১৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৪ঠা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৮শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ধরা ছোয়ার বাইরে সিলেটের আলোচিত ১৪ ট্রাক চিনির মূল হোতা নুর ইসলাম ও দেলোয়ার মোল্লা

admin
প্রকাশিত ১০ জুলাই, বুধবার, ২০২৪ ২২:০৬:৩৪
ধরা ছোয়ার বাইরে সিলেটের আলোচিত ১৪ ট্রাক চিনির মূল হোতা নুর ইসলাম ও দেলোয়ার মোল্লা

Manual6 Ad Code

ধরা ছোয়ার বাইরে সিলেটের আলোচিত ১৪ ট্রাক চিনির মূল হোতা নুর ইসলাম ও দেলোয়ার মোল্লা

 

সিলেটে শহরতলীর উমাইরগাঁওয়ে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চোরাই পথে আনা ভারতীয় চিনি ভর্তি আলোচিত সেই ১৪ ট্রাক চিনির মূল হোতারা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

এ বিষয়ে সিলেট সহ সারা দেশে চলছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়। জব্দের ঘটনা ছিল ‘টক অব দ্যা’ সিলেট।

Manual6 Ad Code

স্থানীয় ও মামলার গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের সাক্ষ্য মতে জানা যায়,আলোচিত সেই ১৪ ট্রাক চিনি জব্দ মামলার মূল হোতা সিলেটের নতুন ভাঙ্গা গ্রামের মৃত আব্দুল হাসিমের ছেলে
নুর ইসলাম ও গোয়াইনঘাট থানার হাদারপাড় গ্রামের দেলোয়ার মোল্লা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ এখন চিনি চোরাচালের নিরাপদ রুট। আইন-শৃংখলা বাহিনী মাঝে-মধ্যে অভিযান চালিয়ে কিছু চিনির চালান জব্দ করলেও অধিকাংশই থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। অনেকেই বলছে মাঝে মধ্যে যে চিনি আটক করা তা শুধু লোক দেখানো ও পুলিশের সোর্সদের সাথে বনি বনার কারনে।

স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, জব্দকৃত চিনির ট্রাকের মধ্যে ৩/৪টি কোম্পানীগঞ্জ থেকে এবং বাকিগুলো গোয়াইনঘাট সীমান্ত এলাকা থেকে এসেছে।

ওই সূত্রের দাবি, চিনির চালান মূলত এয়ারপোর্ট বাইপাস হয়ে বাদাঘাট দিয়ে সিলেটে আসার কথা ছিল। কিন্তু, ট্রাক চালকেরা সালুটিকরে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় তারা রাস্তা পরিবর্তন করে বহর উমাইরগাঁও রাস্তা দিয়ে সিলেটে প্রবেশের চেষ্টা করে। খবর পেয়ে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে ট্রাকের এ চালান জব্দ করে।

জানা গেছে উমাইরগাঁওয়ে ১৪ ট্রাক চিনিসহ জব্দ করা ট্রাকের মধ্যে একটি ট্রাকের চালক মুনসুর আলীকে (৩৮) গত ১১ জুন গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত মুনসুর আলী সিলেট সদর উপজেলার রঙ্গিটিলা গ্রামের রুস্তম আলীর পুত্র।

গ্রেফতারের পরদিনই মুনসুর আলী ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় সিলেটের মহানগর হাকিম (তৃতীয় আদালত) উম্মে হাবিবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

Manual2 Ad Code

একই ঘটনায় গত শনিবার গ্রেফতার করা হয় সদরুল আমিন আকাশ (২৮) নামের আরেক ট্রাক চালককে। সদরুল সিলেট সদর উপজেলার উমদারপাড়ের আফান আলীর পুত্র। গ্রেফতারের পরদিন গত রোববার সদরুলও একই আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

বর্তমানে তারা দু’জন আদালতের আদেশে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।

আলোচিত ওই ঘটনায় এ পর্যন্ত উপরোক্ত দুই আসামি গ্রেফতার হলেও এখনো মূলহোতা নতুন ভাঙ্গা গ্রামের মৃত আব্দুল হাসিমের ছেলে নুর ইসলাম ও দেলোয়ার মোল্লা রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

এদিকে, আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে ট্রাক চালক মুনসুর আলী ঘটনার আদ্যপ্রান্ত বর্ণনা দিয়েছেন। জানিয়েছেন, ‘যদি পুলিশের হাতে চিনি চোরাচালান ধরা পড়ে যায়; তাহলে দেলোয়ার মোল্লা ও নুর ইসলাম পুলিশের দিকটা দেখব।

জবানবন্দিতে ১৪ ট্রাক চিনি ধরা পড়ার আগে আরও তিনটি ট্রাক পালিয়ে যাওয়ার তথ্য প্রকাশ করেছেন মুনসুর।

মুনসুরের ট্রাকটি ভাড়া করেছিলেন নতুন ভাঙ্গা গ্রামের মৃত আব্দুল হাসিমের ছেলে নুর ইসলাম। আর চোরাই চিনির বাহক হিসেবে পথ নির্দেশকের দায়িত্ব পালন করেন দেলোয়ার মোল্লা। তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের ধারণা, দেলোয়ার মোল্লা চোরাকারবারীদের একজন।

