
ঢাকা, প্রতিনিধি :
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, পছন্দসই পদায়নের আশায় বিচারকদের রাজনৈতিক পদলেহন পরিহার করতে হবে। তিনি বলেন, আইন বৃহত্তর রাজনীতির একটি অঙ্গ হলেও বিচারকদের রাজনীতির ঊর্ধ্বে ওঠার প্রয়াস রপ্ত করতে হয়। কেবল ক্ষমতাবান শাসকশ্রেণির স্বার্থরক্ষায় পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখাই যদি বিচার বিভাগের দায়িত্ব হয়, তাহলে বিচার বিভাগের পৃথক কোনো অস্তিত্বের প্রয়োজন নেই—সেই কাজ নির্বাহী বিভাগ ও পুলিশই করতে পারে।
রোববার সুপ্রিম কোর্ট অডিটরিয়ামে জেলা ও মহানগর দায়রা জজ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশে দেওয়া বিদায়ী ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।
বিদায়ী প্রধান বিচারপতি বলেন, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ভিত্তি যে আদর্শকেই ধারণ করুক না কেন, বিচারকদের সুনীতি ও সুবিবেচনা বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তিনি বিচারকদের সততা ও পেশাদারিত্বের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগের বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এবং সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিচারকদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, অসৎ ও অসাধু বিচারকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বিচারকদের দ্বারা সংঘটিত অন্যায়ের দায় অন্যের ওপর চাপানোর সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। জনগণের জন্য দ্রুত ও ন্যায়সংগত বিচার নিশ্চিত করতে শতভাগ দায়িত্বশীল হতে হবে। তিনি আরও বলেন, শুনানিকালে কোনো বিশেষ পদবিধারী বা ক্ষমতাবান পক্ষকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া বিচারকের দায়িত্বের অংশ নয়।
সুপ্রিম কোর্টের পৃথক সচিবালয় প্রসঙ্গে ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ব্যক্তিগত অসততার বিষয়ে সতর্ক না হলে স্বাধীন সচিবালয় প্রতিষ্ঠার কোনো তাৎপর্য থাকে না। স্বাধীন সচিবালয় কেবল শুরু, চূড়ান্ত লক্ষ্য নয়। তিনি অনুপার্জিত অর্থের লোভ, বিলাসী জীবনযাপন ও অযৌক্তিক ক্ষমতার প্রদর্শন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, উন্নত জীবনমান ও কর্মপরিবেশের প্রত্যাশা কখনোই ব্যক্তিগত ভোগ বা সামাজিক মর্যাদা অর্জনের উদ্দেশ্যে হওয়া উচিত নয়। এর মূল লক্ষ্য হতে হবে বিচারিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, জ্ঞানচর্চার সম্প্রসারণ এবং উচ্চমানের পেশাগত দক্ষতা অর্জন।
বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় চাকরিকালীন প্রশিক্ষণ এখনও কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদ্যমান সুযোগের ন্যূনতম সদ্ব্যবহারেও বিচারকদের বড় অংশের অনীহা পরিলক্ষিত হয়। তাই বিচারকদের প্রতি তাঁর আহ্বান—জ্ঞান অর্জন ও নিয়মিত পাঠাভ্যাসকে জীবনের অপরিহার্য দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
উল্লেখ্য, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে গত বছরের ১১ আগস্ট দেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তিনি আগামী ২৭ ডিসেম্বর অবসরে যাবেন।