চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য জৈন্তাপুর-মেঘালয়

প্রকাশিত: ১০:৫৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৪

চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য জৈন্তাপুর-মেঘালয়

চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য জৈন্তাপুর-মেঘালয়

জৈন্তাপুর প্রতিনিধি::- সীমান্ত পথে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে ভারতীয় কীট, মাদক, চিনি ও গরু-মহিষ
বাংলাদেশের জৈন্তাপুর ও ভারতের মেঘালয় সীমান্ত চোরাকারবারীদের স্বর্গরাজ্যে পরিনত। প্রতিদিন রাতে সীমান্ত এলাকার চোরাই পথে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে ভারতীয় গরু-মহিষ, ভারতীয় চিনি, মাদক সহ আমদানী নিষিদ্ধ নানা অবৈধ পন্য। প্রশাসনের নাকের ডগায় সকল পশুরহাট প্রবেশ করছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সহ স্থানীয় প্রশাসনের নিরব ভূমিকায়। চোরাকারবারীদের একটি অংশের দাবী ভারতীয় চিনি, গরু ও মহিষ প্রবেশে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে। এই সুযোগে চোরাকারবারীরা নিরাপদে মাদক সহ অবৈধ পণ্য নিয়ে আসছে। জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।
অভিযোগ রয়েছে, চোরাকারবারীদের সাথে প্রশাসন সহ সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি’র সখ্যতা রয়েছে। ৪৮বিজিবি’র শ্রীপুর, মিলাটিলা, ডিবির হাওড় ও ১৯ বিজিবি জৈন্তাপুর, লালাখাল ও সুরাইঘাট সীমান্ত ফাঁড়ির সদস্যরা মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে ভারতীয় অবৈধ পথে আসা গরু সহ পণ্য আটক করার কথা জানান। সম্প্রতি তিন মাস হতে শ্রীপুর, মিনাটিলা, ডিবির হাওড়, জৈন্তাপুর, লালাখাল সুরাইঘাট সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় গরু-মহিষ, ভারতীয় চিনি, মাদক জাত পণ্য, শাড়ী, চা-পাতা, কসমেট্রিক্স সহ অবৈধ মালামাল প্রবেশ করছে বীরদর্পে। সিলেটের জৈন্তাপুর-ভারতের মেঘালয় সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় বিএসএফ ও বাংলাদেশের বিজিবি’র নজরদারি এড়িয়ে গরু-মহিষ চোরাকারবার ব্যবসা অব্যাহত রয়েছে। সীমান্ত এলাকায় কর্তব্যরত বিএসএফ ও বিজিবি‘র সদস্যদের প্রত্যক্ষ ইশারায় সীমান্ত এলাকায় রাতের অন্ধকারে কিংবা দিনের আলোতে কারবার সংগঠিত হচ্ছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করে। অবৈধ গরু ব্যবসার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সচেতন মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
প্রতিদিন জৈন্তাপুর বাজার, দরবস্ত বাজার, হরিপুর বাজার ও চতুল বাজার এছাড়া পাশবর্তী জাফলং বাজার, মামার বাজার, মাতুরতল বাজার, সোনাটিলা, তামাবিল এবং কানাইঘাট উপজেলার বড় চতুল বাজার অবৈধ ভাবে নিয়ে আশা ভারতীয় চিনি, চা-পাতা, মাদক জাত পণ্য, শাড়ী, আমদানী নিষিদ্ধ শেখ নাছির উদ্দিন বিড়ি ও গরু-মহিষ। এসব পণ্যের মাধ্যমে বাজার পরিচালনা করা হচ্ছে। উপজেলা সদরে ভারতীয় অবৈধ গরুর হাটটি উপজেলা প্রশাসন হতে মাত্র ১শত গজের মধ্যে অবস্থিত।
সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত বাসিন্দাগন জানান, দিনের বেলায় সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন বাড়ীতে, জঙ্গলে, পাহাড় ও টিলার আড়ালে শত শত গরু-মহিষ বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় থাকে। সন্ধ্যা রাত হতেই শেষ রাত পর্যন্ত জৈন্তাপুর উপজেলার নলজুরী হাওর, নলজুরী, মোকামবাড়ী, আলুবাগান, শ্রীপুর, মোকামপুঞ্জি, বাননঘাট, সাদা-পাথরের কালভার্ট, মিলাটিলা, ছাগল খাউরী, কাঠালবাড়ী, আর্দশগ্রাম, কেন্দ্রী, কেন্দ্রী হাওড়, ডিবির হাওড়, ডিবির হাওড় (আসামপাড়া ১২৮৬-রির্ভার পিলার), ঘিলাতৈল, ফুলবাড়ী, গৌরীশংকর, টিপরাখলা, কমলাবাড়ী, করিমটিলা, গুয়াবাড়ী, হর্নি, বাইরাখেল, জালিয়াখলা, কালিঞ্জীবাড়ী, লালাখাল গ্রান্ড, লালাখাল চা-বাগান, আফিফানগর, জঙ্গীবিল, তুমইর, ইয়াংরাজা, বালিদাঁড়া, বাঘছড়া, সিঙ্গারীপাড়, সুরাইঘাট এলাকা দিয়ে গরু মহিষ প্রবেশ করছে।
তার মধ্যে নলজুরী, মোকামবাড়ী, আলুবাগান, শ্রীপুর, মোকামপুঞ্জি, বাননঘাট, মিলাটিলা, ছাগল খাউরী, কাঠালবাড়ী, কেন্দ্রী, কেন্দ্রী হাওড় হয়ে আসা গরু-মহিষ গুলো নলজুরী, আমবাড়ী বাওন হাওর ঢুলটিরপাড় রোড দিয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলায় প্রবেশ করে। ডিবির হাওড়, ডিবির হাওড় (আসামপাড়া), ঘিলাতৈল, ফুলবাড়ী গৌরীশংকর, টিপরাখলা, কমলাবাড়ী, করিমটিলা দিয়ে নিয়ে আসা গরু-মহিষ সহ অন্যান্য পণ্য গুলো গৌরীশংকর, মেডিকেল গেইট ও খাসিয়াহটি দিয়ে জৈন্তাপুর বাজারে প্রবেশ করে। গুয়াবাড়ী, হর্নি, বাইরাখেল দিয়ে আসা গরু-মহিষ সহ অন্যান্য পণ্যগুলো লক্ষিপ্রসাদ ফেরীঘাট হয়ে কাটাগাং ষ্টোন ক্রাশার মিল, লক্ষীপ্রসাদ-দিগারাইল রোড হয়ে সারীঘাট উত্তরপাড় নিয়ে ট্রাক যোগে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। বাইরাখেল জালিয়াখলা, কালিঞ্জীবাড়ী দিয়ে আসা গরু-মহিষ ও অন্যান্য পণ্যগুলো সাইনবোর্ড দিয়ে প্রবেশ করে দরবস্ত ও হরিপুর বাজার প্রবেশ করে। লালাখাল গ্রান্ড, লালাখাল চা-বাগান, আফিফানগর, বাঘছড়া, জঙ্গীবিল, তুমইর, ইয়াংরাজা, বালিদাড়া, বাঘছড়া, সিঙ্গারীপাড়, সুরাইঘাট রোড দিয়ে আসা গরু গুলো হরিপুর বাজারে প্রবেশ করে। এছাড়া দ্রুত বহনের জন্য ছোট বড় পিকআাপ, ট্রাক গাড়ী দিয়ে সিলেট-তামাবিল হাইওয়ে রাস্তা হয়ে হরিপুর, দরবস্ত বাজার, কানাইঘাট-দরবস্ত রাস্তা দিয়ে দরবস্ত ও হরিপুর বাজার, চারিকাটা কেলেসিং বাজার টু দরবস্ত বাজার হয়ে দরবস্ত ও হরিপুর বাজার সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।

