১৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৪ঠা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৮শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ফেসবুকে প্রেম,অতঃপর, বিয়ে ৭১ বছরের বর ৩১ বছরের কনে?

admin
প্রকাশিত ২৬ মার্চ, রবিবার, ২০২৩ ২০:২০:৪০

Manual2 Ad Code

ফেসবুকে প্রেম,অতঃপর, বিয়ে ৭১ বছরের বর ৩১ বছরের কনে?

 

স্টাফ রিপোর্টারঃ- প্রেমে পড়ার আসলে কোনো বয়স নেই। এ কথাটিই যেন আরেকবার প্রমাণ করলেন বাগেরহাটের রামপাল সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক শওকত আলী হাওলাদার। দীর্ঘ দুই বছর ধরে চলে প্রেমকে পরিণয়ে রূপ দিয়েছেন ৭১ বছরের এ অধ্যাপক। কনের বয়স ৩১ বছর।

Manual4 Ad Code

 

গত ১৮ মার্চ জাঁকজমকভাবে বিয়ে হয় তাদের। শুধু তাই নয়, বিয়ে করতে সহযাত্রীদের নিয়ে বর কনেবাড়িতে ছুটে গেলেও এক্ষেত্রে হয়েছে ঠিক উল্টো। কনে তার সহযাত্রীদের নিয়ে হাজির হন বরের বাড়িতে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

Manual3 Ad Code

 

পারিবারিক সূত্র জানায়, চাকরিকালে শওকত আলীকে বিয়ে দেওয়ার জন্য পারিবারিকভাবে বিভিন্ন জায়গায় কনে দেখা হয়। কিন্তু কনে পছন্দ না হওয়া এবং কনের পরিবার তার পরিবারের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন মনে করার কারণে তার বিয়ে করা হয়ে ওঠেনি। একপর্যায়ে তিনি বিয়ে না করে চিরকুমার হয়ে থাকার বিষয়টি পরিবারকে জানিয়ে দেন। তার এমন সিদ্ধান্তে পরিবার আর নতুন করে বিয়ের চাপ দেয়নি তাকে।

 

কলেজে অধ্যাপনা থেকে অবসর নিয়ে রামপাল উপজেলার হুড়কা ইউনিয়নের হুড়কা এলাকায় চিংড়ির ঘের ব্যবসায়ে জড়িয়ে পড়েন। এরপর থেকে ঘেরই হয়ে ওঠে তার কাছে সংসার। সেই ঘের দিয়ে তিনি সম্পদের বিস্তার ঘটিয়েছেন। কিনেছেন ৭০-৮০ বিঘা জমি। হুড়কায় তার রয়েছে ১০ বিঘার একটি বাগান বাড়ি। নিজের আয়ের অর্থ দিয়ে স্থানীয় অনেক ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তিনি। মোংলার কুমারখালী এলাকার বিএনপি নেতা আব্দুল হালিম খোকন, মোংলা কলেজের অধ্যাপক শ্যামা পদ ও ইউনুস আলী স্কুলের শিক্ষক সুজিত মণ্ডলকে তার খরচে রামপালে লেখাপড়া শিখিয়েছেন অধ্যাপক শওকত আলী।

 

শওকত আলীরা ৮ ভাই ও ৭ বোন। সবাই শিক্ষিত। তিনি ছাড়াও তার পরিবারে অধ্যাপকসহ সরকারি চাকরিজীবী রয়েছেন। আট ভাইয়ের মধ্যে শওকত আলী মেজ। বড় ভাই সরকারি চাকরি করেন। ছোট ভাই একজন অধ্যাপক।

Manual7 Ad Code

 

শিক্ষাজীবন থেকেই পরিবার থেকে আলাদা থাকতেন শওকত আলী। পড়াশোনার জন্য জীবনের বড় সময় কাটিয়েছেন খুলনায়। রামপাল সরকারি কলেজে চাকরিতে ঢুকে যৌবনের বড় অংশ কেটে যায়। পরে চাকরি ছেড়ে লেগে যান ঘের ব্যবসায়। ছিল পরিবহন ব্যবসাও।

 

পরিবারের সদস্যরা জানান, বয়স যখন ৭০ তখন নিজ থেকে একাকিত্ব অনুভব করতে থাকেন অধ্যাপক শওকত আলী। একাকিত্ব কাটাতে নিজেই পথ খুঁজতে থাকেন। এরই মধ্যে ফেসবুকে তার সঙ্গে পরিচয় হয় মোংলার মিঠাখালী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জাফর হাওলাদারের মেয়ে শাহিদা পারভীন নাজমার। নাজমার আগের স্বামী ক্যানসারে মারা যান। একটি মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়িতেই থাকতেন। এরপর তাদের সম্পর্ক গভীর হয়ে উঠলে শওকত তার পরিবারকে নাজমাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত জানান। পরে পরিবার বিয়ের আয়োজন করে।

 

পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে গত ১৮ মার্চ হুড়কায় শওকত আলীর বাড়িতে এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সহযাত্রী নিয়ে বরের বাড়িতে আসেন কনে। পরে ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে দুজনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

 

Manual5 Ad Code

কনের চাহিদা অনুযায়ী ১০ লাখ টাকা দেনমোহরের পাঁচ লাখ টাকা স্বর্ণালঙ্কারে উসুলসহ ৬ বিঘা জমি লিখে দেন কনেকে। এছাড়া কনের মেয়েটির দায়িত্বও নেন বর শওকত আলী। বিয়ের পরই রমজান শুরু হয়েছে। তাই হানিমুনেরও সিদ্ধান্ত করে রেখেছেন শওকত। রোজার পর নতুন বউকে নিয়ে হানিমুনে হজে যাবেন তিনি।

 

শওকত আলী বলেন, মূলত স্বাধীনতা খর্ব হবে ভেবে বিয়ে করিনি। বিয়ে করলে বউকে জবাবদিহি, অর্থের হিসাব, কাজকর্মের কৈফিয়ত দিতে হয়। এছাড়া আমার কাছে রেখে ভাইদের লেখাপড়া শিখিয়েছি। এখনো পরিবারকে নানাভাবে সহায়তা করছি। স্ত্রী থাকলে এসব কিছুতে বাধা আসতো তাই বিয়ে করিনি। কিন্তু এখন দেখছি একাকিত্ব লাগছে। তাই পরিবারকে জানিয়েই বিয়ে করলাম।

 

হানিমুনস্বরূপ বউকে নিয়ে আগামীতে হজে যাবেন শওকত আলী। বললেন, ‘বিয়ে নিয়ে অনেকেই অনেক কথাই বলছেন। তাতে কী! পেছনে তো কতজনে কত কথাই বলে। বিয়ে করে ভাইরাল হওয়াতে অনেক পুরোনো বন্ধুদের ফোন পাচ্ছি, ভালোই লাগছে। নতুন করে পুরোনো বন্ধুদের সম্পর্কটার ঝালাই হচ্ছে।