
ইংরেজিতে একটি প্রচলিত কথা আছে—‘Money talks’, অর্থাৎ টাকা কথা বলে। কিন্তু সত্যিই কি এই কাগজের টুকরো কথা বলে? বাস্তবতা হলো, টাকার পাশাপাশি মানুষের পোশাকও ফিসফিস করে কথা বলে—যা বলে দেয় একজনের রুচি, আত্মবিশ্বাস এবং ব্যক্তিত্বের পরিচয়।
অনেকে দামি ব্র্যান্ডের পোশাক পরেও প্রভাব ফেলতে পারেন না, আবার কেউ কেউ সাধারণ পোশাকেও অভিজাত ও আত্মবিশ্বাসী দেখান। এখানেই শুরু হয় রুচিবোধ, পরিশীলন ও ফ্যাশন সচেতনতার আসল পরীক্ষা।
ভালো ফিটিংয়ের পোশাকেই আসল সৌন্দর্য। দামি না হলেও যদি পোশাকের মাপ সঠিক হয়, তা আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। অপরদিকে, মাপ ভুল হলে হাজার টাকার পোশাকও মানহীন দেখায়। তাই সাধারণ পোশাকও টেইলার্সের কাছে নিয়ে সামান্য ঠিকঠাক করিয়ে নিলে সেটি দেখতে হাই-এন্ড ডিজাইনার আউটফিটের মতো লাগতে পারে।
দামি লোগো বা ব্র্যান্ডের নাম না থাকলেও আত্মবিশ্বাসই প্রকৃত স্টাইলের প্রতীক। সংযমই শ্রেষ্ঠত্বের প্রকাশ। যেমনটি বলা হয়—“Money shouts, wealth whispers.”
যাঁরা মনে মনে ধনী, তাঁরা পরিচিত হতে নয়, বরং সম্মানিত হতে পোশাক পরেন।
বেইজ, কালো, সাদা, নেভি, ধূসর—এই রংগুলো কখনো পুরোনো হয় না। নিরপেক্ষ রঙ শান্ত ও পরিশীলিত ভাব প্রকাশ করে, যা অবচেতনভাবে ক্ষমতা ও স্থিতির সঙ্গে যুক্ত। মাঝে মাঝে একটি উজ্জ্বল রঙ যোগ করা যেতে পারে, তবে বাকি পোশাক সংযত রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ।
লিনেন, তুলা, উল—প্রাকৃতিক ফ্যাব্রিকের নিজস্ব টেক্সচার আছে। এগুলো শুধু দেখতেই নয়, স্পর্শেও ভালো লাগে। সিনথেটিক কাপড় দ্রুত কুঁচকে যায় ও শরীরে আটকে থাকে, যা স্বাচ্ছন্দ্য নষ্ট করে। তাই দাম নয়, কাপড়ের মান চিনতে শেখাটাই আসল কৌশল।
ইস্তিরি করা পোশাক, পরিষ্কার জুতা, গোছানো চুল ও সতেজ নিশ্বাস—এসব ছোট ছোট বিষয়ই আত্মসম্মানের ইঙ্গিত দেয়। যা আছে, সেটির যত্ন নেওয়ার মধ্যেই প্রকৃত সম্পদ লুকিয়ে।
একটি ভালো ঘড়ি, মিনিমালিস্ট সানগ্লাস বা চামড়ার ব্রেসলেট—অল্প কিছুর মধ্যেই পরিপূর্ণতা আসতে পারে। ট্রেন্ডি নয়, স্থায়ী মানসম্পন্ন অ্যাকসেসরিজ বেছে নেওয়াই উত্তম।
প্রথম দর্শনেই মানুষ জুতার দিকে তাকায়। নোংরা বা পুরোনো জুতা আপনার পুরো সাজ নষ্ট করতে পারে, কিন্তু পরিষ্কার ও ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষিত জুতা সাশ্রয়ী পোশাককেও উন্নত করে তুলতে পারে।
লেয়ারিং—একটি শিল্প। সঠিকভাবে করা হলে এটি আভিজাত্য বাড়ায়। যেমন একটি সাদা শার্টের উপর সোয়েটার, তার সঙ্গে হালকা কোট। রঙ ও টেক্সচারের ভারসাম্য রক্ষা করলেই আপনি হয়ে উঠবেন অনন্য।
পোশাক যতই ভালো হোক, আত্মবিশ্বাস ছাড়া সব ব্যর্থ। স্থির দেহভঙ্গি, ধীর চলাফেরা ও চোখে চোখ রেখে কথা বলার অভ্যাস একজন মানুষকে মার্জিত ও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।
রুচিশীলতা মানে দামি পোশাক নয়, বরং নিজেকে যত্নসহকারে ও সম্মানের সঙ্গে উপস্থাপন করা। পোশাক, আচরণ ও আত্মবিশ্বাস—এই তিনের সমন্বয়েই একজন মানুষ হয়ে ওঠেন প্রকৃত অর্থে ‘ভালোভাবে পরিহিত’।