১৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৪ঠা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৮শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ধর্ষণ কাণ্ড ধামাচাপা দিতে চাপের মুখে বিয়ে করেন কনস্টেবল, অত:পর

admin
প্রকাশিত ০৬ আগস্ট, বুধবার, ২০২৫ ২২:১৭:৩১
ধর্ষণ কাণ্ড ধামাচাপা দিতে চাপের মুখে বিয়ে করেন কনস্টেবল, অত:পর

Manual3 Ad Code

পুলিশ কনস্টেবল মাহফুজুর রহমান ধর্ষণকাণ্ড ধামাচাপা দিতে চাপের মুখে বিয়ে করেন । কিন্তু বিয়ে পরবর্তী তিনি রূপ পাল্টে ফেলেন।

 

Manual3 Ad Code

 

 

 

তিনি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার গোরাগ্রামের জালাল উদ্দিনের ছেলে। বর্তমানে তিনি হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল থানায় পুলিশ কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত।

 

Manual3 Ad Code

 

 

 

 

 

স্ত্রীকে মারধোরসহ একাধিকবার যৌতুকের জন্য স্বামীর প্রতি নির্যাতনের অভিযোগ অভিযোগ দোলেন স্ত্রী তাছমিনা আক্তার। একই সাথে তিনি ভয়-ভীতি ও হুমকীসহ জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠায়। এই অবস্থার পরিত্রাণে তিনি আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

 

 

মামলার অভিযোগ সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

Manual5 Ad Code

কনস্টেবল স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগকারী স্ত্রী তাছমিনা বেগম। তিনি কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার নলবনিয়া গ্রামের নাম আব্দুল কাদিরের মেয়ে। অভিযুক্ত স্বামী পুলিশ কনস্টেবলের নাম মাহফুজুর রহমান।

গত রোববার সিলেটের অতিরিক্ত চিফ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বামী মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তাছমিনা বেগম। মামলায় তিনি জানান, ২০২১ সালে ১০ই অক্টোবর মাহফুজের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে মাহফুজ এক লাখ টাকা যৌতুকের জন্য তাকে নানা সময় মারধর করে। পরে তাছমিনা তার ব্যবহৃত স্বর্ণের চেইন ও আংটি বিক্রি করে স্বামীর হাতে ৪০ হাজার টাকা তুলে দেন। এতেও তার স্বামী সন্তুষ্ট না হওয়ায় তিনি এনজিও থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ তুলে স্বামীর হাতে দেন। তবু তার অর্থলোভী স্বামী তাতেও সন্তুষ্ট হয় না। হবিগঞ্জের বাহুবলের ভাড়া বাসায় নিয়ে যৌতুকের জন্য খুব বেশি মারধর করেন। এতে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে পিতা আব্দুল কাদির এসে বাধা দেন। এতে আসামি ক্ষিপ্ত হয়ে তার পিতাকে অপমান করে। সর্বশেষ গত ৩রা জুন রাতে মাহফুজ নেশাগ্রস্ত হয়ে ৭০ হাজার টাকা যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। একপর্যায়ে অকথ্য নির্যাতনও করা হয়। শেষে তাছমিনা তার পিতার বাড়ি চলে যান বলে মামলায় উল্লেখ করেন।

 

 

Manual8 Ad Code

 

 

তাছনিমার মামলার লিগ্যাল এইডের নিযুক্ত আইনজীবী এডভোকেট ফয়েজ আহমদ জানিয়েছেন, তাছনিমার পক্ষ থেকে আদালতে যে এজাহার দাখিল করা হয়েছিল সেটি গ্রহণ করা হয়েছে। শুনানি শেষে আদালত একমাত্র আসামি মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। এদিকে, মামলা দায়েরের আগে গত ২৯শে জুলাই সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তাছনিমা বেগম। সেই অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, ২০২১ সালে রাঙ্গামাটি কলেজে পড়ার সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে তৎকালীন ঢাকার এসপিবিএন-১ এ কর্মরত মাহফুজের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ওই সময় মাহফুজ তাকে ঢাকায় তার মামার বাসায় নিয়ে তিনদিন আটকে রেখে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। পরে ধর্ষণের ঘটনা থেকে বাঁচতে তিনি ৩ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে বিয়ে করেন। বিয়ের সময় মাহফুজের মামাও উপস্থিত ছিলেন। বিয়ের পর স্বামী মাহফুজ তাকে যৌতুকের টাকার জন্য প্রায় সময় মারধর করতেন। সিলেটে বদলি হয়ে আসার পর সেখানে নিয়ে এসেও মারধর করতেন।

