
ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় পর্যন্ত পদযাত্রা আয়োজনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া তিন তরুণীকে বেকসুর খালাস দিয়েছে সিঙ্গাপুরের একটি আদালত। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) আদালত তাঁদের বিরুদ্ধে আনা ‘অবৈধ মিছিল আয়োজনের’ অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলে রায় দেন।
বেকসুর খালাস পাওয়া তিন তরুণী হলেন সামাজিক সংগঠক মোসাম্মদ সাবিকুন নাহার, কনটেন্ট ক্রিয়েটর সিতি আমিরাহ মোহাম্মদ আসরোরি এবং অধিকারকর্মী কোকিলা আন্নামালাই। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ইস্তানার আশপাশে পুলিশের অনুমতি ছাড়া ফিলিস্তিন সমর্থনে পদযাত্রা আয়োজনের অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। প্রায় ৭০ জন মানুষ ওই পদযাত্রায় অংশ নেন এবং ফিলিস্তিনি প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে তরমুজের রঙে রাঙানো ছাতা বহন করেন।
রায়ে বিচারক বলেন, অভিযুক্ত তিন নারী জানতেন না যে ইস্তানার চারপাশের এলাকা একটি সংরক্ষিত অঞ্চল। তাঁরা সাধারণ একটি ফুটপাত ব্যবহার করেছিলেন এবং সেখানে কোনো নিষেধাজ্ঞার চিহ্ন ছিল না। বিচারক মন্তব্য করেন, “প্রমাণ থেকে স্পষ্ট, তাঁরা তিনজনই আইন ভাঙা থেকে নিজেদের বিরত রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন।”
দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁদের প্রত্যেকের ১০ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার জরিমানা বা ছয় মাসের কারাদণ্ড হতে পারত।
রায়ের পর আদালতের বাইরে সমর্থকদের সঙ্গে তিন তরুণী উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। অধিকারকর্মী কোকিলা আন্নামালাই বিবিসিকে বলেন, “এই অপ্রত্যাশিত রায় সিঙ্গাপুরের অধিকারকর্মীদের নতুন শক্তি ও আশা দেবে। আমরা শাস্তির জন্য প্রস্তুত ছিলাম, কিন্তু খালাস পাওয়াটা সত্যিই বিস্ময়কর।”
এ মামলাটি সিঙ্গাপুরজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। শুনানির সময় ফিলিস্তিনি পতাকার রঙে পোশাক ও কেফিয়াহ স্কার্ফ পরে তাঁদের আদালতে উপস্থিতি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
সিঙ্গাপুরে জনসমাবেশের বিষয়ে কঠোর আইন রয়েছে; কোনো ধরনের বিক্ষোভ বা প্রচারণার জন্য পুলিশের অনুমতি বাধ্যতামূলক। সরকার দাবি করে, এই নিয়ম শান্তি ও ঐক্য বজায় রাখতে সহায়ক। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এটি মূলত বাক্স্বাধীনতা দমনের কৌশল।
এদিকে সিঙ্গাপুরের প্রসিকিউশন অফিস জানিয়েছে, তারা আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে। পাশাপাশি ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ-সম্পর্কিত অন্যান্য অনলাইন ও অফলাইন কার্যক্রমের বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু হয়েছে।