
জাপানের লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবরে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন সানায়ে তাকাইচি। দায়িত্ব গ্রহণের পরই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তিনি নতুন ‘আয়রন লেডি’ হিসেবে পরিচিতি পান। মার্গারেট থ্যাচারের অনুসারী এই রক্ষণশীল নেতা ঘরোয়া অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি ও নিরাপত্তায় কঠোর অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন।
তাকাইচির রাজনৈতিক অবস্থানের কেন্দ্রবিন্দু ‘নিপ্পন কেইগি’—জাপানের সবচেয়ে প্রভাবশালী জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। সংবিধানের যুদ্ধবিরোধী ৯ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী গঠন এবং ঐতিহ্যবাদী মূল্যবোধে প্রত্যাবর্তনের পক্ষে এই সংগঠন কাজ করে। পূর্বসূরি শিনজো আবের মতো তাকাইচিও জাপানকে আধুনিক সেনাবাহিনী ও শক্তিশালী গোয়েন্দা ব্যবস্থাসহ স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান।
অর্থনীতিতে তিনি জাতীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ বাড়ানোর পক্ষে। কঠোর অভিবাসন নীতি ও রক্ষণশীল মূল্যবোধ তাঁকে ডানপন্থী ভোটারদের মাঝে জনপ্রিয় করেছে। তবে তাঁর অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েছে, বিশেষ করে তাইওয়ান ইস্যুকে কেন্দ্র করে।
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই চীনের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছেন তাকাইচি। চীনকে কৌশলগত হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে তিনি প্রতিরোধমূলক সামরিক ও কূটনৈতিক উদ্যোগ বাড়ানোর পক্ষে। অক্টোবরের শেষ দিকে তাঁর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ দুই দেশের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করেছে। জাপান প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আর যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিরল ধাতুর সরবরাহ ও অর্থনৈতিক সহায়তা।
সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু হলো তাইওয়ানের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা। সম্প্রতি তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর তিনি বলেন, “তাইওয়ানের নিরাপত্তা সরাসরি জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত,” এবং প্রয়োজনে জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন। এই অবস্থানকে চীন ‘উত্তেজনাকর’ বলে অভিহিত করে এবং তাকাইচিকে সামরিকতাবাদ পুনরুজ্জীবিত করার অভিযোগ তোলে। পাশাপাশি রাষ্ট্রদূতকে তলব, জাতিসংঘে অভিযোগ, সামুদ্রিক টহল বাড়ানোসহ কড়া প্রতিক্রিয়া জানায় বেইজিং।
চীনের প্রতিক্রিয়ার মুখে জাপানও পশ্চিম সীমান্তের ইয়োনাগুনি দ্বীপে বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। একই দ্বীপে যুক্তরাষ্ট্রও সামরিক উপস্থিতি শক্তিশালী করছে, ফলে উত্তেজনা আরও বাড়ছে।
এ পরিস্থিতিতে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাকাইচিকে উত্তেজনা না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। আগামী এপ্রিলে তিনি বেইজিং সফর করতে চান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাকাইচির নেতৃত্বে জাপান নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করছে। তাঁর কঠোর অবস্থান দেশকে একদিকে পুনরুত্থানের পথে নিতে পারে, অন্যদিকে চীন–তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতেও ঠেলে দিতে পারে। ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তাঁর পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর।