বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির বির্তর্কীত কর্মকান্ড কিছুতেই থামানো যাচ্ছেনা

প্রকাশিত: ৬:৩৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১০, ২০২৫

বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির বির্তর্কীত কর্মকান্ড কিছুতেই থামানো যাচ্ছেনা

বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির বির্তর্কীত কর্মকান্ড কিছুতেই থামানো যাচ্ছেনা

নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেট এসএমপির বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির বির্তর্কীত কর্মকান্ড যেনো কিছুতেই থামানো যাচ্ছেনা। বিগত সরকারের শাসন আমলে বিএনপির নেতাকর্মীরা অতিষ্ঠ ছিলেন তার কর্মকাণ্ডে। জুলাই আন্দোলন চলাকালে নিহত আবু সাইদের গায়েবানা জানাযা সিলেট রেজিস্ট্রারী মাঠে অনুষ্টিত হলে। সেখানে যান সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি সহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। সে সময় রেজিস্ট্রারী মাঠের গেইট বন্ধ করে দেন এই উবাদুল্লাহ। অথচ তিনি তখন কর্মরত ছিলেন এসএমপির শাহপরাণ থানায়। তার উপর দায়িত্বছিলো বিএনপির নেতাকর্মীদের বাসা বাড়ি গিয়ে তাদের গ্রেফতার করা।
প্রতিদিনই আসছে নানা রকম অপকর্মের অভিযোগ। প্রতিটি দিনে রাতে অন্তত ১০/১২টি ছিনতাই ও চুরির ঘটনা ঘটলেও পুলিশ যেনো নিরব দর্শক হিসাবে সব দেখা শুনা করছে। যখন পথচারিরা ছিনতাইকারীদের ধরে উত্তম-অধম দিতে থাকেন যখন বাংলা ছবির স্টাইলে হাজির হন দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা। উত্তেজিত লোকজনের হাত থেকে বাঁচাতে এসব ছিনতাইকারী আটক করে থানায় নিয়ে যেতে বাধ্য হয় পুলিশ। পরে নাটক সাজিয়ে নিজের কৃতিত্ব দেখিয়ে আদালতে চালানও দেওয়া হয়। গত বছরের ৫ই আগষ্টের পর সিলেট নগরীর কয়েকটি এলাকা ছিনতাইকারী ও মাদক ব্যবসায়ীদের নিরাপদ ঘাটি হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। তারমধ্যে বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির কয়েকটি এলাকা উল্লেখযোগ্য।

বিশেষ করে দিনের বেলা মহাজনপট্টি কিংবা কাষ্টঘরের রাস্তা ও বন্দরবাজার হয়ে পুরাতন জেল কোয়ার্টারের সামনের রাস্তা দিয়ে সাধারণ মানুষ চলাচল করতেও এখন ভয় পান। অহরহ এসব ছিনতাই-রাহাজানির ঘটনা প্রকাশ্য দিনে দুপরে ঘটলেও ফাঁড়ির আইসি কিংবা এএসআইদের কিছু করার থাকেনা। কারণ তারা গাড়িতে বসে নিরব দর্শকের মতো থাকিয়ে থাকেন। তাদের সাথেই তাকে আরেক দল ছিনতাইকারী। এদের কথা মতোই কাজ করে টহল পুলিশ দল। রাত হলেই বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির আইসি উবায়দুল্লাহ ও এএসআই ইলিয়াস পৃথক টিম নিয়ে মহাজনপট্টি ও কাষ্টঘর রাস্তার সামনে সাদাপোষাকে দাড়িয়ে থাকেন। ভারত থেকে আসা অবৈধ চিনি গাড়ির টাকা উত্তোলন করতে। পাশাপাশি পথচারিদের মাদক দিয়ে ফাঁসানোর মতো একটি চুর পুলিশ খেলা চলে। যাহা প্রতিটি মার্কেটের সিসি ক্যামেরা চেক করলে পাওয়া যাবে।

 

বিগত সরকারের আমলে বন্দর ফাঁড়ির ইনচার্জ আকবরের নির্মম নির্যাতনে রায়হান আহমদ নামে এক যুবক মারা গেলে ফাঁড়ির সেই টর্চার সেল নিয়ে সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে শুরু করেন। পুলিশ ফাঁড়িতে ব্যাপক রদবদল করা হয়। সেই সময় ব্যাপক রদবদল হয় এই ফাঁড়িতে। সে সময় ফাঁড়িতে আসেন এএসআই ইলিয়াস হোসেন। ফাঁড়িতে এসে নিজেই গড়ে তুলেন একটি বিশেষ বাহিনী। তখন একাধিক বির্তকৃত কর্মকান্ডের জন্য থাকে ফাঁড়ি থেকে অন্যত্র বদলী করা হলেও তিনি এখনো বহাল আছেন। বিগত বছরের ৫ই আগষ্ট বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি পুড়িয়ে দেয় উত্তেজিত ছাত্র-জনতা। সেই থেকে থানায় বসেই চলছে পুলিশ ফাঁড়ির সকল কার্যক্রম। ফাঁড়ির সাবেক আইসি কল্লোল গোস্বামী একাধিক মামলায় পালাতক হলে সেখানে আইসি হিসাবে নিয়োগ আসেন বর্তমান আইসি উবাদুল্লাহ। এই এবাদুল্লা একাধারে সিলেট এসএমপিতে চাকরি করছেন এক যুগের বেশী সময় ধরে। তিনি এসএমপির প্রায় সব কয়টি থানায় চাকরি করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও তার গ্যানম্যানের কথায় বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার বাণিজ্য ছিলেন বেশ আলোচিত। নাম প্রকাশ না করা শর্তে এসএমপি এক পুলিশ সদস্য বলেন এসএমপির সব চেয়ে পুরাতন এসআই উবাদুল্লাহ। তাকে এসএমপি থেকে বিগত আ.লীগের আমলে কেউ বদলী করতে পারেনি। কম করে হলেও উবাদুল্লাহ সিলেট এসএমপিতে আছেন ১৩/১৪ বছর হবে। তিনি সেব সোর্স নিয়ে ঘুরে বেড়ান তার বেশীর ভাগই আ.লীগের চেলাচামুন্ডা।

 

পুলিশ ফাঁড়ি নেই আছে পুলিশী বাণিজ্য। এখন ফাঁড়িতে থাকা আইসি সহ এএসআই ইলিয়াসের টার্গেটই হচ্ছেন ভোরের বাস বা ট্রেনের যাত্রী, সিলেটে আসা পর্যটক, মাজারে আসা দম্পতি, সাধারণ ব্যবসায়ীরা। ফাঁড়িতে না নিয়ে নিরীহ পথচারীদের আটকিয়ে পিটিয়ে বা মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করাই তাদের মূলকাজ হয়ে দাড়িয়েছে। বিষয়টি আপোষ রফার জন্য নিজেরাই সাথে রাখেন সোর্স পরিচয়ধারী কয়েকজনকে। মাদকদ্রব্য উদ্ধারের নামে রাতে নিজেদের সোর্সসহ এএসআই ইলিয়াস ও আইসি উবাদুল্লাহ দাড়িয়ে থাকেন কাষ্টঘর কিংবা বন্দরবাজারের কোন অন্ধকার গলিতে সেখানে পথচারি যাওয়া মাত্রই নিজেদের কাছে থাকা মাদক দিয়ে নিরিহ পথচারিকে ফাঁসিয়ে টাকার বিনিময়ে বাণিজ্যই তাদের মূল উিউটি। তাদের সাথে সোর্স হিসাবে কাজ করেন সিলেট নগরীর চিহ্নিত কয়েকজন ছিনতাইকারী। তারা নিজেরাই ছিনতাই মামলায় একাধিকবার গ্রেফতার হলেও এখন আইসি উবায়দুল্লাহ ও এএসআই ইলিয়াস এসব ছিনতাইকারী নিয়ে সিলেট নগরীতে ধাবড়ে বেড়ান অপরাধীদের ধরতে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এসব ছিনতাইকারীদের পকেটেই থাকে মাদক ও ধারালো অস্ত্র-চাকু। গত তিন-চারদিন আগে জনৈক আমিন নামের একজনকে এসব ছিনতাইকারীরা ধারালো চাকু-বেøড দিয়ে আঘাত করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এভাবে ছিনতাইয়ের র্টাগেট করা ব্যক্তির কাছ থেকে মোবাইল ফোন কিংবা স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নিতে বাধা দিলে প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করে ছিনতাইকারীরা।
ফাঁড়ির আইসি বা পুলিশের কাছে অভিযোগ দিলে তারা বলে আমাদের কিছু করার নাই আপনারা হাসপাতাল যান, কোর্টে মামলা করেন।

