
ভারতের সঙ্গে ঋণচুক্তির আওতায় আলোচিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে মাত্র একটি বাতিল হয়েছে, বাকি প্রকল্পগুলো বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতের সঙ্গে ১০টি চুক্তি বাতিলের যে তালিকা ঘুরছে, তা ‘ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর’।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “ভারতের সঙ্গে ১০টি চুক্তি বাতিল করা হয়েছে বলে যে তালিকা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসেছে, সেটা সঠিক নয়। ওই তালিকার অনেকগুলোরই অস্তিত্ব নেই। শুধু গার্ডেন রিচের সঙ্গে করা একটি চুক্তি অনেক আগেই বাতিল করা হয়েছে। বাকিগুলোর কয়েকটি বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে।”
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, তালিকায় ত্রিপুরা–চট্টগ্রাম রেলসংযোগ, অভয়পুর–আখাউড়া রেলপথ সম্প্রসারণ ও আশুগঞ্জ–আগরতলা করিডোর প্রকল্প বাতিল হিসেবে উল্লেখ করা হলেও এ নামের কোনো প্রকল্পই নেই। কেবল ‘আশুগঞ্জ–সরাইল–ধারখার প্রকল্প’-এর একটি অংশ (প্যাকেজ–৩: ধারখার থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর) বাতিল করা হয়েছে।
তৌহিদ হোসেন জানান, ফেনী নদীর পানি ব্যবস্থাপনা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টন প্রকল্প বাতিলের তথ্যও সঠিক নয়। তিনি বলেন, “ত্রিপুরার সাবরুম শহরে পানীয় জল সরবরাহের জন্য ২০১৯ সালে সই হওয়া সমঝোতা স্মারক বাতিল হয়নি। কুশিয়ারা নদীর পানি প্রত্যাহার সংক্রান্ত ২০২২ সালের চুক্তিও বলবৎ আছে।”
তিনি আরও বলেন, “বন্দর ব্যবহারের সড়ক ও নৌপথ উন্নয়ন চুক্তি বাতিল বলা হলেও এমন কোনো চুক্তি নেই। চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের বিষয়ে ২০১৮ সালের চুক্তি কার্যকর আছে।”
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, ফারাক্কা বাঁধসংক্রান্ত প্রকল্পে বাংলাদেশের অর্থায়নের কোনো প্রস্তাবই নেই, তাই তা বাতিল হওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। তেমনি সিলেট–শিলচর সংযোগ ও পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন সম্প্রসারণ প্রকল্প নিয়েও কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়নি।
ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্প (মিরসরাই ও মোংলা) সম্পর্কে তিনি বলেন, “এলওসি ঋণচুক্তির আওতায় এসব প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিলের প্রক্রিয়া চলমান।”
আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি নিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, “হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী চুক্তিটি পুনর্বিবেচনার প্রক্রিয়ায় আছে।”
গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি ও তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গে তিনি জানান, গঙ্গার চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালে, তখন নবায়ন নিয়ে আলোচনা হবে। আর তিস্তা চুক্তি এখনো খসড়া পর্যায়েই আছে, এখনো তা স্বাক্ষরিত হয়নি।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো তথ্যগুলোর বেশিরভাগই ভুল। সরকার ও ভারতীয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে চলমান আলোচনাগুলোকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।”