দোকান কর্মচারী রুমন খুনের দায় স্বীকার করেনি মূলহোতা আব্বাস। ন্যায় বিচার ও ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ 

প্রকাশিত: ১১:৫১ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৪, ২০২৫

দোকান কর্মচারী রুমন খুনের দায় স্বীকার করেনি মূলহোতা আব্বাস। ন্যায় বিচার ও ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ 

এমদাদুর রহমান চৌধুরী জিয়া :

সিলেট নগরের কাজির বাজারে চা দিতে দেরি করায় হোটেল কর্মচারী আলোচিত রুমন খুনের মূলহোতা আব্বাস( ৫৫)কে সোমবার সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ সিলেট মেট্রোপলিটন আদালতের প্রধান বিচারক শরিফুল হক এর নিকট এজলাসে হাজির করা হলে ঘটনার দায়া স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়নি। যদিও পুলিশের কাছে অনেকটা স্বীকার করেছিল।

তবে আদালতের নির্দেশে ১৪ জুলাই সোমবার তাকে পাঠানো হয়েছে সিলেট মেট্রোপলিটন কারাগারে।

তবে পুলিশের এডিসি মিডিয়া সাইফুল ইসলাম জানান, খুনের ঘটনায় আসামি আব্বাস আদালতে দায় স্বীকার করেনি তাই পুলিশের পক্ষ থেকে রিমান্ড আবেদন দেয়া হবে। অপরদিকে এই ঘটনায় জড়িত অন্য আসামীদের গ্রেফতারের পুলিশের চৌকস টিম মাঠে কাজ করছে।

এদিকে সোমবার বিকেলে হোটেল কর্মচারী রুমন হত্যাকারীদের ফাঁসি ও ন্যায়বিচার দাবী করে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন, সিলেট।

তাদের দাবি, এক কাপ চা দিতে দেরি করায় হোটেল শ্রমিককে যারা নৃশংসভাবে খুন করতে পারে তারা মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছে। বিশেষ ক্ষমতা আইনে দ্রুত এর বিচার করা প্রয়োজন।

 

তারা বলেন , হোটেল শ্রমিক গরিব বলে বিচারের ক্ষেত্রে যেন ন্যায়বিচার বঞ্চিত না হয়। ইনসাফ ভিত্তিক সঠিক বিচার

দাবি করেন আদালতের কাছে।

হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারাও হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন

বিক্ষোভ করলেও এ ঘটনার নিন্দা সিলেটের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সর্বস্তরের মানুষের

মুখে মুখে। মব ও কাজির বাজারে চা দোকান কর্মচারী খুনের মধ্য দিয়ে ত্রাস সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনানক ব্যবস্থা চান তারা।

এদিকে হোটেল শ্রমিক রুমন খুনের মূল হোতা

আব্বাস (৫৫) সোমবার সিলেট মেট্রোপলিটন আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে জানান কোতোয়ালি থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ জিয়াউল হাসান । আদালতের নির্দেশে পাঠানো হয়েছে কারাগারে।

 

১৩ জুলাই সিলেটের কাজিরবাজারস্থ নিরঞ্জন ঘোষ নিরুক বাবুর রেস্তোঁরার কর্মচারী রুমন’(২৬) তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শ্রমিক হত্যার প্রতিবাদে সিলেট জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ অনুষ্ঠিত।

১৪ জুলাই বিকেল ৫টায় সুরমা পয়েন্টে জমায়েত হয়ে মিছিলটি তালতলা, জিতু মিয়ার পয়েন্ট, কাজিরবাজার, তোপখানা, জিন্দাবাজার হয়ে কোর্ট পয়েন্টে এসে জেলা সভাপতি মো. ছাদেক মিয়ার সভাপতিত্বে এবং ক্রিড়া সম্পাদক সুনু মিয়া সাগরের পরিচালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ সিলেট জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সরকার, শাহপরান থানা কমিটির সভাপতি খোকন আহমদ, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সিলেট জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক রমজান আলী পটু, জাতীয় ছাত্রদল সিলেট জেলা কমিটির আহবায়ক শুভ আজাদ শান্ত, সিলেট জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মনির হোসেন, অন্যতম নেতা আনোয়ার হোসেন, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা কমিটির সহ-সভাপতি শাহীন আহমদ, জিন্দাবাজার আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি মো. আলমাছ মিয়া, বাবনা আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোমিন মিয়া, বন্দরবাজার আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি সাহাব উদ্দিন, চন্ডীপুলতে দেরি হবে’ এই সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে কর্মস্থলে যখন একজন হোটেল শ্রমিককে খুনের শিকার হতে হয়। শ্রমিকদের চাকুরির নিশ্চয়তা, জীবনের নিরাপত্তা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন পরিচালনা করতে গিয়ে নানা বাধা বিপত্তি হামলা মামলার শিকার হতে হয়ে যেমন তেমনি কর্মক্ষেত্রে নূন্যতম নিরাপত্তা পান না হোটেল শ্রমিকরা। শ্রমিকরা কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মালিকের মুনাফা লাভে কাজ করে গেলেও তাদের দেওয়া হয়না শ্রমের প্রকৃত মূল্য। কাজের বিনিময়ে তারা লাভ করতে হয় মৃত্যুবরণ।

হোটেল রেস্টুরেন্টে কর্মরত শ্রমিকরা বেশিরভাগই কৃষকের সন্তান। গ্রাম্য জোতদার মহাজনের শোষণে জমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে বাধ্য হয়ে জীবিকার তাগিদে শহরে এসে হোটেল রেস্টুরেন্টে কাজ নিয়ে জীবন সংগ্রামে লিপ্ত হয়। কিন্তু অব্যাহত মুদ্রাষ্ফীতি-মূল্যস্ফীতি এবং সরকারের মদতে মুৎসুদ্দি পুঁজিপতিরা অস্বাভাবিকভাবে চাল-ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতির কারণে শ্রমিক-কৃষক-জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে জীবন-জীবিকা আরো সংকটগ্রস্থ ও অনিশ্চিত করে তুলেছে; তার বিপরীতে নির্বাচিত সরকার, সামরিক সরকার, তত্ত¡াবধায়ক সরকার, অন্তবর্তীকালীন সরকার সহ সকল সরকারই মালিকদের স্বার্থ রক্ষা করে চলেছে। অতীতের সকল সরকারের ন্যায় বর্তমান সরকারের আমলেও মালিক শ্রমিক একতার কথা বলে শ্রমিক শ্রেণি ও শ্রমিক আন্দোলনকে বিভ্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্থ করে চলেছে। সা¤্রাজ্যবাদের দালাল সকল সরকারই শ্রমিক আন্দোলনকে দমন করার জন্য রাষ্ট্রীয় পেটুয়া বাহিনী দিয়ে মামলা-হামলা এমনকি গুলি করে হত্যা করছে।

সমাবেশ থেকে নিহত দিনার আহমদে রুমনের হত্যার মূল আসামী গ্রেফতার হলেও তার সহযোগী খুনীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে ফাঁসির দাবি জানান এবং নিহতের আজীবন আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদানের প্রেক্ষিতে সিলেটের প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ নিউজ