মাদারীপুরের যুবক ফয়সাল মোড়ল (২১) পাড়ি জমাতে চেয়েছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি পৌঁছান পাকিস্তানে। সেখানেই যোগ দেন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানে (টিটিপি)। গত শুক্রবার খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে পাকিস্তানি সেনাদের অভিযানে নিহত হন এই যুবক।
পাকিস্তানের গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি দেখে ফয়সালের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন তাঁর স্বজনেরা। একই সঙ্গে ছেলের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন ফয়সালের মা।
ফয়সাল মাদারীপুর সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের ছোট দুধখালী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল আউয়াল মোড়লের ছেলে। তাঁর মৃত্যুর খবরে পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজন ভিড় করছেন নিহত যুবকের বাড়িতে।
কীভাবে পাকিস্তানে পৌঁছালেন ফয়সাল?
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে থাকার সময় ফয়সাল ঢাকার জগন্নাথপুর এলাকায় বিভিন্ন মসজিদের সামনে আতর বিক্রি করতেন। হঠাৎ একদিন পরিবারকে জানান, তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী দুবাইয়ে একটি হিজামা সেন্টারে চাকরির জন্য যাচ্ছেন। সেই উদ্দেশ্যে ২০২৪ সালের মার্চে বাড়ি থেকে বের হন তিনি।
এরপর কোরবানির ঈদের আগে পরিবারের সঙ্গে তাঁর সর্বশেষ কথা হয়। এর পর থেকে আর কোনো খোঁজ মেলেনি তাঁর।
২৬ সেপ্টেম্বর রাতে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের কারাক জেলায় পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে টিটিপির ১৭ সদস্য নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশের ফয়সালও। তাঁর পরনের পোশাক, আইডি কার্ড, বাংলাদেশি মুদ্রা ও অন্যান্য নথিপত্র উদ্ধার করে পাকিস্তানি সেনারা। পরে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে ছবি দেখে বিষয়টি নিশ্চিত হয় তাঁর পরিবার।
মায়ের আহাজারি
ফয়সালের মা চায়না বেগম বলেন,
‘ফয়সাল দেড় বছর আগে দুবাই যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু সে পাকিস্তানে গেছে, তা আমরা জানতাম না। ও কারও খপ্পরে পড়ে পাকিস্তানে গেছে। এ ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানাই। পাশাপাশি আমি আমার সন্তানের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানাই, যেন ছেলের মুখটি শেষবার দেখতে পারি।’
পুলিশের বক্তব্য
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহম্মাদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন,
‘পরিবার চাইলে ফয়সালের লাশ দেশে ফেরত আনতে সহযোগিতা করা হবে। আর কেউ যেন এমন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হতে না পারেন, সে বিষয়ে পরিবারকে সতর্ক থাকতে হবে।’