বিশেষ প্রতিবেদক : নির্বাচন সুষ্ঠু করার স্বার্থে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যথেষ্ট যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে বিসিএস ক্যাডার প্রশাসন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনওদের পদায়ন ও রিলিজের উদ্যোগ নিলেও বিভিন্ন স্থানে পদায়ন করা ইউএনওদের নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। কেউ কেউ বদলি হওয়ার পরও পদায়ন হওয়া স্থানে যোগদান করছেন না। আবার কেউ কেউ স্ব-স্ব স্থানে বহাল থাকতে করছেন নানা রকম তদবির। এমন সব চিত্র দেখা যাচ্ছে বর্তমানে ।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পর এসব বিষয় গুলো আরো বেশি শোনা যাচ্ছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সদস্য , কুমিল্লা লাকসাম এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা, সেখানকার নৌকা মার্কার সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন প্রত্যাশী দেলোয়ার হোসেন ফারুক এর স্ত্রী ৩৬ তম বিসিএস ক্যাডার শাখী ছেপ কে জোর তদবির লবিং এর মধ্য দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সিলেটের গোলাপগঞ্জের ইউএনও হিসেবে পদায়ন হওয়া করেছেন। পদায়ন হওয়া ইউএনও শাখী ছেপ এর গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে। তার স্বামী আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন ফারুক এর বাড়ি কুমিল্লা লাকসাম এলাকায়। যদিও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পদায়ন করেছে ইউএনও হিসেবে।।
সিলেট জেলা প্রশাসনের তালিকায় গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে শাখী ছেপ এর নাম ও রয়েছে কিন্তু বাস্তবে দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকায় বদলি হওয়া গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন চন্দ্র পাল। তিনি জানান, আমাকে ঢাকায় বদলি করা হয়েছে একটি প্রাইভেট ফার্মে প্রজেক্টে। রিলিজ হওয়ার কথা রয়েছে , কিন্তু যাদেরকে পদায়ন করা হয়েছে কেউ এখনো যোগদান করেননি। ইতিপূর্বে দুজন কে ইউ এনও হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে কেউই যোগদান করেননি। যে দুজনকে জন প্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পদায়ন করা হয়েছিলো দুজনই মহিলা। সবশেষ শাখী ছেপ নমে একজনকে পদায়ন করা হয়েছে, এক সপ্তাহ আগে তিনি আমার সাথে কথা বলছিলেন। পরে আর আমার সাথে কোন কথা হয় নি এখন পর্যন্ত তিনি আসবেন কিনা এ তাও জানি না। সাইরেন বাজিয়ে ছুটে চলেছে যখন নির্বাচনী ট্রেন। ঠিক তখন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রীকে সিলেটে ইউএনও হিসেবে পদায়ন নিয়ে নানাগুঞ্চল চলছে সিলেটের গোলাপগঞ্জে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির এ ভোট ঘিরে প্রশাসনকে ঢেলে সাজাচ্ছে সরকার। পদায়ন চলছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদেরও। এর মধ্যে সিলেটের গোলাপগঞ্জে যাচ্ছেন ৩৬ ব্যাচের কর্মকর্তা শাখী ছেপ। 'শাহজালালের পুণ্যভূমিতে পা রাখতে দেওয়া হবে না, আসামাত্রই রক্তের বদলা নেওয়া' সহ প্রাণনাশের এমন হুমকি আসছে অনবরত পদায়ন হওয়ায় ইউএনও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রী হওয়াতে এমন সব গুঞ্জন রয়েছে সিলেটের গোলাপগঞ্জের স্থানীয় এলাকাতে।
২৪ এর স্পিরিট দারুণকারী অনেকেই নারাজ আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রীকে ইউএনও হিসাবে পদায়ন করাতে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদে রদবদল করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নির্দলীয় ব্যক্তিদের পদায়নের লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ রয়েছেন ৩৬তম ব্যাচের কর্মকর্তা। পদায়ন পাওয়া অনেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। আবার কারও কারও বিরুদ্ধে তাদের স্বামী, স্ত্রী বা পরিবারের কেউ আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত বলে গুঞ্জন রয়েছে। জুলাই আন্দোলনের সাথে জড়িত নেতা-কর্মীদের দেয়া এইসব অভিযোগের ভিত্তিতে অনেকের পদায়ন বাতিলও হয়েছে। আবার অনেকে যোগদান করতে গিয়েও বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন। কমিশনার অফিসের এক সময়ের প্রভাবশালী কর্মকর্তা শিবানী সরকার নারায়নগন্জে যোগদান করতে গেলে তৌহিদী জনতা নামক সংগঠনের প্রতিবাদের মুখে যোগদান করতে ব্যর্থ হন। তার চাকুরী জীবনের ইতিহাস নিয়ে জুলাই ভেরিফাইড ফেইসবুক পেইজে বিস্তারিত লিখে পোস্ট করা হয়। এইবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসাবে পদায়ন পাওয়ার পর কয়েকজনকে নিয়ে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় নিউজ হয়। আবারও সক্রিয় হয় জুলাই আন্দোলনের কর্মীরা। তবে এইবার সিলেটের তৌহিদী জনতা পদায়ন পাওয়া এক নির্বাহী অফিসার কে অনড় অবস্থানে রয়েছে তারা যে কোন মূল্যে ইউএনর পদায়ন বাতিল করাতে চায়। সেই আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রী পদায়ন হওয়া নির্বাহী অফিসার এর নাম শাখী ছেপ। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার নিউজ ও সোশ্যাল মিডিয়ার কমেন্ট সেকশন থেকে জানা গেছে, প্রশাসনে ঢাকা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় দায়িত্ব পালন করে আসছেন শাখী ছেপ। নতুন পদায়নে তার নতুন কর্মস্থল সিলেটের গোলাপগঞ্জে।
আর এরপরই তাকে নিয়ে শুরু হয়েছে নানান আলোচনা সমালোচনা। কেউ বলছেন যে, অতীতে নিরপেক্ষভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করার কারণেই তাকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে পদায়ন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। অথচ তাকে কেন আওয়ামী লীগের দোসর তকমা লাগিয়ে নামে-বেনামের বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে এমনটাও কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন। অন্যদিকে অবন্তী আয়েশা নামের একজন ঘোষণা দিয়েছেন 'হযরত শাহজালালের পুণ্যভূমিতে এই ফ্যাসিস্টকে পা রাখতে দেওয়া হবে না। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের হঠকারী পদায়নের পর সিলেটের তৌহিদি জনতা জাগ্রত জেগে উঠেছে। সিলেট অঞ্চলের মানবাধিকার কর্মী আরিফ চৌধুরী বলেন, পদায়ন পাওয়া নির্বাহী অফিসার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত না থাকলেও যেহেতু তাঁর স্বামী নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত সেহেতু তার উক্ত উপজেলায় দায়িত্ব পালন করতে আসলে নানাবিধ সমস্যায় পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বর্তমান সময়ে। বিষয়টি নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিবেচনা করা উচিত। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনা হয় এমন ইঊএনও চায় গোলাপগঞ্জবাসী। কোন সমালোচিত কো কোন বিতর্কিত রাজনৈতিক নেতার স্ত্রীকে ইঊএনও হিসেবে পদায়ন চায় না তারা।