 

সম্প্রতি সিলেট নগরীর মহাজনপট্টির একটি দোকানে কাপড় কিনতে আসেন কানাইঘাট উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক দেলোওয়ার হোসেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে তিনি একটি নোহা গাড়ি নিয়ে যাকাতের কাপড় কিনতে আসেন মহাজনপট্টির হাজী সোনাই মিয়ার দোকানে। সেখান থেকে তিনি কয়েক লক্ষ টাকার যাকাতের কাপড় খরিদ করেন। কাপড় ভর্তি নোহা গাড়িটি সোনা মিয়ার দোকান থেকে জামে মসজিদের সামনের দিকে আসা মাত্রই এএসআই ইলিয়াসের সাথে থাকা সোর্স মোস্তাক আহমদসহ কয়েকজন সাদা পোষাকধারী যুবক গাড়ির গতিরোধ করে। এসময় ফিল্মি স্টাইলে মোস্তাকের নেতৃত্বে এসব যুবক দেলোয়ার হোসেনের গাড়ির গ্লাস ভাংচুর করতে চেষ্টা করতে থাকে এমনকি তাকে জোর করে গাড়ি থেকে নামানোর চেষ্টায় টানা হেচড়া শুরু করে। দুরে দাড়িয়ে সবই দেখছিলেন ফাঁড়ির এএসআই ইলিয়াস হোসেন। কারণ তার নেতৃত্বে এরা দেলোয়ার হোসেনের গাড়িটি আটক করে। এ সময় এএসআই ইলিয়াসের সাথে থাকা মোস্তকাসহ কয়েকজন দেলোয়ার হোসেনের গাড়িতে থাকা যাকাতের কাপড়ের বান্ডিল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। বিষয়টি দেখতে পেয়ে দেলোয়ারের পূর্ব পরিচিত কয়েকজন ব্যবসায়ী সহ পাশ্বর্তী মসজিদের ক্যাশিয়ার ও মহাজনপট্টির এক ব্যবসায়ী এগিয়ে আসলে তিনি এএসআই ইলিয়াসের সাথে কথা বলেন। পরে এএসআই ইলিয়াসসহ তার বাহিনী ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এই মোস্তাকের বাড়ির সুনামগঞ্জ জেলায়। সে এক সময় আওয়ামী লীগের মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের গ্যানম্যনের সোর্সগিরী করতো। তার মূল কাজই ছিলো বিএনপির টাকাওয়ালা নেতাকর্মীকের পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করে বাণিজ্য করা। আওয়ামী লীগের পতন হলে সে এখন আইসি উবাদুল্লাহ প্রধান সোর্স।

 

