১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৭শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাট করে প্রকল্পের টাকা লুট আওয়ামী নেতার

admin
প্রকাশিত ১০ আগস্ট, রবিবার, ২০২৫ ১৬:৪৬:১৭
বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাট করে প্রকল্পের টাকা লুট আওয়ামী নেতার

Manual5 Ad Code

যশোরের মনিরামপুরে ভবদহ অঞ্চলে অবস্থিত কুচলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ বরাদ্দের জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন দপ্তর থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিউলি সরকারকে সভাপতি করে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

Manual5 Ad Code

অভিযোগ উঠেছে, বরাদ্দের টাকার নামমাত্র খরচ করে বিদ্যালয়ের পাশের মুক্তেশ্বরী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে মাঠে ফেলে বাকি টাকা লোপাট করা হয়েছে। আর দায়সারা সেই কাজ দেখেও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন দপ্তর বরাদ্দের শেষ কিস্তির টাকা উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছে।

Manual5 Ad Code

এ বিষয়ে খোঁজ নিতে সরেজমিন বিদ্যালয়ে গেলে প্রধান শিক্ষক শিউলি সরকার দাবি করেন, তিনি প্রকল্পের সভাপতি হলেও নিজে কাজ করাতে পারেননি। হরিদাসকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির লিটন তাঁর কাছ থেকে প্রকল্পের টাকা নিয়ে লোক ভাড়া করে নদীর বালু তুলে মাঠে ফেলেছেন। তবে প্রধান শিক্ষকের অভিযোগের বিষয়ে চেয়ারম্যান লিটনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ভবদহ অঞ্চলের মুক্তেশ্বরী নদীর পার ঘেঁষে কুচলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থান। বর্ষা মৌসুমে ভারী বৃষ্টি হলে নদীর পানি ঢুকে হাঁটুপানি জমে বিদ্যালয়ের মাঠে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ অবস্থার উন্নতির জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন দপ্তর থেকে বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাটে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

প্রধান শিক্ষক শিউলি সরকার বলেন, ‘এক দিন পিআইও দপ্তর থেকে আমাকে ফোনে জানানো হয় বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাটের জন্য ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আমাকে চেকে স্বাক্ষর করে ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে হবে। এরই মধ্যে পরিষদের চেয়ারম্যান আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে বলেছেন টাকা তুলে তাঁর হাতে দিতে। আমি মনিরামপুর বাজারে গিয়ে ব্যাংক থেকে বরাদ্দের অর্ধেক ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা উত্তোলন করি। খরচের কথা বলে পিআইও অফিস সেখান থেকে ২১ হাজার টাকা রেখে দিয়েছে। বাকি এক লাখ চার হাজার টাকা পরিষদে গিয়ে চেয়ারম্যান লিটনের হাতে পৌঁছে দিয়েছি।’

Manual5 Ad Code

প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, ‘এরপর লোক দিয়ে নদী থেকে বালু তুলে চেয়ারম্যান মাঠে ফেলেছে। মাঠে এক ফুট করে বালু দেওয়ার কথা ছিল। অর্ধেক মাঠে বালু ফেলে কাজ শেষ করে দিয়েছে। কত টাকার কাজ করিয়েছে, আমরা জানতে পারিনি। বিদ্যালয়ে একটা ইটের সলিংয়ের রাস্তা আছে। মাটি ফেলবে এ জন্য চেয়ারম্যান বলেছে রাস্তার ইট তুলে রাখতে। আমরা চারজন শ্রমিক নিয়ে কাজ করিয়েছি। চেয়ারম্যান তাদের মজুরি দেওয়ার কথা ছিল। তিনি দুজনের মজুরি দিয়েছেন। বাকি দুজনের টাকা আমরা স্কুল থেকে দিতে হয়েছে।’

আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দে মাঠ ভরাটের পর মনিরামপুরে কুচলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র। ছবিটি গেল সপ্তাহে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দে মাঠ ভরাটের পর মনিরামপুরে কুচলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র। ছবিটি গেল সপ্তাহে তোলা।
Manual8 Ad Code

স্থানীয়রা বলছেন, ‘বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে নামমাত্র সভাপতি বানিয়ে তাঁর পরামর্শ না নিয়ে মুক্তেশ্বরী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে মাঠে ফেলেছেন চেয়ারম্যান। হয়তো এ কাজে সর্বোচ্চ ৭০-৮০ হাজার টাকা খরচ করেছেন। চেয়ারম্যানের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি। প্রধান শিক্ষক ভালো মানুষ। তাঁর কোনো দোষ নেই।’

কুচলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, মাঠের কিছু অংশে বালু ফেলা হয়েছে। একটু বৃষ্টি হলে মাঠে পানি জমে থাকছে। শিক্ষকেরা বলছেন, ভারী বৃষ্টি হলে আবারও মাঠে এক ফুট পানি জমে থাকবে। অভিযোগের বিষয়ে হরিদাসকাটি ইউপির চেয়ারম্যান আলমগীর কবির লিটনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কয়েক দিন ধরে মনিরামপুরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ভেতরে গ্রেপ্তারের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় পরিষদ ছেড়ে আত্মগোপনে আছেন চেয়ারম্যান। তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরও বন্ধ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘স্কুলের মাঠ ভরাটের কাজ শেষে আমরা সরেজমিন দেখেছি। মাঠের যে অংশে নিচু ছিল, সেখানে বালু বেশি ফেলা হয়েছে। পুরো মাঠ ভরাট করতে হলে এ বরাদ্দে তা সম্ভব না। প্রধান শিক্ষক সভাপতি হয়েও কাজ করতে না পারার বিষয়ে পিআইও বলেন, তিনি আমাদের এ প্রসঙ্গে কিছু জানাননি।’