ঢাকা (১৮ ডিসেম্বর ২০২৫): আজ বৃহস্পতিবার, প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বিদায়ী সংবর্ধনায় বলেছেন, “জুলাই বিপ্লব সংবিধানকে উল্টে দেওয়ার প্রস্তাব করেনি, বরং এর সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততাকে শুদ্ধ করার প্রস্তাব করেছিল।” তিনি আরও বলেন, “বিচার বিভাগের শক্তি কোনো একক পদে নয়, বরং সততা, ভারসাম্য ও দূরদর্শিতার সঙ্গে ন্যায়বিচার পরিবেশনে আমাদের সম্মিলিত সংকল্পের মধ্যে নিহিত।”
এদিন প্রধান বিচারপতির বিদায় সংবর্ধনা আপিল বিভাগের ১ নম্বর বিচারকক্ষে (প্রধান বিচারপতির এজলাস) অনুষ্ঠিত হয়। এই দিনটি ছিল তাঁর শেষ বিচারিক কর্মদিবস, কারণ ২৭ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতির বয়স ৬৭ বছর পূর্ণ হবে এবং সংবিধান অনুযায়ী তিনি অবসরে যাবেন। তবে ওই সময় সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ ছুটি থাকায় আজ ছিল তাঁর শেষ কার্যদিবস।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন:
এজলাসে উপস্থিত ছিলেন আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা, আদালতের বিপুলসংখ্যক আইনজীবী এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। অনুষ্ঠানের শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান প্রধান বিচারপতির কর্মময় জীবন তুলে ধরে বক্তব্য দেন। এরপর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন তাঁর বক্তব্যে প্রধান বিচারপতির ভূমিকার প্রশংসা করেন।
প্রধান বিচারপতির বক্তব্য:
প্রধান বিচারপতি তাঁর বিদায়ী বক্তৃতায় বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের পর অনিশ্চিত সময়গুলোতে একমাত্র বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ কার্যকর সাংবিধানিক অঙ্গ হিসেবে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিল।” তাঁর মতে, বিচারের স্বাধীনতা ও আদালতের ভূমিকা দেশের গণতন্ত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং তিনি এসব সময় দৃঢ়ভাবে বিচার বিভাগকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য:
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান তাঁর বক্তৃতায় প্রধান বিচারপতির “প্রাতিষ্ঠানিক সততার এক সুদক্ষ কারিগর” হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “আপনি এসেছিলেন এক উত্তপ্ত বিপ্লবের ঋতুতে আর বিদায় নিচ্ছেন বিজয়, শান্তি ও স্বচ্ছতার এক অনন্য ঋতুতে।” তিনি আরও বলেন, “আপনি যে স্বাধীন সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় ও বিচার বিভাগীয় সংস্কারের বীজ বুনে যাচ্ছেন, আমরা তাকে মহীরুহে পরিণত করব।”
সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি মাহবুব উদ্দিন খোকনের বক্তব্য:
মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে বলেন, “আপনি নাগরিকদের সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। সমাজের সব স্তরে বৈষম্য দূর করার ব্যাপারে আপনি ছিলেন অতন্দ্র প্রহরী।”
সাবেক প্রধান বিচারপতির অবদান:
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে বিচার বিভাগ সাংবিধানিক দায়িত্বের প্রতি গভীর মনোযোগ এবং সুপ্রিম কোর্টের স্বচ্ছতা ও স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেছে। তাঁর সময়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচার বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কাজ এবং স্বাধীনতা বজায় রাখা হয়েছিল।