এ দিকে সেইদিনের ভোক্তভোগী দেলোওয়ার হোসেন জানান, তিনি মহাজনপট্টির ব্যবসায়ী হাজি সোনা মিয়ার দোকান থেকে যাকাতের কাপড় কিনে বাড়ি ফিরার পথে মহাজনপট্টির হয়ে বন্দরবাজার পূর্বালী ব্যাংকের সামনে গেলে তার গাড়ি গতিরোধ করেন বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সোর্স হিসাবে পরিচিত মোস্তাক কয়েকজন যুবক। মোস্তাক নিজেকে ফাঁড়ির পুলিশ পরিচয় দিয়ে দেলোয়ারের কাছে জানতে চান, গাড়িতে কি মাল, কোথায় থেকে আনছেন, মালগুলো দেখাতে হবে। এক পর্যায়ে দেলোয়ার বলেন, আমি হাজি সোনা মিয়ার দোকান থেকে যাকাতের কাপড় কিনেছি এবং বাড়ি যাচ্ছি আপনি কে? তখন মোস্তাক বলে আমি পুলিশের লোক। আপনার এই কাপড় গুলো অবৈধ। তুমি আমাদের পরিচয় দিয়ে কি করবা। আপনি গাড়ি থেকে নেমে আসেন থানায় চলেন। তখন দুরে দাড়িয়ে বিষয়টি দেখছিলেন বন্দর ফাঁড়িতে কর্মরত এএসআই ইলিয়াস। কারণ ইলিয়াসই মোস্তাকদের দেলোয়ারের গাড়ি আটক করতে বলেছিলেন। যখন পরিচিত লোকজন উপস্তিত হতে থাকেন। তখন অবস্থা বে-গতিক দেখে এএসআই ইলিয়াস নিজের সোর্সদের নিয়ে কেটে পড়েন ঘটনাস্থল থেকে। বিষয়টি তিনি সাথে সাথে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির আইসি এসআই উবাদুল্লাহকে অবহিত করেন। বিস্তারিত ঘটনা বলে মোস্তাকসহ ঘটনার সময় উপস্তিত থাকা যুবকদের আটক করতে বার বার অনুরোধ করেন কিন্তু উবাদুল্লাহ বিষয়টি আমলে নেন নি। দেলোয়ার হোসেন বলেন তিনি বিষয়টি নিয়ে ফাঁড়ির আঁইসির সাথে একাধিকবার কথা বললেছেন। কিন্তু তিনি বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

 

এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালো দেলোয়ার হোসেন জানান, সেদিনের ঘটনার সময় যে সকল যুবক উপস্তিত ছিলো তারা সবগুলো পেশাদার ছিনতাইকারী।তারা একজন আরেকজনের নাম ধরে ডাকছিলো। পরে এএসআই ইলিয়াসের সাথে তারা ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। যেহেতু ঈদের ঝামেলায় তিনি ব্যস্থ আছেন তাই ঈদ পরে তিনি আইসি, এএসআই ইলিয়াস সহ উপস্তিত ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সেদিনের উপস্তিত সবার নাম ঠিকানা তিনি সংগ্রহ করেছেন।
এদিকে স্থানীয় ব্যসায়ীরা অভিযোগ করেন, এখন পুলিশের সাথেই চিনতাই, হত্যা মামলার আসামীরা প্রকাশ্যে ঘরে বেড়ায় সিলেট শহরের অলিগলি। এমন চিত্র রাতে বন্দরবাজারের হোটেল মশরফিয়ার সম্মুখ, করিম উল্লাহ মার্কেটের সামনে, হোটেল মজলিসের সামনে গেলেই যে কারো চুখে পড়বে।
বন্দর ফাঁড়ির আইসি উবাদুল্লাহ বা এএসআই ইলিয়াস যেখানে যান সেখানে সাথে হাজির থাকেন মোস্তাক নামের এই সোর্স। গত কয়েক দিন থেকে ছিনতাইকারী মোস্তাককে সাথে নিয়ে ঘুরছেন ফাঁড়ির আইসি ও এএসআই ইলিয়াস।

 

সূত্র – রাইজিং সিলেট

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ নিউজ