১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বুদ্ধিজীবী হত্যা,বাঙালি নারীদের সংঘবদ্ধ ধর্ষণ:কেনো এই বর্বর পরিকল্পনা?

admin
প্রকাশিত ১৪ ডিসেম্বর, রবিবার, ২০২৫ ২০:৪৮:৫৫
বুদ্ধিজীবী হত্যা,বাঙালি নারীদের সংঘবদ্ধ ধর্ষণ:কেনো এই বর্বর পরিকল্পনা?

Manual4 Ad Code

সুনির্মল সেন: ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে ঘুমন্ত বাঙালি জাতির ওপর ট্যাঙ্ক নিয়ে হামরে পড়ে পাকিস্তানি জান্তারা। এরপর দীর্ঘ ৯ মাস ধরে ঘরে ঘরে বাঙালি নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালাতে থাকে তারা। রাজাকার-আল বদর-আল শামস বাহিনীর সহায়তায় প্রতিটি এলাকায় তারা স্থাপন করে নারীদের জন্য আলাদা বন্দিশালা। দেশজুড়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যার মহোৎসবের মেতে ওঠে পাকিস্তানি পিশাচরা। কিন্তু কেনো? কারণটা খুব পরিষ্কার। পাকিস্তানি বাহিনীর প্রধান জেনারেল নিয়াজীর একটি বক্তব্যের মাধ্যমেই পাকিস্তানি সেনাদের ধর্ষণের পরিকল্পনার কথা স্পষ্ট হয়ে গেছে। পাকিস্তানি জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা পরবর্তীতে তার আত্মজীবনীতে এবিষয়টি উল্লেখ করেছে।

Manual5 Ad Code

 

Manual5 Ad Code

 

Manual3 Ad Code

 

মুক্তিযুদ্ধকালে ঢাকায় পাকিস্তান আর্মির ১৪ ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় জেনারেল নিয়াজী ও জেনারেল রাও ফরমান আলীর সঙ্গে নিয়মিত বৈঠকে অংশ নিতো সে। ১০ এপ্রিলের একটি ঘটনা প্রসঙ্গে জেনারেল খাদিম আত্মজীবনীতে লিখেছে: ‘জেনারেল নিয়াজী ঘরে ঢুকেই গর্জে উঠলো। বলতে থাকলো: আমি এই বেজন্মা জাতির জাত বদলে দেবো। নিয়াজী সেনাবাহিনীকে বাঙালি নারীদের ওপর লেলিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিলো। এরপর বাঙালি জাতিকে নিয়ে অনেক অশ্লীল কথাবার্তা বলা শুরু করলো।

 

 

 

 

এই অপমান সইতে না পেরে সেখানে উপস্থিত বাঙালি মেজর মুশতাক বাথরুমে ঢুকে নিজের গুলি দিয়ে আত্মহত্যা করে।’ অবশ্য, অন্য কয়েকটি গবেষণা সূত্রে জানা যায়, বাঙালি জাতি ও নারীদের নিয়ে নিয়াজীর নোংরা মন্তব্যের প্রতিবাদ করায় মেজর মুশতাককে বাথরুমে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। ১১ এপ্রিল জেনারেল খাদিম ঢাকা ত্যাগ করার আগে নিয়াজীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সে লিখেছে: ”জেনারেল রহিমের হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে দেখা করতে গেলাম নিয়াজীর সঙ্গে। তাকে যুদ্ধের মানচিত্র বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল।

 

 

 

 

 

কিন্তু সে আমাকে দেখেই বলে উঠলো: যুদ্ধ আমরা করে নেবো, চিন্তা করো না। এখন আমাকে তোমার বাঙালি গার্লফ্রেন্ডদের ফোন নাম্বার দিয়ে যাও।’ নিয়াজীর বিকৃতপনা সম্পর্কে কিছুটা জানতাম কিন্তু যুদ্ধের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নারীদের নিয়ে তার পরিকল্পনা আমাকে আশাহত করলো।” পাকিস্তানিদের লক্ষ্য ছিল, যতো বেশি সম্ভব বাঙালি নারীকে ধর্ষণ করা।

 

 

মূলত, বাঙালি নারীদের দাসী হিসেবে ব্যবহার করে তাদের বিকৃত যৌন চাহিদা মেটানো এবং লাখ লাখ নারীকে অন্তঃসত্ত্বা করার মাধ্যমে বাংলার মাটিতে পাকিস্তানিদের রক্তের উত্তরাধিকার সৃষ্টি করার পরিকল্পনা ছিল এটি। বাঙালি জাতিকে পাকিস্তানিকরণের জন্য সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মাধ্যমে কমপক্ষে পাঁচ লাখ নারীর জীবন নষ্ট করেছে পাকিস্তানি সেনাসদস্য ও রাজাকাররা। তাদের ধর্ষণের কারণে জন্ম নেওয়া লক্ষাধিক শিশুকে ‘যুদ্ধশিশু’ হিসেবে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বিদেশে দত্তক দিতে বাধ্য হয়েছে সরকার। এমনকি যুদ্ধের পর জেনারেল রাও ফরমান আলীর ব্যক্তিগত ডায়েরি উদ্ধার করা হয়। সেখান থেকে জানা যায়, এই বাংলার সবুজ মাটিকে লাল করে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল পাকিস্তানিরা।

 

 

 

 

 

Manual3 Ad Code

এমনকি যখন তাদের পরাজয় নিশ্চিত হয়, তখন তারা ১৪ ডিসেম্বর দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের হত্যার পরিকল্পনা করে। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ যেনো সহজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেজন্য এই সংঘবদ্ধ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল। এই বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশাকারী জেনারেল রাও ফরমান আলী। এবং পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গী হিসেবে এই হত্যাযজ্ঞ বাস্তবায়নকারী গ্রুপগুলো হলো রাজাকার, আল বদর ও আল শামস বাহিনী; জামায়াত ইসলামীর নেতাকর্মীদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল এই বর্বর বাহিনীগুলো। (কবি ও সিনিয়র সাংবাদিক)