
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে এক বিশাল বলরুম নির্মাণ শুরু করেছেন, যার ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৫ কোটি ডলার। তবে এই বিপুল অর্থের একটি বড় অংশ আসছে অজ্ঞাত দাতা ও কোম্পানির কাছ থেকে, যাদের পরিচয় এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
গত সোমবার (২০ অক্টোবর) হোয়াইট হাউসের ইস্ট উইংয়ে প্রায় ৯০ হাজার বর্গফুট আয়তনের এই বিলাসবহুল বলরুমের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি নিজেও এর একটি বড় অংশের অর্থ দেবেন, তবে বেশ কিছু ‘গোপন’ দাতা অনুদান দিতে আগ্রহী হয়েছেন।
এই অনুদান প্রক্রিয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে নৈতিকতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাবেক হোয়াইট হাউস নীতিনৈতিকতা আইনজীবী রিচার্ড পেইন্টার বলেন, “এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত। মূলত হোয়াইট হাউসে প্রবেশাধিকার বিক্রি করে অর্থ তোলা হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠান সরকারের কাছ থেকে ভবিষ্যতে সুবিধা পাওয়ার আশায় অনুদান দিচ্ছে।”
১৫ অক্টোবর হোয়াইট হাউসে সম্ভাব্য দাতাদের জন্য এক নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা—ব্ল্যাকস্টোন, ওপেনএআই, মাইক্রোসফট, আমাজন, গুগল, প্যালান্টির, লকহিড মার্টিন ও কয়েনবেসের প্রতিনিধিরা। ছিলেন নিউইয়র্ক জেটস ফুটবল দলের মালিক উডি জনসন এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মালিক গ্লেজার পরিবারও।
সিবিএস নিউজের হাতে পাওয়া এক নথি অনুসারে, অনুদানদাতাদের বিশেষ স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এমনকি তাঁদের নাম বলরুমের ভেতরের দেয়ালে খোদাই করে রাখার বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে এসেছে একমাত্র একটি নাম—ইউটিউব। আদালতের নথি অনুযায়ী, ট্রাম্পের সঙ্গে মামলার নিষ্পত্তির অংশ হিসেবে ইউটিউব দিয়েছে ২ কোটি ২০ লাখ ডলার অনুদান।
হোয়াইট হাউসের দাবি, এতে কোনো অনিয়ম নেই এবং ভবিষ্যতের প্রশাসনও এই বলরুম ব্যবহার করতে পারবে। ফলে করদাতাদের অর্থের কোনো অপচয় হবে না। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এটি একধরনের ‘পে-টু-প্লে’ ব্যবস্থা—অর্থাৎ অনুদানের বিনিময়ে রাজনৈতিক প্রভাব বা সুবিধা নেওয়ার পথ খুলে দেওয়া।
রিচার্ড পেইন্টার বলেন, “আগে জায়গা কম থাকায় সবাইকে আমন্ত্রণ দেওয়া যেত না, সেটা ভালো ছিল। কিন্তু এখন এই বিশাল বলরুম রাজনৈতিক তহবিল সংগ্রহের বড় ক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে।”
নতুন বলরুমে একসঙ্গে প্রায় এক হাজার অতিথির আসন থাকবে—যা আগের পরিকল্পনার (৬৫০ জন) তুলনায় বড়। এটি ব্যবহৃত হবে রাষ্ট্রীয় নৈশভোজ ও আন্তর্জাতিক আয়োজনের জন্য। ট্রাম্প বলেন, “এটা শুধু বিলাসিতা নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ।”
অন্যদিকে সাবেক হোয়াইট হাউস শেফ মার্টিন মঞ্জিয়েলো মনে করেন, “এই বিনিয়োগ দীর্ঘমেয়াদে খরচ বাঁচাবে। আগে বড় অনুষ্ঠানের জন্য বাইরে তাঁবু বসাতে হতো, যার খরচই এক মিলিয়ন ডলারের বেশি পড়ত।”
তবে এখনো প্রশ্ন রয়ে গেছে—এই কোটি কোটি ডলারের অনুদান আসছে কার কাছ থেকে, এবং এর বিনিময়ে তাঁরা কী পেতে চায়?