নিজস্ব প্রতিবেদক | ঢাকা |
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়া ২৫ সেনা কর্মকর্তার মধ্যে সেনা হেফাজতে থাকা ১৫ জন কর্মকর্তাকে সেনানিবাসে সাবজেল (উপকারাগার) ঘোষণা করে রাখার চিন্তা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অনুমতি নিয়ে ওই সাবজেল থেকেই তাদের আদালতে হাজির করা হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর আসামিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার বিধান থাকায় এখন আইনি দিক বিবেচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপের প্রস্তুতি চলছে। বর্তমানে সেনা হেফাজতে থাকা ওই ১৫ কর্মকর্তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে কি না, তা নিয়েও আলোচনায় রয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, সেনানিবাসে সাবজেল ঘোষণার বিষয়ে এখনো ট্রাইব্যুনালের কাছে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব আসেনি। তিনি বলেন, “গ্রেপ্তারের পর আসামিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হয়। এরপর আদালতই পরবর্তী নির্দেশনা দেয়।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক অনুরোধ পাইনি। মিডিয়ার তথ্যের ওপর নির্ভর না করে আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম বলেন, “গ্রেপ্তারি পরোয়ারা হাতে পাওয়া মাত্রই সেনাবাহিনীকে তাদের হেফাজতে থাকা আসামিদের পুলিশকে হস্তান্তর করতে হবে, অথবা পুলিশকে গ্রেপ্তার করতে দিতে হবে।”
সেনাসদরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ৯ অক্টোবর সকালে মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় থাকা ২৫ কর্মকর্তার মধ্যে ১৫ জন চাকরিতে রয়েছেন, একজন পিআরএলে, এবং ৯ জন অবসরে আছেন। চাকরিরত ১৪ জন ও পিআরএলের এক জনকে সেনাসদর হেফাজতে নিয়েছে।
সেনাসদরের বক্তব্য অনুযায়ী, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পুলিশ চাইলে গ্রেপ্তার করতে পারবে। তবে কেউ চাইলে স্বেচ্ছায় সেনাসদরে আত্মসমর্পণও করতে পারবেন।
ট্রাইব্যুনাল আইন অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩-এর আওতায় সেনা, পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের বিচার করার ক্ষমতা ট্রাইব্যুনালের রয়েছে। আইনটি সংবিধানেরও ঊর্ধ্বে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “সরকার আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেবে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।”
🔹 পটভূমি
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গত বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২৫ সেনা কর্মকর্তা ও আরও ৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে — গুম, হত্যা, নির্যাতন ও মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড।