
কর্ণফুলী নদীর তীরঘেঁষে ফিরিঙ্গীবাজার মৌজার প্রায় ৬ একর জমির মালিকানা নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। জমিটি নিয়ে আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এক বছরের জন্য জমিটি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে বরাদ্দ দিয়েছে। বন্দরের নির্ভরযোগ্য সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
মামলার নথি অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৮ নভেম্বর বন্দর কর্তৃপক্ষ জমিটি ইজারায় দেওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এ ঘটনায় আদালত অবমাননার অভিযোগে হাইকোর্ট রুল জারি করে। এরপর ইজারা প্রক্রিয়া থেকে সরে আসে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু রুল জারির দেড় মাস পর গত ২০ জানুয়ারি সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন জমিটি পার্ক ও খেলার মাঠ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ চান। পরে বন্দর বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জমিটি এক বছরের জন্য সিটি করপোরেশনকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। ৮ ডিসেম্বর জমি বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য করপোরেশনকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। জমির মাশুল বাবদ ৮৩ লাখ টাকা সিটি করপোরেশন ইতিমধ্যে জমা দিয়েছে।
বন্দর সূত্র জানায়, জমি বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে আইন উপদেষ্টার মতামত নেওয়া হয়নি। বন্দর ভূমি শাখার সহকারী ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ রায়হান উদ্দিন বলেন, “সরকারি দপ্তরের ক্ষেত্রে আদালত অবমাননা হয় না।”
অন্যদিকে জেলা প্রশাসন এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি—জমিটির মালিকানা তাদের। ২০২৩ সালের ১২ জুলাই তৎকালীন সিটি মেয়র ও জেলা প্রশাসক জায়গাটি পরিদর্শন করে নিজেদের মালিকানার সাইনবোর্ডও টাঙিয়ে দেন। জেলা প্রশাসনের দাবি, জমিটি ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত। আর বন্দর কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, ১৮৮৫ সালে জমিটি তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। রেকর্ড সংশোধন নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের একটি মামলা বর্তমানে যুগ্ম জজ আদালতে বিচারাধীন।
জমি বরাদ্দ প্রসঙ্গে সিটি করপোরেশনের ভূমি শাখার প্রধান মো. জিল্লুর রহমান বলেন, “যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই জায়গা নেওয়া হয়েছে। মামলা মোকদ্দমার বিষয় আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়।”
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অ্যাডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান বলেন, “মামলা চলা অবস্থায় জমি লিজ বা বরাদ্দ দেওয়া আদালত অবমাননার শামিল। সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকা উচিত।”
জমি-সংক্রান্ত বিরোধ নিরসনে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালের ২৩ আগস্ট তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির আহ্বায়ক নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মুন্সী মনিরুজ্জামান। অন্যান্য সদস্য হলেন মোংলা বন্দরের উপসচিব মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান ও উপসচিব টি এ মোহাম্মদ আমিনুর রহমান।