সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের হাদা টিলায় দীর্ঘদিন ধরে চলছে বালু, পাথর ও গাছ লুটপাট। বন বিভাগের মালিকানাধীন প্রায় ৭৬০ একর জমি এখন ধ্বংসের মুখে। অবৈধ সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে বন বিভাগ ও প্রশাসনের অভিযানও কার্যত ব্যর্থ হয়ে পড়েছে। এতে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বনায়ন প্রকল্প ও প্রাকৃতিক পরিবেশ, তেমনি সরকারও হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শতাধিক শ্রমিক দিয়ে টিলা কেটে উত্তোলন করা হয় শত শত ঘনফুট পাথর। এসব পাথর স্থানীয় বাজারে ১০০-১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। টিলা কাটার পাশাপাশি কেটে ফেলা হচ্ছে বনায়ন প্রকল্পের গাছপালা।
গত ২২ আগস্ট রাতে উপজেলা প্রশাসনের বিশেষ অভিযানে হাদা-পান্ডব এলাকায় ড্রেজারসহ বালু নৌকা জব্দ করা হয়। তবে অভিযানে শ্রমিক গ্রেপ্তার হলেও মূল হোতারা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফলে অভিযান শেষে আবারও শুরু হয় অবৈধ উত্তোলন।
২০০৬-০৭ অর্থবছরে বন বিভাগের উদ্যোগে হাদা টিলায় প্রায় ১৭৫ একর ভূমিতে সামাজিক বনায়ন প্রকল্প শুরু হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল পরিবেশ সংরক্ষণ ও স্থানীয়দের কর্মসংস্থান তৈরি। কিন্তু অবৈধ পাথর উত্তোলনের কারণে ইতোমধ্যেই প্রকল্পের গাছপালা নিশ্চিহ্ন হচ্ছে, টিলাও সমতল হয়ে পড়ছে।
পরিবেশবিদরা সতর্ক করে বলেছেন, টিলা কেটে পাথর উত্তোলন চলতে থাকলে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দেবে। নষ্ট হবে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল, মাটি হারাবে উর্বরতা, কৃষি উৎপাদন হুমকির মুখে পড়বে।
স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, টিলা ধ্বংসের কারণে আশপাশের জমিতে বালুমাটি জমে জমি চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থা।
বন বিভাগের কর্মকর্তা আইয়ুব আলী অবৈধ উত্তোলনের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “আমরা নিয়মিত অভিযোগ দিচ্ছি। কিন্তু সিন্ডিকেট এত শক্তিশালী যে স্থানীয় পর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছে না।” উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তারিকুল ইসলাম বলেন, “এটি শুধু একটি টিলা বা বনায়নের ক্ষতি নয়—এটি পুরো অঞ্চলের পরিবেশ, কৃষি ও অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত। কঠোর পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভয়াবহ বিপর্যয়ের শিকার হবে।”