নির্যাতনের বিরুদ্ধে একজন শিক্ষকের আর্তনাদ কেঁপে উঠল খাদিমপাড়া ইউনিয়ন

প্রকাশিত: ১০:১০ অপরাহ্ণ, জুলাই ৪, ২০২৫

নির্যাতনের বিরুদ্ধে একজন শিক্ষকের আর্তনাদ কেঁপে উঠল খাদিমপাড়া ইউনিয়ন

নির্যাতনের বিরুদ্ধে একজন শিক্ষকের আর্তনাদ কেঁপে উঠল খাদিমপাড়া ইউনিয়ন

 

সিলেট শহরতলীর ৪ নং খাদিমপাড়া ইউনিয়নের জালালনগর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশীর হয়রানির শিকার হয়ে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে কাঁদলেন এক শিক্ষক। তামাবিল মহাসড়কের বটেশ্বর-জালালনগর সড়কের মোড়ে শুক্রবার (৪ জুলাই) সকালে আয়োজিত মানববন্ধনে এ চিত্র দেখা যায়।

জহিরিয়া মোম্বাউল উলুম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর ব্যানারে আয়োজিত এই কর্মসূচির কেন্দ্র ছিলেন ওই বিদ্যালয়েরই সিনিয়র শিক্ষক গোকুল চন্দ্র নাথ। মানববন্ধন শেষে এক আবেগঘন সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “দীর্ঘ ১০ বছর ধরে আমার প্রতিবেশী আজিজুর রহমান, যিনি নিজেকে প্রবাসী ব্যারিস্টার পরিচয় দেন, আমাদের পরিবারকে একের পর এক মিথ্যা মামলা ও নানা কায়দায় হয়রানি করে আসছেন।

 

তিনি জানান, এসব মিথ্যা মামলার কারণে তার ৭৩ বছর বয়সী অসুস্থ, অবসরপ্রাপ্ত পিতা কেতকী চন্দ্র নাথসহ পরিবারের সদস্যরা চরম মানসিক ও আর্থিক দুরবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি বসতভিটার পাশ দিয়ে চলাচলের একমাত্র সরকারি রাস্তা দখলের চেষ্টাও করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাড়ির পাশ দিয়ে খাল কেটে মাটি ভরাট করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করা হয়েছে, যাতে বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যায়। একের পর এক মামলা, জিডি ও অভিযোগের বেশিরভাগই আদালতে খারিজ হলেও প্রতিপক্ষের হয়রানি থামেনি।

এমনকি স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারের কথাও তারা অগ্রাহ্য করছে। প্রশাসনের কাছে আমার একটাই আবেদন এই অবিচারের অবসান হোক, বলেন শিক্ষক গোকুল চন্দ্র নাথ।

 

মানববন্ধনে উপস্থিত থেকে ৪নং খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বদরুল ইসলাম আজাদ বলেন, বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধানের চেষ্টা হয়েছে বারবার, কিন্তু প্রতিপক্ষ কোনো সমঝোতায় রাজি হয়নি। একজন শিক্ষকের এমন দুর্দশা মেনে নেওয়া যায় না। ইউনিয়ন পরিষদে দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রাম আদালতের মাধ্যমে দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হবে।

 

এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সাবেক সভাপতি আতিকুর রহমান, ছাত্র ফোরামের সিনিয়র সভাপতি আলাউদ্দিন আলাল, সেক্রেটারি লিয়াকত আলী মিঠু, সাবেক মেম্বার সাইদুর রহমান এনাম, ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম, ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ফয়জুল হক, ক্রীড়ামোদী ফয়েজ আহমেদ ও ব্যবসায়ী আকবর আলীসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।

সিলেট জজকোর্টের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট সমীর উদ্দিন বলেন, মামলাগুলোর ধরন, সংখ্যা ও পরিণতি বিশ্লেষণ করলেই স্পষ্ট হয়, এগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। একজন শিক্ষকের পরিবারকে টার্গেট করে বছরের পর বছর এমন হয়রানি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

অ্যাডভোকেট রঞ্জন ঘোষ বলেন, “শিক্ষক সমাজের বাতিঘর। গোকুল স্যারের মতো একজন সম্মানিত শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার মানে হলো সমাজকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সরকার মামুনুর রশীদ বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন ইউএনও বরাবর জমা দেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই উভয় পক্ষকে শুনানির জন্য ডাকা হবে।

এলাকাবাসীরা জানান, আগামী দুই দিনের মধ্যে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ না নেওয়া হলে তারা আরও কঠোর কর্মসূচির দিকে যেতে বাধ্য হবেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ নিউজ