রাজধানীর উত্তরা এলাকায় র্যাব পরিচয়ে কনস্ট্রাকশনের দুই কর্মকর্তাকে অপহরণ করে মারধর ও টাকা লুটের ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারদের মধ্যে একজন অমি কনস্ট্রাকশনের কর্মকর্তা রয়েছেন, যিনি এই ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারী বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গত ১৬ নভেম্বর বেলা ১১টার দিকে উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের ১৯ নম্বর সড়কে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, প্রথমে একটি মোটরসাইকেল এবং পরে একটি মাইক্রোবাস দিয়ে রিকশার পথরোধ করা হয়। এরপর মাইক্রোবাস থেকে র্যাব লেখা কটি পরা দুই-তিনজন অস্ত্র হাতে নেমে অমি কনস্ট্রাকশনের কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন ও শফিউল্লাহ ভূঁইয়াকে আটক করেন।
ডাকাত দল নিজেদের র্যাব সদস্য পরিচয় দিয়ে অভিযোগ তোলে, দেলোয়ার হোসেন নাকি উত্তরার জসিম উদ্দিন এলাকায় বোমা ও বাসে আগুন দেওয়ার মতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য টাকা নিয়ে যাচ্ছেন। এই অভিযোগে তাঁদের জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তোলা হয়।
পরে ভুক্তভোগীদের চোখ বেঁধে, হাতকড়া পরিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় এবং তাঁদের কাছে থাকা ৩৪ লাখ ৭৬ হাজার ৭০০ টাকা ভর্তি ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়া হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাঁদের উত্তরা দিয়াবাড়ির ১৬ নম্বর সেক্টরে ফেলে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় পরদিন উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করা হয়।
সিসিটিভি ফুটেজে সূত্র, একের পর এক গ্রেপ্তার
মামলার পর ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ। এর সূত্র ধরে ৮ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর কদমতলীর শনির আখড়া ব্রিজসংলগ্ন এলাকা থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি জব্দ করা হয়। এ সময় মো. সুলতান (৪২) ও জসিম উদ্দিন (৪৫) গ্রেপ্তার হন।
তাঁদের তথ্যের ভিত্তিতে ওই রাতেই উত্তর মুগদার সাইফুলের সিএনজি গ্যারেজ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। এ সময় সুজন মিয়া ওরফে শাকিল ওরফে ভাতিজা (৩৩) গ্রেপ্তার হন।
পরবর্তীতে উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টর থেকে অমি কনস্ট্রাকশনের স্টোরকিপার শফিউল্লাহ ভূঁইয়াকে এবং উত্তরখানের মাস্টারপাড়া এলাকা থেকে মাহমুদুল হাসান মুন্না (৪৪) গ্রেপ্তার করা হয়। ১০ ডিসেম্বর বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে আব্দুল হালিমকে গ্রেপ্তার করা হলে তাঁর বাসা থেকে ডাকাতির টাকার ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ যা বলছে
ডিএমপির উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুনিরুজ্জামান বলেন, মামলার পরপরই সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করা হয়। এরপর ৮ থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে র্যাব সেজে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি জানান, গ্রেপ্তারদের একজন জসিম উদ্দিন আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃত সবাই বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
ডাকাতির পরিকল্পনা সম্পর্কে ওসি মুনিরুজ্জামান বলেন, অমি কনস্ট্রাকশনের স্টোরকিপার শফিউল্লাহ ভূঁইয়া গ্রেপ্তার হওয়া আব্দুল হালিমকে টাকার তথ্য দেন। পরে হালিম সেই তথ্য ডাকাত দলের অন্য সদস্যদের জানায় এবং পরিকল্পিতভাবে ডাকাতির ঘটনা সংঘটিত হয়।
তিনি আরও জানান, এই চক্র দীর্ঘদিন ধরে উত্তরায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সেজে ডাকাতি করে আসছিল। চক্রের পলাতক সদস্যদের গ্রেপ্তার এবং বাকি টাকা উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।