ক্যানসার চিকিৎসায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হলো ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স—যার ফলে চিকিৎসা নেওয়ার পরও টিউমার আবার ফিরে আসে বা ছড়িয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখিয়েছেন, ক্যানসার কোষ কখনো কখনো ‘মৃত্যুর অভিনয়’ করে ওষুধের প্রভাব থেকে বাঁচতে পারে। গবেষণাটি গত মাসে নেচার সেল বায়োলজি সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকদের মতে, চিকিৎসার সময় কিছু ক্যানসার কোষ সত্যিকারে মারা যায় না; বরং ‘পারসিস্টার’ বা অটল কোষে পরিণত হয়ে সাময়িকভাবে বৃদ্ধি থামিয়ে গোপনে বেঁচে থাকে। নির্দিষ্ট এনজাইমের সাহায্যে তারা ওষুধের আঘাত সহ্য করে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ‘অটল’ কোষগুলো চিকিৎসার সময় খুব নিম্নমাত্রায় সক্রিয় করে ডিএনএ ফ্র্যাগমেন্টেশন ফ্যাক্টর বি (ডিএফএফবি) এনজাইম। সাধারণত এই এনজাইম মৃত কোষের ডিএনএ ভেঙে ফেলে। তবে এই ক্ষেত্রে এনজাইমটি কোষকে না মেরে বরং ঘুমন্ত অবস্থা থেকে জাগিয়ে তোলে। ফলে কোষগুলো আবার বাড়তে শুরু করে এবং চিকিৎসা ব্যর্থ হতে পারে।
গবেষণার প্রধান লেখক ম্যাথিউ জে হ্যাঙ্গাউয়ার বলেন, ‘এটি আমাদের প্রচলিত ধারণাকে বদলে দিল। যে এনজাইমটি কোষকে মেরে ফেলার কথা, সেটাই উল্টো ক্যানসার কোষকে আবার বাড়তে সাহায্য করছে।’
ভবিষ্যৎ চিকিৎসার সম্ভাবনা
পরীক্ষায় দেখা গেছে, ক্যানসার কোষে থাকা ডিএফএফবি এনজাইম নিষ্ক্রিয় করা গেলে কোষগুলো ওষুধের চাপ থেকে মুক্ত হতে পারে না। ফলে তারা চিরতরে নিষ্ক্রিয় বা ঘুমন্ত অবস্থায় থেকে যায় এবং ক্যানসার পুনরায় ফিরে আসার ঝুঁকি কমে।
মেলানোমা, ফুসফুস ও স্তন ক্যানসারের পরীক্ষামূলক মডেলে এনজাইমটি বন্ধ করে দেওয়া হলে কোষগুলো আর বৃদ্ধি পায়নি। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—ডিএফএফবি মানবদেহের স্বাভাবিক কোষে খুব অপরিহার্য নয়, ফলে এই এনজাইমকে লক্ষ্য করে ওষুধ তৈরি করা গেলে বড় ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকিও কম থাকতে পারে।
গবেষকেরা মনে করছেন, এই আবিষ্কার ভবিষ্যতে এমন ওষুধ তৈরির পথ খুলে দিতে পারে, যা ক্যানসার ফিরে আসার আগেই থামিয়ে দিতে সক্ষম হবে।