হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যাসহ ৪ মামলার তদন্ত সম্পন্ন

প্রকাশিত: ১০:২৩ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৩, ২০২৫

হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যাসহ ৪ মামলার তদন্ত সম্পন্ন

জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলাগুলোর মধ্যে গণ-অভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাসহ বিচারাধীন চারটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্ত শেষ বা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। স্বল্পতম সময়ের মধ্যে এ মামলাগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক গৃহীত হওয়ার সাথে সাথেই আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে বলে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন থেকে জানানো হয়েছে।

তদন্ত শেষ বা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে চারটি মামলা হলো- গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের হওয়া শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা, সাভারের আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনা, রাজধানীর চানখাঁরপুলে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা এবং রামপুরায় কার্নিশে ঝুলে থাকা এক ব্যক্তির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনা।

এ দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থায় এখন পর্যন্ত ৩৩৯টি অভিযাগ দায়ের করা হয়েছে। এই অভিযোগের ওপর ট্রাইব্যুনালে ২২টি মামলা করা হয়েছে বলে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন থেকে জানানো হয়েছে। এই মামলাগুলোয় মোট ১৪১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে ৫৪ জন আসামি গ্রেফতার হয়েছেন। বাকি ৮৭ জন পলাতক রয়েছেন বলে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন থেকে জানানো হয়েছে।

পলাতক আসামিদের গ্রেফতার : পলাতক আসামিদের গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল থেকে ওয়ারেন্ট বের হওয়ার তথ্য আগেই আসামির কাছে চলে যা পালিয়ে যাওয়ার মতো কিছু ঘটনা ঘটেছে। আর বিদেশে যারা পালিয়ে গেছে তাদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ। এখানে কূটনৈতিক দুইটি ধাপেই কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় বলে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া বিদেশে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিস জারি করার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করা হয়েছে, যা বর্তমানে ইন্টারপোলের নিজস্ব পদ্ধতির মধ্যে আছে।

দ্বিতীয় ধাপে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করার জন্য আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলে কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এ দিকে ট্রাইব্যুনালে করা মামলায় এখন পর্যন্ত সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে প্রায় ১০০০ জনের। এ ছাড়া জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলনে সময় ছাত্র জনতার ওপর সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের ঘটনার ভিডিও ও ডিজিটাল সাক্ষ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ১০০০-এর বেশি ভিডিও ক্লিপস সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলোর পর্যালোচনা, ভেরিফিকেশন এবং জিওলোকেশন যাচাইয়ের কাজ চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।

ঢাকার বাইরে রংপুর, চট্টগ্রাম, খুলনা, যশোর, নরসিংদী, হবিগঞ্জ, সিলেট, রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, লক্ষ্মীপুর, নড়াইল, সাতক্ষীরাসহ ১৫টি জেলায় জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সময় সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত চলমান রয়েছে।

অপর দিকে গুমবিষয়ক তদন্ত কার্যক্রমে ঢাকা শহরের তিনটি এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও বগুড়া জেলায় তিনটি গুমের কেন্দ্র (আয়নাঘর, হাসপাতাল, এলআইসি ইত্যাদি বিভিন্ন কোডনেমে পরিচিত) পরিদর্শন ও সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।

তদন্তকাজে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়-মাদরাসা পর্যায়ে এ পর্যন্ত গণশুনানি গ্রহণ করা হয়েছে চারটি। নর্থ সাউথ, নর্দান, বিইউবিটি বিশ্ববিদ্যালয় ও যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় গণশুনানি হয়েছে। এসব গণশুনানিতে মোট ৮০০-এর বেশি শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ করেছেন।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন সূত্র জানিয়েছে, জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় প্রায় ২ হাজারের মতো মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ যারা প্রতিবাদকারী ছিল তাদের হত্যা করা হয়েছে। প্রায় ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। এই বিপুল সংখ্যক মানুষ হতাহতের ঘটনার পেছনে যারা নির্দেশদাতা ছিলেন, যারা কমান্ড করেনে এবং যারা এটাকে ফ্যাসিলিটেড করেছেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত ২২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলাতে প্রধান আসামি হচ্ছে শেখ হাসিনা। মূলত তার নির্দেশে এবং তাকে ক্ষমতায় রাখার জন্য বাংলাদেশের পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে পুলিশ গোয়েন্দা বাহিনী, বিজিবি, ডিজিএফআই, র‌্যাব, আনসার বাহিনী এদের ব্যবহার করে এই আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সময় পুলিশের গুলিতে এবং আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলায় প্রায় দুই হাজার মানুষ হত্যা করা হয়েছে এবং প্রায় ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। এত বড় ঘটনায় ২২টি মামলা মাত্র ৫৪ জন গ্রেফতার হয়েছে। হাজার হাজার পুলিশ ও আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের যারা গণহত্যায় অংশ নিয়েছে তারা কি বিচারের আওতায় আসবে না? এ প্রশ্নের জবাবে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা যেটা করতে চাই মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় মাস্টারমাইন্ড, প্ল্যানারস, সিনিয়র কমান্ডারের দায়দায়িত্বে যারা ছিলেন। আপনি যদি বলেন, এত বড় অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কতজন গ্রেফতার হয়েছে। শেখ হাসিনা এই অপরাধ এই মাত্রায় করার সম্ভাবনা কত ভাগ ছিল। সুতরাং একজন ব্যক্তির সাজা যদি নিশ্চিত হয়। তাহলে কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের মেজোরিটি অংশের বিচার করা যায়। সে কারণে আমরা গ্রাউন্ড লেভেলের পুলিশ কন্সটেবল পর্যন্ত আমরা বিচারের মুখোমুখি করতে চাই না। টপ কমান্ডার যাদের কারণে এই ঘটনা ঘটেছে তাদের বিচার আগে করতে চাই। তারপরও যারা চিহ্নিত হয়েছে, সুপিরিয়র অফিসারের নির্দেশনার বাইরে গিয়ে গুলি করেছে- এই জাতীয় যারা সরাসরি অপরাধ করেছে। প্রধানত যার কারণে এই অপরাধ হয়েছে। যার এটারা ডিজাইন (নকশা) করেছেন, প্ল্যান (পরিকল্পনা) করেছেন। যাবতীয় নির্দেশনা দিয়েছেন তাদের বিচার আগে হবে। আমরা চাই যাদের কারণে এটা হয়েছে এবং যারা মাস্টারমাইন্ড তাদের বিচার আগে করতে। আমরা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ নিউজ