১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

কবির দূরদৃষ্টিতে কংক্রিটের দখল থেকে রক্ষা পেল তুরস্কের আকিয়াকা গ্রাম

admin
প্রকাশিত ২৬ নভেম্বর, বুধবার, ২০২৫ ২৩:০৮:২১
কবির দূরদৃষ্টিতে কংক্রিটের দখল থেকে রক্ষা পেল তুরস্কের আকিয়াকা গ্রাম

Manual5 Ad Code

তুরস্কের দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলীয় মুগলা প্রদেশের পাইন বনে ঘেরা পাহাড় ও আজমাক নদীর স্বচ্ছ জলের তীরে অবস্থিত শান্ত ছোট্ট গ্রাম আকিয়াকা আজ এক মনোরম পর্যটনকেন্দ্র। সাদা রঙের কাঠের ফ্রেমের ঘরগুলোর অনন্য স্থাপত্য যেন প্রকৃতির সঙ্গেই মিশে আছে। বসন্তে কমলা ফুলের সুবাসে ভেসে ওঠা এই গ্রাম কয়েক দশক আগেও ছিল অচেনা, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের এক জনপদ।

Manual4 Ad Code

সিএনএন জানায়, ১৯৭০-এর দশকের শুরুতে আকিয়াকা ছিল জলাভূমির ধারে মশায় ভরা একটি ছোট জেলে-পল্লি। তুরস্কের বিভিন্ন অঞ্চলে পর্যটন বাড়তে থাকায় আনাতোলিয়ার গ্রামগুলোর মতো আকিয়াকাতেও দ্রুত কংক্রিটের দালান উঠতে শুরু করে। ঠিক সেই সময়, ১৯৭১ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক স্ত্রীকে নিয়ে অবসরযাপন করতে এখানে চলে আসেন কবি ও বুদ্ধিজীবী নাইল চাকিরহান। কিন্তু তিনি নিভৃত জীবন কাটানোর বদলে গ্রামের ঐতিহ্য ও পরিবেশ রক্ষায় নিবেদিত হন।

Manual4 Ad Code

ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশেলে নতুন স্থাপত্যধারা

স্থাপত্যে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও চাকিরহান স্থানীয় অটোমান ধাঁচে কাঠের ফ্রেম, সাদা চুন–পোতা দেয়াল, গভীর ছাউনি এবং প্রাকৃতিক বায়ুপ্রবাহের সুবিধা রেখে পাহাড়ের ধারে নিজের বাড়ি নির্মাণ করেন। ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলের জন্য কাঠের এই নকশা ছিল নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব।

চাকিরহানের এই বাড়ির নকশাই বদলে দেয় পুরো গ্রাম। এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তাঁর অনুপ্রেরণায় একই ধারার বাড়ি নির্মাণে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এর ফলে পুরোনো কাঠমিস্ত্রিদের পেশা ফিরে আসে, তৈরি হয় দক্ষ নতুন কারিগরদের প্রজন্ম।

চাকিরহানের এই অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৮৩ সালে তাঁকে আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার দেওয়া হয়। ১৯৯০-এর দশকে আকিয়াকার নগর–পরিকল্পনায় তাঁর স্থাপত্যনীতিগুলো আইন হিসেবে গ্রহণ করা হয়, ফলে গ্রামটি কংক্রিটের আগ্রাসন থেকে স্থায়ীভাবে রক্ষা পায়।

Manual7 Ad Code

বুদ্ধিজীবীদের আড্ডাস্থল থেকে ‘স্লো সিটি’ মর্যাদা

চাকিরহানের সহকারী এনিজ তুঞ্চা ওজসয়ের মতে, একসময় আকিয়াকা তুরস্কের বুদ্ধিজীবীদের মিলনস্থলে পরিণত হয়েছিল। প্রকৃতি ও স্থাপত্যের সুশৃঙ্খল সহাবস্থানের স্বীকৃতি হিসেবে আজ আকিয়াকা ‘সিটাস্লো’ বা শান্ত শহরের মর্যাদা পেয়েছে।

স্থানীয় ইউচেলেন হোটেলের প্রতিষ্ঠাতা হামদি ইউচেল গুরসয় জানান, চাকিরহানের অনুপ্রেরণায় তিনি বাণিজ্যের চেয়ে প্রকৃতি ও সংস্কৃতিকে অগ্রাধিকার দিতে শিখেছেন এবং আজ তিনি এই অঞ্চলের পরিবেশ-সচেতন ব্যক্তিদের একজন।

Manual4 Ad Code

এক পর্যটক এজগি ইয়াসেমিন বলেন,
“প্রাচীন নগর, পাহাড়, ইউক্যালিপটাস, কমলার বাগান, আজমাক নদীর স্বচ্ছ পানি—সব মিলিয়ে আকিয়াকা সত্যিই অপূর্ব।”

পর্যটনের চাপ বাড়লেও এখনো অটুট সৌন্দর্য

করোনা পরবর্তী সময়ে শহর ছাড়ার প্রবণতা বাড়ায় আকিয়াকায় মানুষের ভিড়ও বেড়েছে। স্থাপত্য আইন কংক্রিট ঠেকালেও গ্রীষ্মের মৌসুমে ভিড় ও শব্দগ্রামটির শান্ত পরিবেশকে বিঘ্নিত করছে।

তবে ব্যস্ত মৌসুমের বাইরে আকিয়াকার মন ছোঁয়া সৌন্দর্য এখনো উপভোগ্য—স্বচ্ছ আকাশ, পাখির ডাক আর প্রকৃতির শান্ত ছন্দে আজও মিলবে কবির সেই অনুপ্রেরণা।