
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মনোনয়নপত্র দাখিল, বাছাই, জামানত জমা ও প্রার্থিতা প্রত্যাহার–সংক্রান্ত বিস্তারিত নির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র-২ জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, যোগ্য প্রার্থীরা রিটার্নিং কর্মকর্তা বা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে সরাসরি মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারবেন। প্রার্থী ছাড়াও তাঁর প্রস্তাবকারী বা সমর্থনকারী মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারবেন।
নির্ধারিত তারিখের মধ্যে বা তার আগে যেকোনো দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৯ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা। এর পর আর কোনো মনোনয়নপত্র গ্রহণ করা হবে না।
মনোনয়নপত্র গ্রহণের সময় ক্রমিক নম্বর দিতে হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ‘রিঅ-’ এবং সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ‘সরিঅ-’ দিয়ে নম্বর দেওয়া যাবে। দাখিলকারীকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রাপ্তি স্বীকার রসিদ এবং মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের তারিখ, সময় ও স্থান উল্লেখ করে নোটিশ দিতে হবে।
প্রার্থীকে জামানত হিসেবে ৫০ হাজার টাকা নগদ, ব্যাংক ড্রাফট, পে-অর্ডার বা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের অনুকূলে জমা দিতে হবে। কোনো প্রার্থীর পক্ষে একাধিক মনোনয়নপত্র দাখিল হলেও একটি জামানতই যথেষ্ট হবে। অন্য মনোনয়নপত্রের সঙ্গে মূল চালানের সত্যায়িত অনুলিপি সংযুক্ত করতে হবে।
জামানতের অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংক বা যেকোনো ব্যাংক/সরকারি ট্রেজারিতে ১০৯০৩০২১০১৪৪৩-৮১১৩৫০১ কোডে জমা দিতে হবে।
প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীকে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ভোটার হতে হবে এবং অন্য কোনো মনোনয়নপত্রে প্রস্তাবক বা সমর্থক হিসেবে স্বাক্ষর করেননি—এমন ব্যক্তি হতে হবে।
রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর ক্ষেত্রে দলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের পদাধিকারীর স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্র মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়ই জমা দিতে হবে।
একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কোনো আসনে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন দিলে দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত লিখিত পত্রের মাধ্যমে ২০ জানুয়ারি বিকেল ৫টার মধ্যে চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানাতে হবে। অন্য প্রার্থীদের মনোনয়ন তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্থগিত বলে গণ্য হবে।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লিখিত নোটিশ দিয়ে কোনো প্রার্থী নিজে বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারবেন। একবার লিখিত নোটিশ বা দলীয় চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হলে তা আর বাতিল করা যাবে না।
বাছাইয়ের সময় প্রার্থী, তাঁর নির্বাচনী এজেন্ট, প্রস্তাবকারী, সমর্থনকারী বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধি উপস্থিত থাকতে পারবেন। ছোটখাটো ত্রুটির জন্য মনোনয়নপত্র বাতিল করা যাবে না। তাৎক্ষণিকভাবে সংশোধনযোগ্য ত্রুটি থাকলে সংশোধনের সুযোগ দিতে হবে। তবে হলফনামার কোনো তথ্য পরিবর্তন করা যাবে না।
প্রার্থীর নাম বা অন্যান্য তথ্য ভোটার তালিকার সঙ্গে হুবহু না মিললেও মনোনয়নপত্র বাতিল করা যাবে না। সে ক্ষেত্রে এসএসসি সনদ বা স্বীকৃত পরিচয়পত্র দেখে তথ্য যাচাই করতে হবে।
মনোনয়নপত্র গ্রহণ বা বাতিলের সিদ্ধান্তে সংক্ষুব্ধ প্রার্থী, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৫ থেকে ১১ জানুয়ারি বিকেল ৫টার মধ্যে নির্বাচন কমিশনে আপিল করতে পারবেন। নির্বাচন কমিশন ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারির মধ্যে এসব আপিল নিষ্পত্তি করবে।
পরিপত্রে সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিনেও নির্বাচন–সংশ্লিষ্ট সব কার্যালয় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে অফিস সময়ের পরেও কার্যক্রম চালাতে বলা হয়েছে।
তবে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন বিকেল ৫টার পর আর কোনো মনোনয়নপত্র গ্রহণ বা প্রত্যাহার করা যাবে না।
মনোনয়নপত্র দাখিলকারীদের ঋণখেলাপি সংক্রান্ত তথ্য যাচাইয়ের জন্য নির্ধারিত ছকে প্রয়োজনীয় তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি)-তে পাঠাতে হবে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলের অঙ্গীকারনামা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করতে হবে।