১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ধর্ষকের পক্ষ নিচ্ছেন ডিএমপি কমিশনার

admin
প্রকাশিত ১৬ মার্চ, রবিবার, ২০২৫ ১৯:৪৩:৩৩
ধর্ষকের পক্ষ নিচ্ছেন ডিএমপি কমিশনার

Manual7 Ad Code

‘ধর্ষণ’ শব্দ ব্যবহার না করার অনুরোধের মাধ্যমে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএম‌পি) ক‌মিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বাস্তবে ধর্ষকের পক্ষ নিচ্ছেন বলে মনে করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেছেন, ডিএম‌পি ক‌মিশনারের এই বক্তব্য কোনো অবস্থায়ই গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁর এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করা উচিত, প্রত্যাহার করা উচিত।

আজ রোববার সকালে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে টিআইবির আয়োজনে মানববন্ধনে ‘নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করুন, এখনই!’ শীর্ষক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।

Manual1 Ad Code

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা থাকে তাঁদের আচরণে কথায়-বার্তায় আমরা নারীবান্ধব অবস্থা দেখতে পাই না, খুবই দুঃখজনক বিষয়। নারীর অধিকার নিশ্চিত করা বা নারীর অধিকার হরণের প্রতিরোধ করার দায়িত্ব যে প্রতিষ্ঠানের উপরে সবচেয়ে বেশি, সেই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা তথা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যখন গণমাধ্যমকে বলেন ধর্ষণ শব্দটা ব্যবহার না করার জন্য, তখন আমাদের অবাক হতে হয়; তাঁদের প্রতি, তাঁদের এই অবস্থানের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে হয়। কারণ এর মাধ্যমে বাস্তবে ডিএমপি কমিশনার ধর্ষকের পক্ষ নিচ্ছেন, ধর্ষককে সুরক্ষা দেওয়ার উপায় সৃষ্টি করে দিচ্ছেন, যা কোনো অবস্থায়ই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তার এই বক্তব্য প্রত্যাহার করা উচিত। একই সাথে তিনি আবার গণমাধ্যমকে বলেছেন, কম করে ধর্ষণের সংবাদ প্রকাশ করার জন্য। এই ধরনের অগ্রহণযোগ্য আচরণ কোনো অবস্থায়ই একজন পুলিশ কর্মকর্তার কাছে প্রত্যাশিত নয়।’

গতকাল শনিবার অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে ডিএম‌পি ক‌মিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী গণমাধ্যমকে ‘ধর্ষণ’ শব্দটি ব্যবহার না করার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, আমি দুটি শব্দ খুব অপছন্দ করি, এর মধ্যে একটি হলো ধর্ষণ। আপনাদের কাছে অনুরোধ, এটা ব্যবহার করবেন না। আপনারা ‘নারী নির্যাতন’ বা ‘নিপীড়ন’ বলবেন। আমাদের আইনেও নারী ও শিশু নির্যাতন বলা হয়েছে। যে শব্দগুলো শুনতে খারাপ লাগে, সেগুলো আমরা না বলি।

Manual4 Ad Code

তাঁর এই মন্তব্য নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেটিজেনরা পুলিশের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তার এমন মন্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তার এই মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন অনেকে।

Manual4 Ad Code

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমি গণমাধ্যমের কর্মীদেরকে আন্তরিকভাবে অনুরোধ করব আপনারা তাঁর (ডিএমপি কমিশনার) কথা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করুন এবং ধর্ষণ যখন ঘটবে অত্যন্ত জোরালোভাবে সেটিকে প্রচার করবেন, যাতে বিষয়টি মানুষের নজরে আসে। অপরাধ অপরাধই, খুনিকে তো আর আপনি চোর বলতে পারবেন না। পুলিশকে তো আমি আনসার বলতে পারব না, পুলিশ পুলিশই। বিগত সময়ে পুলিশ যেভাবে কলঙ্কিত হয়েছে, সে কারণে কি বাংলাদেশের কোনো মানুষ বলেছে পুলিশ শব্দটা ব্যবহার করা যাবে না। সেই পুলিশ কেমন করে ধর্ষণ ব্যবহার করা যাবে না— এই ধরনের বক্তব্য রাখতে পারে, সেটি আমার কাছে বোধগম্য নয়।’

বাংলাদেশের দণ্ডবিধি ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা ও ব্যবহার সুষ্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইংরেজি ‘রেইপ’ শব্দের বাংলা অর্থও ‘ধর্ষণ’ হিসেবেই স্বীকৃত। তাই, একজন শীর্ষ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তার এ ধরনের বক্তব্য বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে।

Manual5 Ad Code

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘আমি মনে করি, এই ধরনের পুলিশ কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠান থেকে যখন প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসেবে বক্তব্য দেন, তা যদি প্রতিষ্ঠানের সাংস্কৃতিক চর্চার প্রতিফলন হয় তাহলে আমাদের বাধ্য হয়ে বলতে হবে, শুধুমাত্র কিছু ব্যক্তির পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফলে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি, সেখানে কোনো পরিবর্তন হয় নাই। বিশেষ করে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার অভ্যন্তরে যারা আছেন, যারা দায়িত্বশীল অবস্থানে আছেন, তারা এ ধরনের কথাবার্তা যদি বলতে থাকেন এবং সেটাই যদি তারা প্রত্যাশা করেন এবং গণমাধ্যম যদি সেই কথাটা মেনে নেয়, তাহলে আমরা বলব যে, আসলে সত্যিকার অর্থে তারা রাষ্ট্রকে ভিন্ন পথে, ভুল পথে ধাবিত করছে।’