১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

কাঠমান্ডুর আশপাশে ঘোরার সেরা জায়গাগুলো

admin
প্রকাশিত ২৪ নভেম্বর, সোমবার, ২০২৫ ১৫:০৭:৫১
কাঠমান্ডুর আশপাশে ঘোরার সেরা জায়গাগুলো

Manual7 Ad Code

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু নিয়ে ভ্রমণকারীদের মতামত ভিন্ন ভিন্ন। কেউ শহরের সমৃদ্ধ ইতিহাস, শতবর্ষী স্থাপত্য আর সংস্কৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন, আবার কেউ ধুলাবালু, যানজট আর ভিড় এড়িয়ে দ্রুতই ছুটে যান হিমালয়ের দিকে। তবে কাঠমান্ডু ঘোরার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো—শহরের আশপাশের ছোট গ্রাম ও শহরগুলোতে দিনের ভ্রমণ বা স্বল্পমেয়াদি ট্যুর করা। এতে শহরের ঐতিহাসিক রূপ এবং পার্শ্ববর্তী প্রকৃতির সৌন্দর্য—দুটোই একসঙ্গে উপভোগ করা যায়।


১. নাগরকোট — সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের স্বর্গ

হিমালয়ের ওপরে সূর্যের উদয় ও অস্ত যাওয়ার দৃশ্য দেখতে চাইলে নাগরকোট সবচেয়ে জনপ্রিয় জায়গাগুলোর একটি।
এখানে—

  • সহজেই থাকার ব্যবস্থা পাওয়া যায়

  • হোটেলের ব্যালকনি বা ভিউ টাওয়ার থেকে সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত দেখা যায়

  • হাঁটা দূরত্বেই রয়েছে ছোট জলপ্রপাত

যেভাবে যাবেন:
কাঠমান্ডু ভ্যালির পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। বাসে গেলে ভক্তপুরে নেমে আরেকটি বাস নিতে হয়, তবে সময়মতো সূর্যোদয় দেখার সুবিধার জন্য অধিকাংশ পর্যটকই প্রাইভেট গাড়ি ব্যবহার করেন।

Manual6 Ad Code


২. নমোবুদ্ধ — পবিত্র বৌদ্ধ তীর্থস্থান

বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের কাছে নমোবুদ্ধ অত্যন্ত পবিত্র একটি স্থান। বিশ্বাস করা হয়, এখানে বুদ্ধ এক ক্ষুধার্ত বাঘিনী ও তার শাবকদের বাঁচাতে নিজের দেহ উৎসর্গ করেছিলেন। সেই স্মৃতিতে রয়েছে সাদা রঙের একটি ছোট স্তূপ।

দেখার মতো আরও আছে—

  • বিশাল থ্রাংগু তাশি ইয়াংৎসে মঠ

  • পাহাড়ের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য

  • নমোবুদ্ধ রিসোর্টে অরগানিক ভেজিটেরিয়ান লাঞ্চ উপভোগ

যেভাবে যাবেন:
কাঠমান্ডু থেকে দক্ষিণ–পূর্বে প্রায় দুই ঘণ্টার দূরত্ব। লোকাল বাস পাওয়া যায়, তবে ট্যাক্সি বা ভাড়া গাড়ি সবচেয়ে আরামদায়ক।


৩. ফারফিং — হিন্দু ও বৌদ্ধ মিলনের স্থান

কাঠমান্ডুর দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত ফারফিং শান্ত প্রকৃতি, ধর্মীয় ঐতিহ্য এবং আদি সংস্কৃতির অনন্য মিশ্রণ।

Manual6 Ad Code

এখানে রয়েছে—

  • বৌদ্ধদের ইয়াংলেশো গুহা, যেখানে গুরু রিনপোচে ধ্যান করেছিলেন

  • নেওয়ার সম্প্রদায়ের বজ্রযোগিনী মন্দির

  • বিখ্যাত দক্ষিণকালী মন্দির, যেখানে দশাই উৎসবে পশুবলি দেওয়া হয়

যেভাবে যাবেন:
পাটনের লাগাঙ্কেল বাস পার্ক অথবা কাঠমান্ডুর রতন পার্ক থেকে বাস পাওয়া যায়। সময় লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টা। ট্যাক্সিতে সময় কম লাগে।


৪. পানাউটি — নেওয়ার ঐতিহ্যের জীবন্ত শহর

নেওয়ার সম্প্রদায়ের প্রাচীন ব্যবসায়িক শহর পানাউটি নেপালের সবচেয়ে পুরোনো শহরগুলোর একটি। শহরটি একটি বিশাল পাথরের ওপর নির্মিত—এমন বিশ্বাসও প্রচলিত।

দেখার মতো স্থান—

  • পুরোনো বাজারের স্থাপত্য

  • নদীর ধারের প্রাচীন মন্দির

  • ইন্দ্রেশ্বর মহাদেব প্যাগোডা মন্দির, যাকে নেপালের সবচেয়ে পুরোনো টিকে থাকা প্যাগোডা মনে করা হয়

যেভাবে যাবেন:
কাঠমান্ডু থেকে প্রায় দুই ঘণ্টার পথ। চাইলে সাঙ্গা–পানাউটি কমিউনিটি হাইকিং ট্রেইল ধরে হাঁটলেও যাওয়া যায়।


৫. চাংগুনারায়ণ — শান্ত পরিবেশে নেপালের প্রাচীনতম মন্দির

ভক্তপুর সফরের সঙ্গে খুব সহজেই যোগ করা যায় চাংগুনারায়ণ। পাহাড়ি এই ছোট শহর থেকে ভক্তপুর ও দূরের পাহাড়গুলো দেখা যায়।

  • পঞ্চম শতকের প্রাচীন মন্দির

  • ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট

  • লিভিং ট্রেডিশনস মিউজিয়াম (নেপালের নানা জাতিগোষ্ঠীর ইতিহাস)

যেভাবে যাবেন:
ভক্তপুর থেকে ট্যাক্সিতে ২০ মিনিট। কাঠমান্ডু থেকেও গাড়ি পাওয়া যায়। এখান থেকে নাগরকোট পর্যন্ত হাঁটা বা হাইকিং করেও যাওয়া যায়।


৬. শিবপুরী ন্যাশনাল পার্ক — শহরের কাছেই প্রকৃতির বিশাল অরণ্য

প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য কাঠমান্ডুর একদম কাছে—শিবপুরী ন্যাশনাল পার্ক।

এখানে পাবেন—

  • বনের ভেতর হাঁটার ট্রেইল

  • নেগি গোম্পা

  • বাগদ্বার পর্যন্ত হাইকিং রুট

  • চাইলে শিবপুরীর চূড়া (৮,৯৬৩ ফুট) পর্যন্ত ট্রেকিং

    Manual3 Ad Code

যেভাবে যাবেন:
কাঠমান্ডুর বিভিন্ন জায়গা থেকে বুধানীলকণ্ঠা যাওয়ার বাস পাওয়া যায়। সেখান থেকেই পার্কের প্রবেশদ্বার কাছে।


উপসংহার

কাঠমান্ডু শুধু মাত্র একটি শহর নয়—চারপাশে রয়েছে ইতিহাস, সংস্কৃতি, প্রকৃতি আর হিমালয়ের অপার সৌন্দর্যের অসংখ্য জানালা। এই আশপাশের স্থানগুলো আপনাকে নেপালের প্রকৃত রূপ দেখাবে।

Manual6 Ad Code