পুল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশ ও পূর্বাঞ্চলীয় শহর লুবলিনের মধ্যবর্তী একটি গুরুত্বপূর্ণ রেললাইন ভয়াবহ নাশকতার মাধ্যমে ধ্বংস করা হয়েছে। রোববার (১৬ অক্টোবর) বিস্ফোরণের এ ঘটনা সোমবার নিশ্চিত করেন পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক।
সরকার প্রধান জানান, ওই রেললাইনটি ইউক্রেনে সাহায্য, সামগ্রী ও সামরিক সহায়তা পাঠানোর ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পথ। তাই তিনি এ ঘটনাকে ‘অভূতপূর্ব নাশকতা’ হিসেবে আখ্যা দেন।
এক্স (টুইটার)–এ পোস্ট করে টাস্ক উল্লেখ করেন যে, বিস্ফোরক ডিভাইস ব্যবহার করে রেললাইন উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে—যা দেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও নাগরিকদের নিরাপত্তার ওপর সরাসরি আঘাত। একই লাইনের আরও কয়েকটি জায়গায় ধ্বংসের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
তবে কারা এ নাশকতার পেছনে রয়েছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলেননি তিনি। অপরাধীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি
বিস্ফোরণে কেউ হতাহত হয়নি। তবে এ ঘটনা ইউরোপজুড়ে সাম্প্রতিক সময়ে বেড়ে ওঠা নাশকতা, ড্রোন হামলা ও সীমান্ত লঙ্ঘনের ধারাবাহিকতার সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘনের জন্য রাশিয়াকে দায়ী করলেও ক্রেমলিন এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ইউরোপে নিরাপত্তা হুমকি বৃদ্ধি
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ইউরোপজুড়ে নিরাপত্তা হুমকি বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউরোপীয় কমিশন রাশিয়ান নাগরিকদের ভিসা নীতি কঠোর করেছে। ইইউ–এর পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কায়া কালাস বলেছেন, “আমরা এখন আমাদের মাটিতে ড্রোন হামলা ও নাশকতা দেখতে পাচ্ছি। নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়া এখন আমাদের কর্তব্য।”
গবেষণায় রাশিয়ার নাশকতা অভিযানের দাবি
আন্তর্জাতিক কৌশল গবেষণা সংস্থা আইআইআইএসএস–এর একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, ইউরোপকে অস্থিতিশীল করতে রাশিয়া সমন্বিত নাশকতা, গুপ্তচরবৃত্তি ও আন্ডারকভার অভিযান চালাচ্ছে—যার অংশ হিসেবে সমুদ্রতলের কেবল কাটা, টেলিকম টাওয়ারে হামলা, অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা উল্লেখ করা হয়।
পোল্যান্ডে নাশকতার ইতিহাস বাড়ছে
পোল্যান্ডের উপ–স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাজেই দুজচিক জানান, দেশটি সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু নাশকতার মুখোমুখি হয়েছে। গত বছর ওয়ারশে শপিং সেন্টারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রুশ গোয়েন্দাদের নির্দেশ থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন—সব ঘটনার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করা যেমন ঠিক নয়, তেমনি কোনো সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দেওয়া উচিত নয়।
চলছে যৌথ তদন্ত
তদন্তে পোল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা, পুলিশ, প্রসিকিউটর অফিস ও রেল কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন রাজনৈতিক নেতা তোমাজ শিয়েমনিয়াক।