সীমান্ত এলাকার বাসিন্ধরা অভিযোগ করেন, প্রতিদিন রাতে আন্তর্জাতিক সীমান্ত দিয়ে অবাধে গরু মহিষ সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর নজর এড়িয়ে অহরহ বাংলাদেশ প্রবেশ করছে। ভারতীয় বিএসএফ ও বাংলাদেশের বিজিবি’র নিষ্ক্রিয়তায় সীমান্ত এলাকায় জনমনে ক্ষোভ একত্রিভুত হচ্ছে।
সূত্র মতে: আসাম-মেঘালয় সীমান্তবর্তী রংহংকং, মুক্তাপুর, আমলেরেং, হেওয়াইবস্তি, এসপিটিলা, চান্দঘাট, জালিয়াখলা, মালিডহর, দিগরখাল, আমকোনা, উসিয়াং, উখিয়াং ডুনা পাহাড়ি দূর্গম পথ অতিক্রম করে হাজার হাজার গরু-মহিষ অবৈধ ভাবে বাংলাদেশ প্রবেশ করে। সীমান্তের কোথায় নদী, পাহাড়, ঘন জঙ্গল ও কৃষি জমি, বিল ও খাল বেষ্টিত। পাহাড়ী এলাকা দিয়ে মেঘালয়ের পাচারকারীরা তাদের অপারেশন চালান। জৈন্তাপুর সীমান্তের গৌরীশংকর, ডিবির হাওর, গুয়াবাড়ী, লালাখাল, বালিদাঁড়া ও ভারতের মেঘালয়ের জোয়াই শহরের উমকিয়াং সীমান্তের দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় রয়েছে কয়েকটি ছোট ছোট কালভার্ড। এই কালভার্ড ভারতীয় পাচারকারীদের আরও দিগুন সুযোগ করে দিয়েছে। উমকিয়াং সহ একাধিক স্থান দিয়ে সুকৌশলে ভারতীয় গরু মহিষ বাংলাদেশে পাচার করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্রে জানায় জৈন্তাপুরে চোরাচালান নিয়ন্ত্রন করেন উপজেলার হেমু গ্রামের বাসিন্ধা ইয়াহিয়া মাহমুদ, উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা জাকারিয়া মাহমুদ ৫নং ফতেপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান রফিক আহমদ হরিপুর বাজার ব্যবসায়ী।

এ বিষয়ে জৈন্তাপুর মডেল থানার ওসি তাজুল ইসলাম পিপিএম এর কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন এটাতো আমাদের দায়িত্ব নয় এটা সীমান্তে যারা বিজিপি প্রশাসনের দায়িত্ব, তবে আমার থানা এলাকা দিয়ে প্রবেশ করতেছে দুই একজনের কাছ থেকে শুনতেছি যার কারণ হচ্ছে আমি ছুটিতে আছি এরই ফাঁকে হয়তো তারা সুযোগে কাজ করে যাচ্ছে তবে আমি আগামী রবিবার অফিসে আসবো এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব ইনশাল্লাহ।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ নিউজ