মৌলভীবাজারে বাবার হাতে ৭ বছরের শিশু খুন

প্রকাশিত: ৬:২৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫

মৌলভীবাজারে বাবার হাতে ৭ বছরের শিশু খুন

মৌলভীবাজারে বাবার হাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছে মাহিদ নামে ৭ বছরের এক শিশু। ঘটনার পর শিশুর বাবা খোাকন মিয়া ও দাদি হাওয়া বেগম নিজ ঘরে লাশ রেখে তারা আত্মগোপন করেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘাতক বাবাকে আটক করে। 

 

 

 

রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের জগন্নাথপুর গ্রামে এই ঘটনা।

 

 

 

মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি গাজী মাহবুবুর রহমান জানান, অভিযান চালিয়ে জেলগেট এলাকা থেকে খোকন মিয়াকে আটক করে জিজ্ঞেসাবাদ করা হচ্ছে।

 

 

 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খোকন মিয়া চিহ্নিত মাদক কারবারি। এলাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ মাদক ব্যবসা করে আসছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। রবিবার বিকালে খোকনের দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভে জন্ম নেওয়া শিশু মাহিদ বিছানায় মল ত্যাগ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে ঘরের বাহিরে এনে পেটাতে থাকে ঘাতক বাবা খোকন।

 

 

 

 

একপর্যায়ে শিশু মাহিদ সেখান থেকে পালিয়ে প্রতিবেশী যবেদা খাতুনের ঘরে আশ্রয় নিলে সেখান থেকে ফের ধরে এনে ওপর থেকে মাটিতে ছুড়ে মারেন। এর পর শিশু মাহিদের দুই পা ধরে কংক্রিটের পিলারের সঙ্গে আছাড় দিতে থাকলে শিশু মাহিদের নাক দিয়ে রক্ত ঝরতে শুরু করে। এ সময় প্রতিবেশী যবেদা বেগম শিশুটিকে রক্ষা করতেও ব্যর্থ হন। এমন পরিস্থিতিতে শিশুটির অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় খোকন মিয়া নিজেই শিশু মাহিদকে নিয়ে হাজির হন মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে।

পরে সেখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

 

 

এসময় শিশুটির মৃত্যুর কারণ নিয়েও চতুরতার আশ্রয় নেয় ঘাতক বাবা খোকন মিয়া। মৃত্যুর কারণ সেখানে উল্লেখ করে গাছ থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে বলে। এর পর সেখান থেকে লাশ নিয়ে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা বলে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে সদর মডেল থানা পুলিশ উপস্থিত হলেও সেখানে লাশ ও খোকন মিয়াকে পাওয়া যায়নি।

 

 

 

কিছুক্ষণ পর লাশ নিয়ে খোকন নিজ ঘরে হাজির হয়ে সেখানে লাশ রেখেই সটকে পড়ে। তবে তার প্রথম স্ত্রী ও নিহত শিশু মাহিদের আরেক ভাইকে ঘরেই পাওয়া যায়। আশপাশে তল্লাশি চালিয়েও পুলিশ সেখানে খোকন ও তার মা হাওয়া বেগমের কোনো খোঁজ না পেয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে সদর উপজেলার মোকামবাজার জেলগেট এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।

 

 

প্রতিবেশী যবেদা বেগম জানান, বাচ্চাটাকে দুই ঠেং ধরে কংক্রিটের পিলারের সঙ্গে মাথায় মারতে থাকে। তখন তাঁর নাক দিয়ে রক্ত পড়ছিল। মারধর করার সময় তাকে উদ্ধারে আমি এগিয়ে গেলে আমাকে অন্তত ১০ হাত দূরে টেনে নিয়ে যায়। তবে এসময় অন্য কেউ সেখানে ছিল না বলে জানান ওই নারী।

 

 

 

জানা যায়, ১৫ বছর আগে প্রথম স্ত্রী রেখে তানিয়া আক্তার নামে এক নারীকে বিবাহ করে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে ঘরে তুলেন খোকন। ওই স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় কয়েক বছর আগে স্বামী খোকন মিয়াকে ছেড়ে অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেও মাহিদ ও রাফিদ নামে ৬ ও ৭ বছর বয়সী দুই শিশুকে রেখে দেন খোকন। এর পর থেকে মা ছাড়া বাবা খোকন মিয়ার কাছেই থাকত দুই শিশু।

 

 

স্থানীয়রা বলছেন, অনেক দিন যাবৎ তুচ্ছ কারণে তাদের দুই ভাইয়ের প্রতি অমানবিক নির্যাতন চালাতেন মাদকাসক্ত বাবা খোকন মিয়া। নির্যাতনের নির্মম দৃশ্য প্রতিবেশীর চোখে ধরা পড়লেও ভয়ে তাদের কেউ এগিয়ে আসার সাহস করেনি।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ নিউজ