১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

সুনামগঞ্জে উন্নয়ন প্রকল্পের অজুহাতে নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলন

admin
প্রকাশিত ২৫ জানুয়ারি, শনিবার, ২০২৫ ২৩:৩১:১৮
সুনামগঞ্জে উন্নয়ন প্রকল্পের অজুহাতে নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলন

Manual7 Ad Code

জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে উন্নয়ন কাজের অজুহাতে কুশিয়ারা নদীতে ড্রেজার (খনন যন্ত্র) বসিয়ে প্রকাশ্যেই চলছে বালু উত্তোলন। এছাড়াও নৌকা দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। দিন-রাত বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধ, ফসলি জমিসহ আশেপাশের ঘরবাড়ি। এদিকে, স্থানীয় ইউপি সদস্যের জিম্মায় রাখা জব্দকৃত বালুর নৌকা রাতের আঁধারে উধাও।

 

জানা গেছে, গত সোমবার বিকেলে কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রির সময় উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের বাগময়না গ্রামের স্থানীয়দের সহযোগিতায় একটি নৌকা জব্দ করেন রানীগঞ্জ ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা সেলিম মিয়া। পরে উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য তেরাব মিয়ার জিম্মায় জব্দকৃত নৌকাটি রানীগঞ্জ বাজার ঘাটে রাখা হয়। কিন্তু পরদিন সকালে নৌকাটি উধাও হয়ে যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের যোগসাজশে নৌকাটি ছেড়ে দিয়েছেন ওই ইউপি সদস্য।

 

 

Manual6 Ad Code

সুনামগঞ্জের জেলা রাজস্ব শাখা সূত্রে জানা গেছে, জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের নারিকেলতলা এলাকায় নির্মাণাধীন ‘কৃষি ইনস্টিটিউট (এটিআই)’ এর উন্নয়ন কাজের জন্য কুশিয়ারা নদী থেকে বালু উত্তোলনে সরকারি অনুমতি পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স একতা এন্টারপ্রাইজ। গেল বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারির ওই অনুমতিপত্রে উল্লেখ করা হয়, শুধুমাত্র কৃষি ইনস্টিটিউটের উন্নয়ন কাজের জন্য উপজেলার পাইলগাঁও ২১৮ নম্বর মৌজার ২৯৮, ৭০৯২ ও ২১৪ নম্বর দাগ এবং দিঘলবাক ২৬২ নম্বর মৌজার ২৮, ৩২৩, ৩৬২, ৩২২৬ ও ৩২২৭ নম্বর দাগের কুশিয়ারা নদীর তলদেশ থেকে মোট ৫৫ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হয়। অনুমতির পর থেকে ওই দুই মৌজার নির্ধারিত স্থান থেকে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে বালু উত্তোলন শুরু করে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে ওই উন্নয়ন কাজের জন্য নাম ভাঙিয়ে কুশিয়ারা থেকে অবাধে বালু উত্তোলন শুরু হয়। একাধিকবার এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিলেও প্রশাসনের নিরব ভূমিকায় হতাশ স্থানীয়রা।

 

স্থানীয়দের অভিযোগ, উন্নয়ন কাজের জন্য পাইলগাঁও মৌজার অংশে ড্রেজার বসিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে কৃষি ইনস্টিটিউটে বালু নেওয়া হচ্ছে। দিঘলবাক মৌজার বালু কৃষি ইনস্টিটিউটে না এনে অন্যত্র অবৈধভাবে বিক্রি করা হচ্ছে। গত এক বছর ধরে অবাধে বালু উত্তোলনে আশারকান্দি, পাইলগাঁও এবং রানীগঞ্জ ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম নদী ভাঙনের কবলে পড়ে ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে।

 

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, আওয়ামী লীগ আমল থেকে উন্নয়ন কাজের নাম ভাঙিয়ে কুশিয়ারা থেকে বালু উত্তোলনের মহোৎসব শুরু হয়। ৫ আগস্টের পর শুধু ব্যক্তি পরিবর্তন হয়েছে। হরিলুট আরো ব্যাপকতা লাভ করেছে।

 

 

Manual1 Ad Code

দিঘলবাক গ্রামের কৃষক আখছিল মিয়া, হাফিজুর রহমান, মোতালিব মিয়া, মুজিবুর রহমান, জুয়েল মিয়াসহ একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, বিগত দিনে কুশিয়ারা নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাট-বাজার নদী গর্ভে বিলীন হয়ে এলাকার শত শত পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। বর্তমানে এই অবৈধভাবে বিক্রির জন্য বালু উত্তোলনের কারণে নদীর তীরবর্তী ফসল রক্ষা বেরিবাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। নদীভাঙনে আমরা অনেক সম্পদ হারিয়েছি। এখন আর হারাতে চাই না।

Manual7 Ad Code

 

 

পাইলগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মো. নজমুদ্দিন বলেন, ড্রেজারে বালু উত্তোলনে লাভ যেমন ক্ষতিও তেমন। এক জায়গায় গর্ত সৃষ্টি হয়। পরে ভাঙ্গন দেখা দেয়। তবে নদী খননের মাধ্যমে গভীর করা খুবই প্রয়োজন। অবৈধ বালু উত্তোলনে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হোক। আমি বিষয়টি উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় আলোচনা করেছি।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স একতা এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর শফিক মো. জাবেদ-এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

Manual3 Ad Code

 

রানীগঞ্জ ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা সেলিম মিয়া মুঠোফোনে বলেন, নৌকাটি ঘাটে না পেয়ে ওই ইউপি সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু তার মোবাইল বন্ধ পাচ্ছি। বিষয়টি সহকারী কমিশনার (ভূমি)-কে জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে বুধবার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিয়াদ বিন ইব্রাহিম ভূঞা মুঠোফোনে বলেন, সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত পূর্বক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরকত উল্লাহ বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে এসিল্যান্ডকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে নিয়মিত অভিযান চলবে।