১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বন্য শিম্পাঞ্জিদের গাঁজানো ফল ভাগ করে খাওয়া কিসের ইঙ্গিত

admin
প্রকাশিত ২২ এপ্রিল, মঙ্গলবার, ২০২৫ ২৩:৫৬:৪৭
বন্য শিম্পাঞ্জিদের গাঁজানো ফল ভাগ করে খাওয়া কিসের ইঙ্গিত

Manual3 Ad Code

গ্লাস, বারের স্ন্যাকস কিংবা ককটেল শেকার নেই। তাতে কী হয়েছে? পশ্চিম আফ্রিকার গিনি বিসাউয়ের বনে দেখা গেছে অন্য রকম এক ‘পানভোজন’। সেখানে ক্যামেরায় ধরা পড়েছে—বন্য শিম্পাঞ্জিরা আয়েশ করে একে অপরের সঙ্গে ভাগ করে খাচ্ছে পেকে একেবারে গাঁজন হয়ে যাওয়া আফ্রিকান ব্রেডফ্রুট। অতিরিক্ত পেকে যাওয়ার ফলে প্রাকৃতিকভাবেই এই ফলে তৈরি হয়েছে অ্যালকোহল।

এই দৃশ্য প্রথমবার প্রমাণ দিল, মানুষ ছাড়া বৃহৎ প্রজাতির অন্যান্য প্রাণীও মদযুক্ত খাবার গ্রহণ করে এবং তা অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নেয়।

Manual5 Ad Code

ইউনিভার্সিটি অব অ্যাক্সেটারের একদল গবেষক মোশন-সেন্সর ক্যামেরায় এই দৃশ্য ধারণ করেন। তাঁরা জানান, শিম্পাঞ্জিরা জেনেশুনেই বেছে নিচ্ছিল সবচেয়ে পাকা ফলগুলো—যেগুলোতে অ্যালকোহলের মাত্রা ছিল ০.৬১ শতাংশ পর্যন্ত।

প্রধান গবেষক আনা বোউল্যান্ড বলেন, ‘মানুষের ক্ষেত্রে অ্যালকোহল সেবনের ফলে শরীরে ডোপামিন ও এন্ডোরফিন নিঃসরণ হয়, যা প্রশান্তি ও আনন্দের অনুভূতি আনে। আবার একসঙ্গে পান করা আমাদের সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করে। দেখা যাচ্ছে, শিম্পাঞ্জিরাও মদ্যপ ফল খাচ্ছে এবং তারা এটি ভাগ করে খাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, তারাও কি মানুষের মতো অনুভূতি পাচ্ছে?’

Manual1 Ad Code

বিষয়টি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস। এতে বলা হয়েছে, গবেষকদের পর্যবেক্ষণকে আরও জোরালো করেছে বহুল আলোচিত ‘ড্রাংকেন মাঙ্কি হাইপোথিসিস’। এটি মূলত জীববিজ্ঞানী রবার্ট ডাডলির প্রস্তাবিত একটি তত্ত্ব। এতে বলা হয়েছে, গাঁজন হওয়া ফল ছিল আদিম প্রাণীদের ক্যালরির গুরুত্বপূর্ণ উৎস, সেই থেকেই মদ্যপানের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বিবর্তিত হয়েছে।

২০১৪ সালে পিএনএএস জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, বর্তমানের বানর ও মানুষের একটি পূর্বপুরুষের দেহে এমন একটি জিনগত পরিবর্তন ঘটেছিল, যা তাকে অ্যালকোহল হজম করতে বেশি সক্ষম করে তোলে। আর এটি ঘটেছিল প্রায় ১ কোটি বছর আগে।

Manual5 Ad Code

এদিকে প্রচলিত তথ্য অনুযায়ী, শিম্পাঞ্জিরা সাধারণত খাবার ভাগ করে খায় না। তাই তাদের গাঁজন হওয়া ফল ভাগ করে খাওয়ার আচরণটি গবেষকদের কাছে নতুন ও তাৎপর্যপূর্ণ। গবেষক ড. কিম্বারলি হকিংস বলেন, ‘এই ভাগাভাগির আচরণ হয়তো উৎসব-ভোজের বিবর্তনমূলক সূচনা হতে পারে। এমনকি মানুষের ভোজ ও পান-সংস্কৃতির গোড়ার দিকের ছায়াও হতে পারে এটি।’

শিম্পাঞ্জিদের এই ‘মৃদু পানভোজ’ হয়তো মানবসভ্যতার অন্ধকার অতীতের জানালায় এক ক্ষণিক ঝলক। আজকের দিনে যেখানে পানভোজ সামাজিকতার এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ, সেখানে হয়তো তার বীজ রোপিত হয়েছিল সেই জঙ্গলের ছায়ায়—পাকা একটি ফলকে কেন্দ্র করে।

Manual8 Ad Code