নিজস্ব প্রতিবেদক:
ভারতে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অসুর রূপে উপস্থাপন করাকে “অত্যন্ত নিম্ন রুচির পরিচয় ও অপসংস্কৃতির প্রকাশ” বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
আজ শনিবার (৪ অক্টোবর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
দুর্গাপূজার প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, “এ বছরও হিন্দু-মুসলমান সবাই মিলে মণ্ডপ পাহারা দিয়েছে। এটাই আমাদের সম্প্রীতির ঐতিহ্য।”
ভারতে ড. ইউনূসের মুখাবয়বের আদলে তৈরি অসুরের মূর্তির সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এটি অত্যন্ত নিম্ন রুচির পরিচয় ও অপসংস্কৃতির প্রকাশ। মোদি সরকার যদি ভারতে মধ্যযুগীয় অন্ধকার নামিয়ে আনেন, আমরা তা গ্রহণ করব না। তবে এ নিয়ে আমাদের দেশে বিভাজন তৈরি করা যাবে না। তারেক রহমান সুস্পষ্টভাবে বলেছেন—আমরা সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ থাকব।”
রিজভী আরও বলেন, “আগামী ফেব্রুয়ারিতে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে—এটাই জনগণের প্রত্যাশা। তারা ভোট দিতে প্রস্তুত। তাই নতুন কোনো ইস্যু তৈরি করে জনমতকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করলে জনগণের কাছে ধরা পড়বে।”
তিনি অভিযোগ করেন, “গত ১৬ বছর জনগণ ভোট দিতে পারেনি। শেখ হাসিনা ভোটে তালা ঝুলিয়ে নির্বাচনের নামে প্রহসন করেছেন। গরু-বাছুরকে ভোটকেন্দ্রে যেতে দেখা গেছে, কিন্তু ভোটারদের সুযোগ দেওয়া হয়নি। দিনের ভোট রাতে পরিণত হয়েছে। র্যাব, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ দিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়া ঠেকানো হয়েছে।”
বিএনপির মুখপাত্র বলেন, “এবারের নির্বাচন কমিশন এবং ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারই জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করবে। কারণ, এই সরকার নিরপেক্ষ থাকবে।”
তবে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে বিশেষ একটি ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলের সমর্থক কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। “ড. ইউনূসের প্রতি আস্থা রেখে বলছি, এমন ব্যক্তিদের দায়িত্ব দিন—যাঁরা নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পরিচালনা করবেন,” বলেন রিজভী।
তিনি আরও বলেন, “শেখ হাসিনা দলীয় নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন ব্যবহার করে দেশে একদলীয় ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিলেন। জনগণ আরেকটি ফ্যাসিবাদের শাসন দেখতে চায় না।”
জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ইতিহাস তুলে ধরে রিজভী বলেন, “বিএনপি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরে একদলীয় দুঃশাসন থেকে জাতিকে মুক্ত করেছে। বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরাচার এরশাদকে পরাজিত করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। আর ৫ আগস্টের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তারেক রহমান জাতিকে নতুন করে অনুপ্রাণিত করেছেন।”
আন্তর্জাতিক চক্রান্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “জাতীয়তাবাদী শক্তিকে দুর্বল করতে সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদীরা নানা চক্রান্ত করছে। এর জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যানও চলছে। তবে বাংলাদেশের জনগণ সব অন্ধকার ভেদ করে জাতীয়তাবাদের পতাকা উঁচু রাখবে।”
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, “১৯৯১ সালে শেখ হাসিনা ভারত থেকে ফিরে বলেছিলেন, বিএনপি ১০টির বেশি আসন পাবে না। কিন্তু গত ১৬ বছর ধরে কারা আপসহীন লড়াই করেছে, জনগণ তা জানে। ভুল তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। ধানের শীষ তাদের প্রিয় প্রতীক, মিথ্যা প্রচার দিয়ে এটিকে দুর্বল করা যাবে না।”