১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

সৌদি আরবে শাহবাজ শরিফকে রাজকীয় সংবর্ধনা, স্বাক্ষরিত হলো প্রতিরক্ষা চুক্তি

admin
প্রকাশিত ১৯ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার, ২০২৫ ১৯:১২:০১
সৌদি আরবে শাহবাজ শরিফকে রাজকীয় সংবর্ধনা, স্বাক্ষরিত হলো প্রতিরক্ষা চুক্তি

Manual3 Ad Code

সৌদি আরব সফরে গিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে দেওয়া হয় রাজকীয় মর্যাদা। গত বুধবার তাঁর বিমানের সৌদি আকাশসীমায় প্রবেশের পর এফ-১৫ যুদ্ধবিমান তাঁকে এসকর্ট করে। রিয়াদে লাল গালিচা সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় সফর। সফরের মূল আকর্ষণ ছিল কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি—এসএমডিএ (SMDA), যা রিয়াদের আল-ইয়ামামা প্রাসাদে স্বাক্ষরিত হয়।

চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। এতে উপস্থিত ছিলেন দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের সামরিক ও কূটনৈতিক প্রতিনিধি।


চুক্তির মূল শর্ত: এক দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন মানে উভয়ের বিরুদ্ধে আগ্রাসন

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই চুক্তি উভয় দেশের নিরাপত্তা জোরদার ও আঞ্চলিক শান্তি বজায় রাখতে যৌথ অঙ্গীকারের প্রতিফলন। চুক্তি অনুযায়ী, কোনো দেশের বিরুদ্ধে হামলা হলে তা উভয়ের বিরুদ্ধে আক্রমণ হিসেবে বিবেচিত হবে। যৌথ প্রতিরোধ গঠনের কথাও বলা হয়েছে।


আট দশকের সম্পর্কের মাইলফলক

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই চুক্তি দুই দেশের মধ্যে ৮০ বছরের সম্পর্কের এক নতুন যুগের সূচনা। ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংকট্যাংক স্টিমসন সেন্টারের বিশ্লেষক আসফান্দিয়ার মীর একে ‘মাইলফলক চুক্তি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

তিনি বলেন, “স্নায়ুযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা চুক্তি ছিল, কিন্তু তা ভেঙে যায়। এখন সৌদির সঙ্গে এ ধরনের আনুষ্ঠানিক চুক্তি তাদের কৌশলগত অবস্থানকে নতুন মাত্রা দেবে।”


উপসাগরীয় উত্তেজনা ও যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত

চুক্তিটি এমন সময় স্বাক্ষরিত হলো, যখন মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ, গাজায় চলমান আগ্রাসন এবং দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ নতুন করে উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে।

চলতি বছরের মে মাসে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সীমিত সময়ের তীব্র সংঘর্ষ হয়, যা দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশকে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল।


সৌদির মার্কিন নির্ভরতা কমানোর ইঙ্গিত?

বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তি সৌদি আরবের জন্য মার্কিন নিরাপত্তা নির্ভরতা কমানোরও একটি কৌশল হতে পারে। যদিও এখনও রিয়াদসহ উপসাগরীয় অঞ্চলে প্রায় ৫০ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে প্রিন্স সুলতান বিমানঘাঁটি, যা আংশিকভাবে মার্কিন নিয়ন্ত্রণে।

Manual5 Ad Code

কিন্তু সাম্প্রতিক কাতারে ইসরায়েলের হামলার পর জিসিসি দেশগুলো যৌথ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করার ঘোষণা দেয়, এবং সেখানে পাকিস্তান-সৌদি সহযোগিতা একটি বিকল্প পথ তৈরি করছে।

Manual2 Ad Code


ভারতের সতর্ক প্রতিক্রিয়া

এই চুক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন ভারত ইতোমধ্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, “আমরা চুক্তির বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি এবং এর প্রভাব মূল্যায়ন করা হবে।”

Manual6 Ad Code

বিশ্লেষকদের মতে, চুক্তিটি ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলতে পারে, বিশেষত যখন দুই দেশের মধ্যে নতুন করে সামরিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।

Manual2 Ad Code


পারমাণবিক প্রশ্ন এবং পাকিস্তানকে ঘিরে বিতর্ক

চুক্তিকে কেন্দ্র করে নতুন করে আলোচনায় এসেছে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি। যুক্তরাষ্ট্র অতীতে পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন নিয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

যদিও এই চুক্তিতে পারমাণবিক নিরাপত্তা বা “নিউক্লিয়ার আমব্রেলা” সম্পর্কে সরাসরি কিছু উল্লেখ নেই, তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানের পারমাণবিক শক্তির ছায়াতলেই সৌদি আরব কিছুটা নিরাপত্তা খুঁজছে।


সম্ভাবনা বনাম বাস্তবতা

অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির গবেষক মুহাম্মদ ফয়সাল বলেন, চুক্তিটি বর্তমানে একটি রাজনৈতিক ঘোষণা হলেও ভবিষ্যতে এটি যৌথ সামরিক মহড়া, অস্ত্র উৎপাদন, প্রশিক্ষণ এবং সেনা মোতায়েনের পথ তৈরি করতে পারে

তবে ওয়াশিংটনভিত্তিক বিশ্লেষক সাহার খান সতর্ক করে বলেন, “পাকিস্তান ও সৌদি আরব—উভয়ের জন্যই এই চুক্তির বাস্তবতা ও কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষা করা চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে।”


উপসংহার: নতুন জোট রাজনীতির সম্ভাব্য সূচনা?

পাকিস্তান-সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তি একদিকে কৌশলগত অংশীদারিত্বের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে, অন্যদিকে আঞ্চলিক শক্তিগুলোর জন্য উদ্বেগের বার্তাও দিচ্ছে। এটি ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় একটি নতুন জোট রাজনীতির ভিত্তি হয়ে উঠতে পারে—যেখানে পশ্চিমা নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং মুসলিম শক্তির সম্মিলিত প্রয়াস বড় হয়ে উঠতে পারে।