২১শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৬ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১লা রজব, ১৪৪৭ হিজরি

জাফলংয়ে বিদায়বেলায় মসজিদের ইমামকে জাঁকজমক সংবর্ধনা

admin
প্রকাশিত ১৪ জুলাই, শুক্রবার, ২০২৩ ২১:২৭:৩৮
জাফলংয়ে বিদায়বেলায় মসজিদের ইমামকে জাঁকজমক সংবর্ধনা

Manual6 Ad Code

জাফলংয়ে বিদায়বেলায় মসজিদের ইমামকে জাঁকজমক সংবর্ধনা

 

আব্দুল শুক্কুর, গোয়াইনঘাট থেকে:-  হযরত মাওলানা আব্দুর রহমান যুবক বয়সে ইমামতি ও এলাকার মক্তবে পড়ানো শুরু করে দীর্ঘ ৩৪ বছর একই মসজিদে ইমামতি করে ৫৮ বছর বয়সে অবসর নিলেন। তার বিদায়কে জাঁকজমকপূর্ণ ও স্মরণীয় করে রাখলেন সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের পশ্চিম কারিনগর জামে মসজিদের পরিচালনা কমিটি ও এলাকার মানুষ।

 

শুক্রবার (১৪ জুলাই) বাদ জুম্মা মসজিদের পেশ ইমাম হযরত মাওলানা আব্দুর রহমান’র অবসরকালীন বিদায় উপলক্ষে সংবর্ধনার অয়োজন করেন তারা। হযরত মাওলানা আব্দুর রহমান সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের বাঘেরখাল গ্রামের ইয়াকুব আলীর ছেলে।

দেশের বেশিরভাগ মসজিদের ইমামদের বেতন-ভাতা খুব বেশি নয়। বিদায় বেলায় তেমন কোনো অর্থও দেওয়া হয় না। এ ক্ষেত্রে মাওলানা আব্দুর রহমান ভাগ্যবান। যেই মসজিদে কর্মজীবন পার করেছেন, সেই মসজিদ কমিটি ও এলাকার মানুষ তাকে অর্থ, উপহার সামগ্রী ও বিদায় বেলায় অবসরকালীন বিদায় সংবর্ধনা দিয়ে সম্মানিত করলেন।

Manual2 Ad Code

 

পশ্চিম কালিনগর গ্রামের মুরব্বি হাফিজ মিয়ার সভাপতিত্বে ও বন্ধন সমাজ কল্যান যুব সংঘের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিপন আহমেদের পরিচালনায় সংবর্ধিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পশ্চিম কালিনগর জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হযরত মাওলানা আব্দুর রহমান।

প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট মুরব্বি আবুল মিয়া, বিশেষ মেহমান হিসেবে বক্তব্য রাখেন গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম, মাওলানা সাইদুর রহমান।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন পশ্চিম কালিনগর জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. দেলওয়ার হোসেন।

এ সময় জাফলংয়ের বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসার ইমাম, খতিব ও শিক্ষকসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
বিশিষ্ট মুরুব্বি ও সমাজসেবক আবুল মিয়া বলেন, একজন সাদা মনের মানুষ ইমাম আব্দুর রহমান। একই মসজিদে এত বছর তিনি ইমামতি করছেন, অথচ কারও সঙ্গে তাঁর কোনো মনোমালিন্য হয়নি। তিনি বয়সের ভারে ইমামতি ছাড়তে চাইলেও গ্রামবাসী তাঁকে এত দিন ছাড়েননি।

Manual1 Ad Code

 

Manual8 Ad Code

গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইমাম আব্দুর রহমান বার্ধক্যের করণে অবসর নিয়েছেন। গ্রামবাসী তাঁকে না জানিয়েই বিশাল আয়োজনের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। তাঁরা চেয়েছিলেন এমন একজন মহৎ ব্যক্তির বিদায় অনুষ্ঠান যেন স্মরণীয় হয়ে থাকে। তাই তাঁরা সুসজ্জিত আয়োজনে বিদায় অনুষ্ঠানের অয়োজন করেন। সেখানে নানা বয়সী মানুষ স্মৃতিচারণা করেন।

গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে ইমাম সাহেবকে পবিত্র কোরআন শরিফ, ক্রেস্ট, নগদ টাকা ও উপহারসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। বিদায় সংবর্ধনা শেষে তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়।

এমন বিদায় সংবর্ধনায় অভিভূত মাওলানা আব্দুর রহমান বলেন, অনেক কম বয়সে মসজিদটির ইমামতি শুরু করেছিলেন। তাঁকে যাঁরা ইমামতিতে নিয়েছিলেন, সেসব মুরব্বিদের বেশিরভাগই আজ আর বেঁচে নেই। তবে তাঁদের সন্তানেরা, গ্রামের অন্যরা তাঁকে ভালোবাসেন ও শ্রদ্ধা করেন। তিনি আরও বলেন, তিনি যখন মক্তবে পড়াতেন, তখন আশপাশের গ্রামে এত মসজিদ, মক্তব, মাদ্রাসা ছিল না। তাঁর ছাত্রছাত্রী কয়েক গ্রামজুড়ে রয়েছেন। তিনি অসংখ্য ছাত্রছাত্রীর কোরআন শরিফ শিক্ষা দিয়েছেন। তাঁদের অনেকেই আজ বড় বড় চাকরি পেয়েছেন।

Manual2 Ad Code

তাঁরা তাঁকে ভুলে যাননি। তাঁকে ভালোবাসেন। গ্রামবাসী তাঁকে আরও ইমামতির দায়িত্ব পালনের জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তবে বয়স হয়ে যাওয়ায় ও নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত তিনি। তাই তাঁর পক্ষে আর দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হচ্ছে না।

 

মসজিদ কমিটির সভাপতি ও মোতোয়ালি মো. দেলওয়ার হোসেন বলেন, মাওলানা আব্দুর রহমান তাঁদের গ্রামেরই একজন ও পরম আপনজন হয়ে ছিলেন। তিনি ছিলেন তাঁর অভিভাবকের মতো। আমাদের সমাজের বয়জেষ্ঠ ময়মুরুব্বীদের নিয়োগের মাধ্যমে দীর্ঘ ৩৪ বছর অত্র এলাকার মানুষের সাথে নিবিড় সুসম্পর্কের মাধ্যমে হুজুর তার দায়িত্ব পালন করে গেছেন। আমার দেখা মানুষের সাথে এ চমৎকার সু-সম্পর্কের নেপথ্যে ছিল হুজুরের রাগ, হিংসা, লোভ ও অহংকার মুক্ত থাকা। আমিসহ আমরা হুজুরের কর্মময় জীবনকে অনুকরণীয় হিসাবে স্বীকৃতি দিচ্ছি।

 

প্রবীণ মুরুব্বী আব্দুল হাফেজ বলেন, নিয়োগ দেওয়ার পর অত্যন্ত সুনামের সাথে মাওলানা আব্দুর রহমান আমাদের মসজিদের ইমাম ও খতিব এর দায়িত্ব পালন করে গেছেন। দীর্ঘ এই ৩৪ বছর ইসলামের সহী পথ প্রদর্শক হিসেবে অত্যন্ত সুনাম ও কৃতিত্বের সাথে পশ্চিম কালিনগর মহল্লাবাসীকে দিনের খেদমত করে গেছেন।

 

পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান (২) জালাল হোসেন বলেন, একজন ইমাম সমাজের নেতা। তাঁর এমন সম্মান ও রাজকীয় বিদায় সংবর্ধনা দিয়ে খুবই প্রশংসনীয় কাজ করেছেন এলাকাবাসী।

উল্লেখ্য, মাওলানা আব্দুর রহমান দাওরায়ে হাদিস পাস করে ১৯৮৯-২০২৩ ইং পর্যন্ত পশ্চিম কালিনগর জামে মসজিদে ইমামতির দায়িত্ব পালন করেন।