Manual4 Ad Code

জবানবন্দিতে মুনসুর আলী আরো বলেন, ‘৫ জুন সন্ধ্যার দিকে নুর ইসলাম আমাকে বলে একটা ট্রিপ আছে। হাদারপাড় (বিছনাকান্দি) ট্রাক নিয়ে যেতে বলে। রাত সাড়ে ১০ টায় হাদারপাড় যাই। নুর ইসলাম আমাকে বলে এক ট্রিপ চিনি নিয়ে যাও। তোমাকে ১০ হাজার টাকা ভাড়া দেব। আমি বলেছি, পুলিশ ধরব। তখন সে (নুর ইসলাম) আমাকে বলে, পুলিশে ধরবে না। পুলিশকে ম্যানেজ করব।

আমি তখন ১৫৫ বস্তা চিনি নৌকা থেকে ট্রাকে তুলি। তারপর আমাকে নুর ইসলাম বলেছে, দেলোয়ার মোল্লা পুলিশের দিকটা দেখব।

আমি ট্রাক চালাইয়া সালুটিকর আসি। তখন সেখানে দেখি আরও ১৬-১৭টি ট্রাক দাঁড়ানো।নতুন ভাঙ্গা গ্রামের মৃত আব্দুল হাসিমের ছেলে নুর ইসলাম আমাকে ফোনে বলে যে, উমাইরগাঁও রোড ধরে যাওয়ার জন্য। কিছু ট্রাক এক রোডে, কিছু অন্য রোডে, আবার সবকিছুর নির্দেশনা ফোনে ফোনে হচ্ছিল।

আমরা ট্রাক নিয়ে উমাইরগাঁও রোডে রওনা হতেই একটা সাদা রঙের প্রাইভেট কার ও একটি মোটরসাইকেল আমাদের ট্রাক ক্রস করে, আমাদের রাস্তা ক্লিয়ার করে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এরা কারা আমি ঠিক জানি না।

দেলোয়ার মোল্লা জানতে পারে এরা কারা। আমরা উমাইরগাঁও যাওয়ার পরই দেখি আমার সামনের ৬-৭টা ট্রাক ঘুরিয়ে ফেলছে। আমিও দেখে ট্রাকটি ঘুরিয়ে ফেলি।

সামনের ট্রাককে জিজ্ঞেস করতে বলে, দুই-তিন মিনিট দাঁড়াতে। এর মধ্যেই বাইক ও প্রাইভেট কারের লোকজন পালাইছে। অন্য ট্রাকের ড্রাইভাররাও পালিয়ে যায়। ৪-৫ মিনিটের মধ্যে দেখি পুলিশ এসে গেছে। তখন সুযোগ বুঝে আমিও পালিয়ে যাই’।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দেলোয়ার মোল্লার বাড়ি গোয়াইনঘাট থানার হাদারপাড়ে। দেলোয়ার মোল্লা স্থানীয়দের নিকট ‘পুলিশের লোক’ হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গেও তার সখ্যতা রয়েছে।

Manual1 Ad Code

দেলোয়ার মোল্লার পেশা কী- এ বিষয়ে কেউ কিছু বলতে পারেননি। দৃশ্যমান কোনো ব্যবসা না থাকলেও তার চলাফেরা রাজকীয় বলে জানা গেছে।

স্থানীয় লোকদের মাধ্যমে দেলোয়ার মোল্লার দুটো ফোন নম্বর পাওয়া গেলেও দুটো নম্বরই বন্ধ পাওয়া গেছে। দেলোয়ার মোল্লার ব্যাপারে গোয়াইনঘাট থানার ওসি রফিকুল ইসলাম শ্রাবণ বলেন, ‘ফেইসবুকে যত্রতত্র মানুষ ছবি তুলতে পারে। নতুন স্থানে আসলে কাউকে চেনার উপায় থাকে না।

তবুও মামলাটি অন্য থানার। উনারা যদি আসামি ধরতে আসে ডেফিনিটলি আমি তাদেরকে সহায়তা করব।’ প্রসঙ্গত, সিলেট মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানার উমাইরগাঁওয়ে গত ৬ জুন ১৪ ট্রাক চোরাই চিনি জব্দ করা হয়।

এ ঘটনায় পরদিন পুলিশের এসআই মো. সালাহ উদ্দিন বাদী হয়ে জালালাবাদ থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন। মামলা নম্বর-০৫।

সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ে ভারত থেকে আসা চোরাই চিনি চোরাচালানের মধ্যে এটি হলো সবচেয়ে বড় চোরাচালান। ঘটনার পর চোরাকারবারী শনাক্ত করতে পুলিশ মাঠে নামলেও এর মূলহোতাদের এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি।

এ বিষয়ে জালালাবাদ থানার ওসির বরাত দিয়ে জানা যায়, আসামিদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছ।