ট্রাক ও ট্রাক্টর থেকে চাঁদাবাজি নেপথ্যে, হাবিবউল্লাহ ও মানিক সিন্ডিকেটের 

প্রকাশিত: ৩:১৩ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১, ২০২৫

ট্রাক ও ট্রাক্টর থেকে চাঁদাবাজি নেপথ্যে, হাবিবউল্লাহ ও মানিক সিন্ডিকেটের 

ট্রাক ও ট্রাক্টর থেকে চাঁদাবাজি নেপথ্যে, হাবিবউল্লাহ ও মানিক সিন্ডিকেটের 

বছর দুই এক আগেও তিনি ছিলেন পাথর শ্রমিক। আর বাবা ছিলেন একজন দিনমজুর।তবে দিন পাল্টে গেছে। বারকী শ্রমিক থেকে এখন সিলেটের শীর্ষ চোরাচালানি।
প্রতিদিন হাতে আসছে কাড়ি কাড়ি টাকা। সেই টাকায় এখন গোয়াইনঘাটের শীর্ষ ধনাঢ্যদের একজন তিনি। বলছি শীর্ষ চোরাচালানী ও অবৈধ বালু পাথর বহনকারী ট্রাক ট্রাক্টর থেকে চাদাবাজির হোতা হাবিবউল্লাহর কথা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায় সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নয়াবস্তি গ্রামের দিনমজুর মৃত মোস্তফা মিয়ার ছেলে হাবিবউল্লাহ,।
জন্মসূত্রে দারিদ্রতার করাঘাতে বেড়ে উঠা হাবিবউল্লাহ এখন কলকাঠি নাড়েন সর্বত্র। জাফলং একটি সীমান্তবর্তী এলাকা। যেখানে বারকী শ্রমিক হিসেবে কাজ করার সুবাধে হাবিবউল্লাহর সখ্যতা গড়ে উঠে ছিচকে চোরাকারবারিদের সাথে। এই সখ্যতাই জীবনে পাল্টে দেয় হাবিবউল্লাহর ঘুরতে থাকে ভাগ্যের চাকা।
এখন শুধু হাবিবউল্লাহ নয়। সহযোগী করেছেন ছৈলাখেল গ্রামের সিরাজ মিয়ার ছেলে মানিক-প্রকাশ কালা মানিক। ৫ আগস্টের আগে মানক ছিলেন বারকি নৌকা সমিতির সভাপতি। পট পরিবর্তনের পর রাতারাতি কোটি টাকার মালিক এখন। স্থানীয় প্রশাসনের সাথে রয়েছে মানিকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। প্রায় সময় রাতে স্থানীয় পুলিশ নদীতে অভিযান করলে সেই অভিযানে পুলিশের সাথে দেখা মেলে মানিকের।হাবিবউল্লাহর আরেক সহযোগী যুবদল নেতা পরিচয়দানকারী মাহমুদ।
যাদের ঘরে আগে নুন আনতে পান্তা ফুরাতো সেই ঘরে এখন আলীশান অবস্থা। বিগত বিগত কয়েক মাসে বছরে হাবিবউল্লাহ, মানিক ও মাহমুদ আঙ্গুল ফুলে রাতারাতি কলাগাছ হয়ে গেছে।

বর্তমানে হাবিবউল্লাহ রয়েছে ৮টি ড্রেজার মেশিন, যার প্রতিটির বাজার মূল্য প্রায় তিন লক্ষ টাকা, দুটি সেভ মেশিন যার বাজার মূল্য দেড় লক্ষ টাকা; একাধিক ক্রাশার মিলসহ বিভিন্ন বড়ো বড়ো ব্যবসায় পাঠনার; দামী মোটরসাইকেল ও বানিয়েছেন বিশাল অট্টালিকা।
স্থানীয়রা জানান, পট পরিবর্তনের পর জাফলং চাবাগান ও ঝুমপার থেকে শুরু হয় পাথর লোপাটের মহা উৎসব-সেই উৎসবে ছিলেন হাবিবুল্লা। তৎকালীন সময়ের স্থানীয় প্রশাসন ও উপরের মহলের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে দিনে ও রাতে অবৈধভাবে তুলতেন পাথর। পাথর লুটে প্রশাসনিক অভিযান হলেও তিনি বা তার বাহিনী সবসময় ধরাছোঁয়ার বাইরে বাইরে থাকতেন। ঘন ঘন অভিযান ও নদীতে পানি আসার কারণে বন্ধ হয়ে যায় পাথর উত্তোলন।

পাথর উত্তোলন বন্ধ হলেও। হাবিবুল্লার রামরাজত্ব এখন নদী ও বারকি শ্রমিকদের মজুদ করা জমিদার মসজিদের পাশে ফারুক মিয়ার সাইডে।
জাফলং বাজারের জমিদার মসজিদের পাশে নদী থেকে বারকি শ্রমিকরা বালু তুলে মজুদ করেন। সেই মজুদ করা বালু বিক্রি করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন বারকি শ্রমিকরা।
সেখানেই নতুন করে পুলিশের ওসি ও স্থানীয় ফাঁড়ির পুলিশের নামে চাঁদা তুলেন হাবিবুল্লা, মানিক ও যুবদিল নেতা মাহবুদ।
শ্রমিকরা আরও জানান , যখনই নদীতে অভিযান হয়, তখন অভিযানের জন্য নৌকা ভাড়া করে দেন সিন্ডিকেট সদস্য মানিক নেজেই । কখনো নিজেই সেই নৌকার চালক হয়ে অভিযানে যান মানিক। সেই সুবাদে কিছু পুলিশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন মানিক।

শ্রমিকরা বর্ণনা করেন— সারা দিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে পরিবারের জন্য খাবার জোগাড় করতে নদী থেকে বালু তোলা হয়। বালু জমিদার ঘাটে আনার পর পাইকারের কাছে বিক্রি করতে হয় অর্ধেক দামে। ক্রেতারা বালু নিয়ে যাবার সময় হাবিবউল্লাহ বাহিনীর কাছে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিলেই পুলিশ দিয়ে গাড়িসহ বালু জব্দ করানো হয়। যে গাড়ি তাদের চাঁদা দেয়, সেটিই নির্বিঘ্নে নিজ গন্তব্যে পৌঁছে যায়।
স্থানীয়রা আরও জানান, জমিদার মসজিদের পাশ থেকে প্রতি ট্রাক থেকে হাজার টাকা এবং ট্রাক্টর থেকে পাঁচশত টাকা করে চাঁদা তুলেন হাবিবুল্লা বাহিনী।

ড্রাইভার চাঁদা দিতে আপত্তি জানালে বা চাঁদা না দিয়ে চলে গেলে হাবিবুল্লা তার সহযোগী মানিক ও যুব নেতা মাহবুবকে তাৎক্ষণিক ফোন করেন। তাদের পরামর্শে গাড়ি পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে ভুক্তভোগীরা জানান।
এ ব্যাপারে স্থানীয় নলজুড়ি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের সাথে আলাপে তিনি বলেন, এই রকম ঘটনা আমি শুনেছি। কিন্তু আমরা সেখানে গেলে কিছুই পাই না। জমিদার মসজিদের পাশে আমাদের পুলিশ সদস্য ডিউটি করছে। আমাদের জনবল কম, এলাকা অনেক বড়। তার পরেও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।আপনাদের নামে টাকা আদায় করা হয়— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের কেউ টাকা দেয় না। আমরা জনস্বার্থে কাজ করি, অবৈধ কাজ বন্ধ করা আমাদের দায়িত্ব। অপরাধী যেই হোক, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
একই ব্যাপারে হাবিবউল্লাহ বলেন, আমি চাঁদা তুলি না, আমি নৌকা থেকে বালু কালেকশন করি। বাকিদের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। সবাই জানে, আমি শুধু কালেকশন করি।

আরও পড়ুন,জাফলংয়ে যুবদলের নাম ভাঙ্গিয়ে বালু বাহী ট্রাক ট্রাক্টর থেকে মাহমুদ ও মানিকের চাদাবাজি

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ নিউজ