অভিযোগে তাছমিনা আরও উল্লেখ করেন, বাহুবল থানার পাশে এক ভাড়া বাসায় রেখে কয়েক মাস আগে তিনি বাড়িতে চলে যান। কোনো খোঁজখবর না পেয়ে তিনিও ওই সময় মাহফুজের খোঁজে গোয়াইনঘাটের গোরাগ্রামে যান। কিন্তু বাড়িতে গেলে মাহফুজ জানায়, ‘তাকে (স্ত্রী) চিনে না’। পরবর্তীতে বিষয়টির সুরাহার জন্য তিনি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহাবউদ্দিনের দ্বারস্থ হন। এসময় চেয়ারম্যান বিষয়টির সমাধানের চেষ্টা করেও পারেননি। পরে আইনের আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দেন। এ ঘটনার পর ফের মাহফুজ তার সঙ্গে যোগাযোগ করে বাহুবলের বাসায় যান। আগের মতোই যৌতুকের টাকার জন্য চাপ ও নির্যাতন করতে থাকে। একপর্যায়ে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলে এবং বাসা থেকে তাড়িয়ে দেয়। এ ঘটনার পর তিনি হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারি কলেজের পাশে তার এক বান্ধবীর বাসায় আশ্রয় নেন। তাছমিনা বেগম জানিয়েছেন, তার স্বামী বহু নারীতে আসক্ত হয়ে পড়েছেন। তিনি বর্তমানে আরেকটি বিয়ে করতে চান। এবং সেই বিয়ের সুযোগ দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, বিয়ে করলেও তাকে এখনো তার স্বামী বাড়িতে নিয়ে যায়নি। ভাড়া বাসায় রেখে বসবাস করছিলেন। তিনি বাড়ি চলে গেলে তার সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হয়েছে। শুধু সে নয়, তার পরিবার থেকেও তিনি ভালো আচরণ পাননি। এ কারণে ন্যায়বিচার পেতে এখন তিনি আইনি লড়াইয়ে নেমেছেন। এ ব্যাপারে কনস্টেবল মাহফুজের সঙ্গে কথা বলতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি।

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত স্বামী মাহফুজুর রহমান জানান, স্ত্রীর ব্যবহারে তিনি অতিষ্ট। বিয়ের আড়ে থেকেই সে ছিল উশৃঙ্খল জীবনের অধিকারী। তার পরিবারও মেয়ের এই আচরণ সম্পর্কে অবগত। তিনি বলেন, সব কিছু সহ্যের বাহিরে চলে যাওয়ায় গেল মাসের ২৬ জুলাই তিনি রেজিস্ট্রিযোগে তালাকনামা পাঠিয়েছেন। স্ত্রীর সকল অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, তার সাজানো নাটকে আগেও অনেক মানুষ নি:স্ব হয়েছেন। এটি নতুন কিছু নয়।

তবে, স্থানীয় রুস্তুমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাবউদ্দিন জানিয়েছেন- গত বছর ওই মেয়েটি মাহফুজের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে তার কাছে এসেছিল। ওই সময় তিনি মাহফুজের মাকে ডেকে আনার পর মেয়েটিকে তারা বাড়িতে নিয়ে যায়। কিছুদিন বাড়িতে থাকার পর যখন মেয়েটি চলে যায় তখন মাহফুজের মা জানিয়েছিলেন- ওই মেয়েটি তাদের বাড়িতে থাকতে চায় না। তাদের সঙ্গে মেয়েটির বনিবনা হচ্ছিলো না। এ কারণে চলে গেছে। এবারো মেয়েটি আবার এসেছিল।

চেয়ারম্যান জানান, মাহফুজের পরিবার বিষয়টির একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান চেয়েছিল। তারা মেয়েটির ক্ষতিপূরণ দিয়ে বিষয়টির সমাধানের চেষ্টাও করেন। কিন্তু মেয়ের তরফ থেকে সাড়া না পাওয়ায় সেটি আর সমাধান হয়নি। এখন আদালতই বিষয়টি দেখবে।

সূত্র – প্রথম সিলেট