সিলেট সীমান্তে বোঙারী নাজিমের রামরাজত্ব

প্রকাশিত: ৯:৪৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩, ২০২৩

বিশেষ প্রতিবেদক:: সিলেটের গোয়াইনঘাট সীমান্তে চোরাকারবারি নাজিম উদ্দীন বাহিনীর অত্যাচার দিন দিন বেড়েই চলছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে যেনতেন কাজ করতেও পিছু পাঁ হটতে না এই বাহিনী।

তার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না সীমান্ত এলাকার ব্যাবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ। এই বাহিনীর প্রধান নাজিম উদ্দীন এরই মধ্যে মাদক মামলাসহ কয়েকটি মামলায় গ্রেফতার হয়েছিল।

এখনো তার বিরুদ্ধে মাদক মামলার পাশাপাশি নির্যাতন,জবর দখলসহ কয়েকটি মামলা রয়েছে।

গেলবছর মাদক মামলায় জেলে যায়। পরবর্তীতে নাজিম উদ্দীন কারাভোগ করে বের হয়। এরপরেও থেমে থাকেনি নাজিম বাহিনীর তান্ডব। সিমান্তে প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজি করে আসছে তার বাহিনীর সদস্যরা।

সিলেটের জৈন্তাপুর থেকে জাফলং পর্যন্ত সীমান্ত এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে সে। সীমান্তে বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের কারণে আলোচিত হয়ে উঠে। সর্বশেষ গেলবছর তার নেতৃত্বেই তামাবিল এলাকায় বিজিবি’র ওপর হামলা চালানো হয়েছিলো।

এরপর বিজিবি’র পক্ষ থেকে থানায় মামলা করা হলেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেনি। অবশেষে সেই ‘বোঙারী’ নাজিমকে গ্রেপ্তার করেছিল বিজিবিই। রাতের আঁধারে ভারত থেকে মাদকের চালান নিয়ে আসার সময় বিজিবি জওয়ানরা তাকে আটক করে।

নাজিম উদ্দিন তামাবিল এলাকার গুচ্ছ গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে। তার নেতৃত্বে চোরাচালানি চক্রের শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে তামাবিল,জাফলং ও জৈন্তাপুর এলাকায়। অন্তত ৩০-৩৫ জনের এ সিন্ডিকেটের নেতা বোঙারী। স্থানীয়রা জানিয়েছেন,জাফলংয়ের সুমন সিন্ডিকেটের সেকেন্ডম্যান হিসেবে নাজিম পরিচিত।

তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে যায় মটরশুঁটি, স্বর্ণ সহ নানা জিনিস। আর বাংলাদেশে আসে মদ, কসমেটিক্স, মোটরসাইকেল, ইয়াবা,কাপড় সহ নানা পণ্য। প্রায় ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার এলাকা একাই নিয়ন্ত্রণ করে নাজিম উদ্দিন। স্থানীয় সংগ্রাম ফাঁড়ির বিজিবি জানায়, সংগ্রাম সীমান্ত ফাঁড়ির নিকটবর্তী এলাকায় মাদকের চালান নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছিলো নাজিম ও তার সহযোগীরা। এ সময় বিজিবি’র সদস্যরা তাদের ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে নাজিম উদ্দিনের সঙ্গে থাকা চোরাকারবারিরা পালিয়ে গেলে নাজিম বিজিবি’র জওয়ানদের হাতে গ্রেপ্তার হয়।

এ সময় বিজিবি তার কাছ থেকে ৪০ বোতল ভারতীয় মদ ও ১০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- তামাবিল ও জাফলং এলাকার চোরাকারবার নিয়ন্ত্রণ করে জাফলংয়ের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেট টাকার বিনিময়ে চোরাচালানের লাইন বিক্রি করে। ২০-২৫ লাখ টাকায় এই লাইন বিক্রি করা হয়। আর লাইনের মাধ্যমে চোরাচালানের সব মালামাল ভারতে প্রবেশ করে এবং আসেও।

জাফলংয়ের সচেতন মহলের দাবি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এই চোরাকারবারি গডফাদার নাজিম উদ্দিন,নাছির মিয়া,ওদের পিতা মান্না মিয়ার চাঁদাবাজির খুঁটির জোর কোথায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যক্তি জানান, চোরাকারবারিদের কাছথেকে নাজিম সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যরা টাকা দাবি করে, টাকা না দেওয়ার কথা বললে নাজিম উদ্দিন ও তার সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যরা মালামাল আটক করে।

জাফলংয়ের সচেতন মহলের দাবি জাফলং সীমান্তের আতঙ্কের আরেক নাম নাজিম উদ্দিন পরিবারের সদস্যরা সিন্ডিকেট তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় না আনতে পারলে ঘটতে পারে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

এদিকে ক্রমেই বাড়ছে চাদাবাজি নাজিম সিন্ডিকেটের চোরাকারবারিদের চোরাচালান কর্মকাণ্ড। এর ফলে বছরে সরকার হারাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব। নাজিম উদ্দিন প্রতিনিয়ত ধরা পড়ে জেলে গিয়ে সাজাও হচ্ছে তাতেও তেমন লাভ হচ্ছে না। আইনের ফাঁকফোকরে সে আবার ছাড়া পেয়ে বের হচ্ছে। বের হয়ে আবারো পুরনো কাজে যুক্ত হচ্ছে। কিন্তু তাতেও দমানো যাচ্ছে না তাদের। সাজাপ্রাপ্ত আসামিও জামিনে ছাড়া পেয়ে বেরিয়ে একই কাজ করে যাচ্ছে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ নিউজ