
বিদেশি বিচারব্যবস্থায় মার্কিন হস্তক্ষেপ নিয়ে নতুন বিতর্ক
তেল আভিভ/ওয়াশিংটন, বুধবার: ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর চলমান দুর্নীতি মামলায় তাঁকে ‘পূর্ণ ক্ষমা’ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হেরজগের উদ্দেশে পাঠানো এক চিঠিতে ট্রাম্প এই আহ্বান জানান।
ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে প্রকাশিত চিঠিতে ট্রাম্প লেখেন,
“আমি আপনাকে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সম্পূর্ণরূপে ক্ষমা করার আহ্বান জানাচ্ছি। যুদ্ধকালীন তিনি একজন শক্তিশালী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন তিনি ইসরায়েলকে শান্তির পথে এগিয়ে নিচ্ছেন।”
বিশ্লেষকেরা বলছেন, অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিচারিক প্রক্রিয়ায় এমন প্রকাশ্য হস্তক্ষেপ অত্যন্ত অস্বাভাবিক হলেও ট্রাম্পের ক্ষেত্রে এটি নতুন নয়।
সিএনএন জানিয়েছে, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের শুরুতে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে তিনটি মামলায় জালিয়াতি, ঘুষ ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছিল। তবে নেতানিয়াহু নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বারবার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
চিঠিতে ট্রাম্প আরও লেখেন,
“আমি ইসরায়েলি বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতাকে শ্রদ্ধা করি, তবে বিশ্বাস করি বিবির (নেতানিয়াহু) বিরুদ্ধে মামলাটি রাজনৈতিক ও অযৌক্তিক। আমরা একসঙ্গে ইরানের বিরুদ্ধে লড়েছি, তাই তাঁকে এই অবস্থায় দেখা কষ্টদায়ক।”
ইসরায়েলি আইনে প্রেসিডেন্টের ক্ষমা করার ক্ষমতা রয়েছে, তবে তার জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তি বা তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক আবেদন প্রয়োজন। এখন পর্যন্ত নেতানিয়াহু বা তাঁর ঘনিষ্ঠ কেউ এমন আবেদন জমা দেননি।
হেরজগের দপ্তর জানিয়েছে, “আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে শ্রদ্ধা করি এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও মধ্যপ্রাচ্যের শান্তির জন্য তাঁর ভূমিকা প্রশংসনীয়। তবে ক্ষমার আবেদন অবশ্যই নির্ধারিত পদ্ধতি অনুযায়ী জমা দিতে হবে।”
ট্রাম্পের চিঠি ইসরায়েলের রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
কট্টর ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গাভির এক্সে লিখেছেন, “প্রেসিডেন্ট হেরজগ, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কথা শুনুন!”
অপরদিকে বিরোধী দলের নেতা ইয়াইর লাপিদ বলেন, “ইসরায়েলি আইনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পাওয়ার শর্ত হলো দোষ স্বীকার ও অনুশোচনা।”
নেতানিয়াহু ইসরায়েলের ইতিহাসে প্রথম ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী, যিনি পদে থাকাকালীন ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি। তাঁর বিচার শুরু হয় ২০২০ সালের মে মাসে, যা এখনও চলছে এবং আরও কয়েক বছর স্থায়ী হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর আগে ট্রাম্প অন্যান্য দেশেও বিচারপ্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপমূলক মন্তব্য করেছেন।
গত জুলাইয়ে তিনি ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোর বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া বন্ধের আহ্বান জানান।
এপ্রিলে তিনি ফরাসি রাজনীতিক মেরিন লো পেনের পক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে তাঁর বিরুদ্ধে রায়কে ‘উইচ হান্ট’ আখ্যা দেন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক এই চিঠি আবারও তাঁর আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ব্যতিক্রমী ও বিতর্কিত ভূমিকাকে সামনে এনেছে।