স্বাস্থ্য খাতে সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী ছাত্ররা আজ মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে বরিশাল নগর ভবনের সামনে জড়ো হলে সেখান থেকে কমপক্ষে সাতজনকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। এ সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের ধস্তাধস্তি হয়। আন্দোলনকারীরা সহপাঠীদের আটক ঠেকাতে স্লোগান দিয়ে পুলিশের পিকআপে উঠে পড়েন। পরে তাঁরা আটক ব্যক্তিদের উদ্ধারে থানায় জড়ো হন। অভিযোগ উঠেছে, আটক ব্যক্তিদের বেধড়ক মারধর ও নারী শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করেছে পুলিশ।
যদিও কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান দাবি করেছেন, চিকিৎসকদের ওপর হামলার মামলায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছেন তাঁরা। এদিকে শেবাচিম হাসপাতালের চিকিৎসকেরা ৪৮ ঘণ্টা ভোগান্তি শেষে আজ বেলা ৩টা থেকে কর্মস্থলে ফিরেছেন।
আন্দোলনকারীদের মারধর।
জানা গেছে, আজ দুপুরে পুলিশের হাতে আটক শিক্ষার্থীরা হচ্ছেন হুসাইন আল সুহান, তাম্মিম, তাসফিম আরুহ, আদিব বিন ওয়ালিদ, রোহান, নাফিজ ও মেহেদী হাসান মুন্না। তাঁদের মধ্যে সুহানকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে অন্যদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
Manual3 Ad Code
আটক শিক্ষার্থী তাম্মিম পুলিশের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে বলেন, ‘আমরা নগর ভবনের সামনে জড়ো হচ্ছিলাম। হঠাৎ পুলিশ এসে সোহানকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল। আমরা যখন বাধা দিই, তখন সেখানে নারী পুলিশ ছিল না। পুরুষ পুলিশ আমার বিভিন্ন জায়গায় স্পর্শ করে।’
তাম্মিম আরও বলেন, ‘পরে আমাদের গাড়িতে তুলে রূপাতলীস্থ মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনসে নিয়ে যায়। সেখানে ওসি মিজান গালিগালাজ করে। অন্য পুলিশ সদস্যরা আমাদের গাড়ি থেকে ধাক্কা মেরে নামায়। সুহানকে ভেতরে ঢুকিয়ে বেদম মারে। আমি বাধা দিতে গেলে পুরুষ পুলিশ সদস্যরা আমাকে চুল ধরে মারধর করে। পরে তারা সুহানকে রেখে অন্য একটি গাড়িতে আমাদের আলাদা তুলে দেয়।’
আন্দোলনের সংগঠক তাহমিদ ইসলাম দাইয়ান বলেন, আজ তাঁরা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিতে যাচ্ছিলেন। এ জন্য তাঁরা নগরীর ফজলুল হক এভিনিউ সড়কের নগর ভবনের সামনে অবস্থান নেন। সেখান থেকে পুলিশ সমন্বয়ক সুহানকে নিয়ে গেছে। এ সময় বাধা দিতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। এই অবস্থায় আরও কয়েকজন প্রতিবাদস্বরূপ পিকআপে উঠে পড়েন। আটক শিক্ষার্থীদের খোঁজে তাঁরা কোতোয়ালি মডেল থানায়ও যান।
Manual8 Ad Code
আন্দোলনকারীদের মারধর।
আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক মহিউদ্দিন রনি বলেন, ‘ডিসির প্রতিনিধি শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য বলেন। শান্তিপূর্ণভাবে শিক্ষার্থীরা সবাই একসঙ্গে স্মারকলিপি দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে যেতেই পুলিশ শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত দেয় এবং আমাদের কয়েকজন শিক্ষার্থী ভাই-বোনকে তুলে নিয়ে গেছে।’
এর আগে শেবাচিম হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী বাহাদুর শিকদার গতকাল সোমবার রাতে বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় স্বাস্থ্য খাত সংস্কার আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক মহিউদ্দিন রনিকে একমাত্র নামধারী ও অজ্ঞাতনামা আরও ৮০ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে জনতার ওপর হামলা, হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাতসহ মারধর করে গুরুতর ও সাধারণ জখম এবং হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
Manual2 Ad Code
এ ব্যাপারে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মচারীদের ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলায় হুসাইন আল সুহান নামের আন্দোলনকারী একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া হুসাইন আল সুহান নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা বলে দাবি করেছেন ওসি মিজান।
তিনি বলেন, আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্রলীগের এক ক্যাডারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তারের সময় স্বাস্থ্য খাত আন্দোলনের কয়েকজন সদস্য জোর করে টহল পিকআপে উঠেছিলেন। তাঁদের পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
Manual8 Ad Code
আন্দোলনকারীদের মারধর।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীরা যে অভিযোগ করছেন, তা সঠিক নয়। ঘটনাস্থল থেকে সুহান নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, অন্যরা নিষেধ করা সত্তেও পুলিশের গাড়িতে উঠে গেছেন। যাঁদের পরে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর সুহানের অতীত রেকর্ড খারাপ।