নিজস্ব প্রতিবেদক:
নারীদের রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ‘ব্যর্থ হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন কমিশনের সদস্য ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার।
আজ শনিবার (৪ অক্টোবর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “নারীদের রাজনৈতিক অধিকার দিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ব্যর্থ হওয়ায় নারীরা পরাজিত হয়নি; পরাজিত হয়েছি আমরা। জয়ী হয়েছে পুরুষতন্ত্র।”
তিনি আরও বলেন, “ঐকমত্য কমিশনে পাঁচ দিন ধরে দফায় দফায় নারী অধিকার নিয়ে আলোচনা করেও নারীর অধিকারগুলো নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। নারীর ন্যায়সংগত অনেক দাবি উপেক্ষিত হয়েছে। এটা ইচ্ছাকৃত নয়, তবে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। রাজনৈতিক সংস্কৃতি নারীদের অগ্রগতির পথে বাধা তৈরি করছে। নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, যা সমাজের জন্য উদ্বেগজনক।”
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের জাতীয় সমন্বয়ক সৈয়দা আহসানা জামান।
প্রবন্ধে চলতি বছরের প্রথম আট মাসের কন্যাশিশুর প্রতি নির্যাতন ও সহিংসতার চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, এই সময়ে সারা দেশে ৩৯০ জন কন্যাশিশু ধর্ষণ ও দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে, আর আত্মহত্যা করেছে ১০৪ জন শিশু। কন্যাশিশু বলতে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বোঝানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, এ সময়ের মধ্যে ৩৪ জন শিশু অপহরণ ও পাচারের শিকার হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৮ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া ৮৩ জন কন্যাশিশু খুন হয়েছে এবং ৫০ জনের মৃত্যু রহস্যজনকভাবে ঘটেছে, যার সঠিক কারণ জানা যায়নি।
গত পাঁচ বছরে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৪১৪ জন কন্যাশিশু, ধর্ষণের শিকার ২ হাজার ৪৯৪ জন, হত্যার শিকার ৬৭৯ জন এবং অপহরণ ও পাচারের শিকার হয়েছে ৪৩৩ জন কন্যাশিশু— এমন তথ্যও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
রাষ্ট্রের প্রতি নারীবান্ধব পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানিয়ে সৈয়দা আহসানা জামান বলেন, “রাষ্ট্র সংস্কারের মধ্য দিয়ে এমন পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে, যাতে একজন নারী বা কন্যাশিশু যেকোনো সময়ে কোনো সহিংসতার ভয় ছাড়াই বাইরে যেতে পারেন, নির্বিঘ্নে পথ চলতে পারেন। একই সঙ্গে কর্মক্ষেত্রেও নারীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।”