক করে মামলা দিয়ে দেন। একজন শীর্ষ চোরাকারবারী এবং ডজন খানেক চোরাচালানের মামলার সাথে জড়িত আসামী বুুখাইর আহমদের সাথে একজন পুলিশ কর্মকর্তার এমন দহরম-মহরম চিন্তিত করছে সচেতন সিলেট বাসি কে। অনেক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে উঠে আসে চোরাকারবারী বুখাইরের ইশারায় এখন কোটিপতি এস আই শফিকুল ইসলাম।

 

এ ব্যাপারে এস আই শফিকুল ইসলামের সাথে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগ করে এসব বিষয় জানতে চাইলে এসআই শফিকুল এই প্রতিবেদককে তার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে বুখাইরের ছবি পাঠাতে বলেন। ছবি পাঠানোর পর তিনি ম্যাসেজ সিন করে বুখাইরকে কোনদিন দেখেননি এবং চিনেন না বলে সম্পূর্ন ঘটনা অস্বীকার করেন।

Manual2 Ad Code

এসব অভিযোগের বিষয় জানতে চোরাকারবারী বুখাইরের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোন রিসিভ না করায় তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য চিহ্নিত চোরাকারবারী বুখাইর আহমেদ ও সাব-ইন্সপেক্টর (এস আই) শফিকুল ইসলামের থানার ভেতর এবং বাইরের অন্তরঙ্গ ভিডিও চিত্র ‘ সিলেটের বারুদ ’ কর্তৃপক্ষের নিকট সংরক্ষিত আছে।

 

সূত্র – সুরমা টাইমস